সুর্যডিম আমের চাষ এখন পঞ্চগড় সীমান্তে
মোঃ লিহাজ উদ্দিন (পঞ্চগড়):
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা তেঁতুলিয়ায় চাষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম সূর্যডিম। দেশের মধ্যে সূর্যডিম আমের সবচেয়ে বড় বাগানও এখানে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজীপাড়া গ্রামের কাজী মাহবুবুর রহমান ২০১৭ সালে এই আমের বাগান গড়ে তোলেন। বাগানে রয়েছে ২০০ সূর্যডিম আমের গাছ। তেঁতুলিয়া উপজেলা শহর থেকে ১ কিঃমিঃ দূরে কাজীপাড়া গ্রাম। ভারতীয় সীমান্তের কোল ঘেঁষে একটি সমতল ভূমিতে তিনি এই আমের বাগান করেছেন মাহবুবুর রহমান। বর্তমানে গাছে গাছে ঝুলে আছে সূর্যডিম আম। সবুজ, বেগুনি আর গাঢ় লাল রংয়ের মিশ্রণে দেখতে অসাধারণ সুন্দর এই আম। প্রত্যেকটি গাছেই ৫০ থেকে ৬০টি আম ধরেছে। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের এই আম বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়। কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, এক আত্বীয়ের কাছে এই আমের বর্ণনা শোনে ২০১৭ সালে ঢাকা থেকে এই আমের চারা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেন দুই মেয়ে। তিনি আরো জানান, জমি আমার হলেও মূলত তার দুই মেয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী মৌসুমী এবং সাংবাদিক কাজী মহুয়া এই আমের বাগান করেছেন। তারাই ঢাকা থেকে সূর্যডিম আমের চারা সংগ্রহ করে। আমের ফলন শুরু হয়েছে ২০১৯ সাল থেকে। এই আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রযুক্তি এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে তেঁতুলিায়ার সূর্যডিম আম বিদেশে রপ্তানি হবে। তেঁতুলিয়ার জমিতে এই আমের প্রচুর ফলন হয়। তিনি শুধু সূর্যডিমই নয় আরও কয়েক প্রকার বিদেশি জাতের আমের চাষ করছেন। ৫ একর জমিতে তিনি পিউজাই, বারি ফোর, বানানা এবং রেড পালমা আমের চাষ করছেন। প্রত্যেক প্রজাতির আমের গাছে ভালো ফলন এসেছে। এই আমের বাগান এখন দেখতে আসছেন অনেকে। অনেকেই এসব প্রজাতির আমের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার উদ্যোগ নিলে এই আমের চারা উৎপাদন করে চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।
সূর্যডিম মূলত জাপানের প্রজাতি। জাপানের মিয়াজাকি এলাকায় এই আম প্রথম চাষ হয়। তাই জাপানে এই আম মিয়াজাকি নামে পরিচিত। রেড মেঙ্গো বা এগস অফ সান নামেও এই আম পরিচিত। বাংলাদেশে এই আম সূর্যডিম নামে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে এই আমের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি এবং তেঁতুলিয়ায় এই আমের চাষ শুরু হয়েছে। বিশ্ববাজারে এই আমের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা কেজি। তবে এখনো এই আমের কথা দেশের অনেকেই জানেন না।
সৌন্দর্য্য, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণে সেরা হওয়ায় বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। সেই তুলনায় বাংলাদেশে এই আমের উৎপাদন কম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তেঁতুলিয়ার সমতল ভূমি সূর্যডিম আম চাষের জন্য উপযোগী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কাজী মাহবুবুর রহমানের সূর্যডিম আমের বাগান দেখেছি। প্রচুর ফলন হয়েছে। আমের প্রকৃতি ও স্বাদও ভালো। আমরা মনে করছি এই এলাকায় সূর্যডিম আম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু সূর্যডিম নয় বিদেশি উন্নত জাতের নানা প্রজাতির আম চাষও সম্ভব এই উপজেলার সমতল ভূমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এসব আম চাষে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।