সাদ'মুসা ইন্ডাষ্ট্রী'র বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে খালের পানি, হুমকিতে চাষাবাদ
এম.এম.জাহিদ হাসান হৃদয় (আনোয়ারা):
দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্পজোন হিসেবে পরিচিত আনোয়ারা উপজেলায় গড়ে ওঠেছে দেশী ও বিদেশী অসংখ্য ইন্ডাষ্ট্রী। তার মধ্যে উপজেলার সদর এলাকায় গড়ে ওঠেছে সাদ'মূসা ইন্ডাষ্ট্রীয়াল পার্ক নামে টেক্সটাইলের এই ইন্ডাষ্ট্রী।
কৃষি জমিতে ইন্ডাষ্ট্রী না করতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকলেও এই ইন্ডাষ্ট্রী গড়ে ওঠেছে তিন ফসলি কৃষি জমির উপর।
ইতিমধ্যে কৃষি জমির উপর গড়ে ওঠা এই ইন্ডাষ্ট্রীয়াল পার্কের বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পাশের ঈছামতি খালের পানি।
বিষাক্ত বর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হুমকিতে পড়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ টি গ্রামের চাষাবাদ । এছাড়াও এর প্রভাব পড়বে উপজেলার বৃহত্তর কৃষিজমিতে এমনটায় জানিয়েছে উজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্র ।
ইতি মধ্যে খালের সংলগ্ন অসংখ্য চাষাবাদের জমি হুমকির মুখে পড়েছে । এছাড়াও খালির পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। প্রতিদিন খালের মধ্যে বেশে ওঠছে নানা প্রজাতির মরা মাছ।
দূষণ রোধে উপজেলা প্রশাসনও নিচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। আর এই নিয়ে কর্তৃপক্ষও উদাসীন বলে জানান তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার বর্জ্য (ইটিবি প্লান্ট) শোধনাগার যন্র থাকলেও পরিশোধন না করে বিষাক্ত বর্জ্যে ছাড়ছে পাশের খালে। প্রায় ৬ থেকে ৭টি ফাইপের মাধ্যমে এসব বর্জ্য প্রতিদিন গড়িয়ে পড়ছে। এসব তরলবর্জ্য পরিশোধন না করে পার্শ্ববর্তী জলাভূমি, খাল-বিল ও নালার মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে খালের পানি। এসব কারণে খালের পানি বিষাক্ত হওয়ায় মরে যাচ্ছে মাছসহ জলজ প্রাণী।
বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।খালের পানি ব্যবহারকারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন চর্মরোগে। দূষণ রোধে সাদ মুসা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের ব্যবস্থা না নেয়াকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনকে হাতে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে সাদ মুসা এই অবৈধ কাজটি করে যাচ্ছে। যার ফলে শিলাইগড়া, সিংহরা ডমুরিয়া, রুদুরা, ঈছামতিসহ প্রায় আট -দশটি গ্রামের কৃষিজমি চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও সাদ মুসা এভাবে বিষাক্ত বর্জ্য জলাশয়ে ছাড়তে থাকলে বর্ষায় পানিবাহিত রোগে মারত্বক আকার ধারণ করতে পারে।
সাদ মুসার বিষাক্ত বর্জ্যে চাষাবাদ কতটা হুমকির মুখে পড়তে পারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, অবশ্যই হুমকির মধ্যে পড়বে। বিষাক্ত বজ্য ইতি মধ্যে খালের পানি নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের আমন বোরোতে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তার মধ্যে এটি মারত্বক প্রভাব ফেলবে। এটি আমাদের বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রায় মারত্বক ব্যাঘাত ঘটাবে।
সাদ'মুসার বিষাক্ত বর্জ্যে ইছামতি নদীসহ কৃষি জমি মারত্বক হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না জানতে চাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন,বিষয়টি আমাদের নজরে আসে নাই। এই পরিবেশ সংশ্লিষ্ট অভিযোগ। আমরা পরিবেশ অধিদফতরের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেব।
পরিবেশ বিরোধী এভাবে বিষাক্ত বর্জ্য ছাড়ার পরিবেশ অধিদফতর কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, এবিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে নাই। এই নিয়ে অভিযোগ আসতে হয় না হয় গণমাধ্যম প্রকাশিত রিপোর্ট আসতে হয়। তখন আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাদ মুসা ইন্ডাষ্ট্রীয়াল পার্কের এমডি মোহাম্মদ মহসিনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চাইলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।