শিরোনাম

South east bank ad

প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আঞ্চলিক অসমতা ও মহামারীকালীন স্বাস্থ্যবিধিসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কম গুরুত্ব পেয়েছে

 প্রকাশ: ২০ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইকে মূল অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হলেও সংক্রামণ ঠেকাতে বাজেটে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং স্বাস্থ্যবিধি উপখাত যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়ার বিষয়টি কোভিড-১৯-মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে বাধাগ্রস্থ করবে। ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ওয়াশ অ্যালায়েন্স ও এমএইচএম নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন। এসময় এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে স্বাস্থ্যবিধি উপখাতে যথাযথ গুরুত্বারোপসহ গ্রাম ও শহরের মধ্যে ওয়াশ খাতে বিনিয়োগ ও বরাদ্দের বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত বরাদ্দ দেয়ার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে মতামত দেন বিশেষজ্ঞগণ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি ৬ অর্জনের গতিকে আরো ত্বরান্বিত করার জন্য অসমতা দূর করে জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির আহব্বান জানান বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ও ব্যয়ের বিশ্লেষনে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোর বাজেটে ওয়াশ খাতে আর্থিক বরাদ্দের ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কিছুটা কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বরাদ্দকৃত ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা কমিয়ে ২০২১-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। সারাবছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরেও স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) উপখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তাবিত ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের একটা বড় অংশই শহরাঞ্চলের দিকে ঝুঁকছে যা মূলত প্রধান শহরগুলোতে ওয়াসার বরাদ্দর কারণে হয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চল ও দেশের দুর্গম এলাকাগুলো বরাদ্দের ক্ষেত্রে যথেষ্টই উপেক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে, কোভিড -১৯ সংক্রমণের হার জেলাগুলোতে উল্লেখযোগ্য উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে ভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি এবং ওয়াশ সোবর সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ প্রয়োজন।

ভৌগলিক অবস্থান বিচারে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসমতা। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে, ৪টি ওয়াসা এবং ১১ টি সিটি কর্পোরেশনে ওয়াশ খাতে বেশিরভাগ বরাদ্দের ধারা অব্যাহত রয়েছে। গ্রামাঞ্চল, চর, দুর্গম এলাকাগুলোতে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে শহর ও মহানগরগুলোতে তুলনামূলকভাবে বরাদ্দের হার অনেক বেশি। শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের বরাদ্দ বিশ্লেষনে দেখা যায়, গত পাঁচ বছর সময়কালে শহরে (৮০% - ৮৩%) ও গ্রামীণ অঞ্চলে (২০% -১৭%) বরাদ্দের হারের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “ওয়াশ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভৌগলিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। তার পরেও গ্রামাঞ্চল, চর, পার্বত্য অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকার তুলনায় শহর ও মহানগরগুলোতে পূর্ববর্তী বছরগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়াশ সেক্টরে বরাদ্দ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও সঠিক বরাদ্দ এখনও অবহেলিত।"

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘২০২১—২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর সরকারের ভ্যাট মওকুফ এর এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য এখনই প্রয়োজন একটি পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার। এতে করে সরকারী এ মহতী ঘোষণার ফলাফল কিশোরী এবং নারী উভয়ই পেতে পারবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সম্মিলিতভাবে নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ উল্লেখ করা হয়:

সুপারিশসমূহ

১. কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত খাতগুলোকে একত্রিত করার জন্য বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ওয়াশ খাতের স্বতন্ত্র্ উপখাতগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধিকে একটি আলাদা উপখাত হিসেবে চিহ্নিত ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে পৃথক উপ-বিভাগীয় লাইন-আইটেম হিসাবে হাইজিন কে আলাদা করতে হবে।

২. গ্রাম ও শহরের মধ্যে এবং বিভিন্ন নগরীরর মধ্যে বরাদ্দের ক্ষেত্রে যে বিপুল বৈষম্য আছে তা দূর করতে ওয়াশ খাতের বরাদ্দের অগ্রাধিকার নির্ধারণে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

৩. নিরাপদ পানি সম্পর্কিত পরিবেশ ও ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের জন্য নেওয়া উদ্যোগ গুলো প্রশংসনীয়, তবে দুর্যোগ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে, বিশেষত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এসব প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বন্যা প্রবণ ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ উপকূলীয় এলাকায় প্রকল্প বাড়াতে হবে।

৪. ভালো নীতি থাকলেও বাস্তবায়নের ঘাটতির জন্য অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফল মিলছে না। এ ক্ষেত্রে ওয়াশ খাতে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রেও জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: