শিরোনাম

South east bank ad

নারীনেত্রীর বিরুদ্ধে মধ্য যোগীয় কায়দায় যৌনকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ

 প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

খন্দকার রবিউল ইসলাম (রাজবাড়ী):

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দৌলতদিয়া পতিতালয়। এটি এশিয়ার মধ্যেও সবচেয়ে বড় গণিকালয় গুলোর একটি। স্থানীয় তথ্য সুত্র মতে এখানে প্রায় চার হাজার যৌনকর্মী পতিতাবৃত্তি পেশায় জড়িত। তবে এখানে দাপ্তরিক হিসেবে প্রায় দেড় হাজার যৌনকর্মীর বসবাস।

দেশের সর্ববৃহৎ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে মাঝে মধ্যেই যৌনকর্মীদের নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া যায়। যদিও সে অভিযোগ গুলো থাকে কাষ্টমারদের বিরুদ্ধে। এবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন। যৌনকর্মীদের সুরক্ষার জণ্য গড়ে উঠা সংগঠন 'অসহায় নারী ঐক্য কল্যাণ সমিতি। যে সংগঠনের কাজ যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা।

কিন্তু সেই যৌনকর্মীদের সংগঠন 'অসহায় নারী ঐক্য কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী ঝুমুর বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ বর্বরোচিত ভাবে মধ্য যোগীয় কায়দায় এক যৌনকর্মীকে নির্যাতন করার।

নির্যাতনের শিকার হওয়া যৌনকর্মীর নাম রেহেনা বেগম (৪০)। তার গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়ো দিয়ে নির্যাতন করা হয়। আহত অবস্থায় তিনি গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের সর্বক্ষেত্রে হতে হয় প্রতিনিয়ত নিগৃহিত ও অপমানিত সব জায়গাতে। নিজদের সংগঠনের নেত্রীর কাছেও এমন নির্যতনের শিকার হতে হবে কখনো ভাবেন নি রেহেনা।

দৌলতদিয়া পতিতালয়টি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় অবস্থিত। গোয়ালন্দ উপজেলার একটি ইউনিয়ন হলো দৌলতদিয়া। বাংলাদেশে অনুমোদিত কয়েকটি পতিতালয়ের মধ্যে দৌলতদিয়া পতিতালয় একটি। ১৯৮৮ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত এ পল্লী।

এ ঘটনায় যৌনকর্মীদের সংগঠন 'অসহায় নারী ঐক্য কল্যাণ সমিতির' সভানেত্রী ঝুমুর বেগম, ছলে বাড়িওয়ালী, লিলি বাড়িওয়ালী, আলেয়া বাড়িওয়ালী, দুলালী ও পারভিনসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রেহেনা বেগম।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেহেনা বেগম বুধবার সাংবাদিকদের জানান, গত রোববার রাত ১১টার দিকে তাকে তার ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় ঝুমুর বেগমের সহযোগি আলেয়া বাড়িওয়ালী।

তারা তাকে অসহায় নারী ঐক্য কল্যাণ সমিতির অফিস কক্ষে আটকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এতে তিনি রক্তাক্ত হয়ে গেলে জখমের স্থানসহ তার গোপনাঙ্গে শুকনো মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, আমার ওপর নির্মম নির্যাতন ও আর্ত-চিৎকারের পুরো দৃশ্য ঝুমুর তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখে। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর তারা আমাকে ছেড়ে দিয়ে একপ্রকার গৃহবন্দী করে রাখে। সোমবার প্রায় সারাদিন ঘরে বন্দী থেকে সন্ধ্যার পর সুযোগ বুঝে পালিয়ে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দেই। পরে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হই।

রেহেনা বেগম বলেন, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝুমুরের স্বামী ইউপি সদস্য জলিল ফকিরের পক্ষে নির্বাচন না করা, তার স্বামীর সঙ্গে আমার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করা এবং ঝুমুরকে আমি তাবিজ-কবজ করেছি বলে সন্দেহ করে তারা আমাকে এভাবে নির্যাতন করে। শুধু তাই নয়, এর আগে ঝুমুর আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এবং আমার সব ভাড়াটিয়া মেয়েকে হাতিয়ে নিয়ে আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন ৩০বছর যাবৎ এই যৌনপল্লীতে তার বসবাস ঝুমুর নেত্রী হওয়ার পর থেকেই আমার উপরে নির্যাতন করে আসছে। শুধু আমিই নয় আমার মত অনেক অনেক যৌনকর্মীকে নির্যাতন করে ঝুমুর। কিন্তু কেউ ওর ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায় না। দেওয়ালে পিট ঠেকে যাওয়ায় আজ আমি মুখ খুললাম। আমি নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় মামলা দিতে গেছি দুপুর ২টায় অভিযোগ নিছে রাত ৯টায়। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরে ওসি সাহেব বলে যে অভিযোগ নিলাম কিন্তু তুমি কোন সাংবাদিকের কাছে যাবা না আমি তোমার বিচারের ব্যবস্থা করে দিব। আজ ২দিন হলো কোন বিচার পাচ্ছি না কোন আসামীকে ধরে নাই পুলিশ। সে কারনেই আমি আপনাদের কাছে বিচার চাই। রেহেনা আরো অভিযোগ করেন যৌনপল্লীতে ঝুমুরের বিয়ার সহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নিমাই কুমার ঘোষ বলেন, রেহেনা বেগমকে ২০/২২বছরের একটি হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং তার চিকিৎসা করতে বলে। পরে আমি জানতে চাইলাম কিয়েছে। তিনি বলেন যে তাকে ২দিন আগে মেরে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছিল। পরে আমরা তাকে তাক্ষনিক ভাবে জরুরী বিভাগে নিয়ে যাই। জরুরী বিভাগের কতব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার আফরোজা সুলতানা তাকে সারিরিক পরিক্ষা করে। পরিক্ষা করার পর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া যায় সে খানে রক্ত জমে কালো কালো হয়ে আছে। পরে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ঝুমুর বেগম বলেন, রেহেনা তার বরিুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছে এধরনের কোন কাজ তিনি করেন নি। তিনি উল্টো রেহেনার বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনে বলেন একইসঙ্গে ঢাকার সাভারের এক লোক ও স্থানীয় আরেকজন লোকের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে রেহেনা। এ নিয়ে স্থানীয় লোকের সঙ্গে প্রায়ই তার ঝামেলা হয়। সোমবার রাতেও তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে সে কিছুটা আহত হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া রেহেনা পল্লীর একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার অপরাধের জন্য সে জেল খেটেছে। তার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের ওপর সে অনেক জুলুম করে বলে তারা নিজেরাই তার বাড়ি ছেড়েছে। সে পরিকল্পিতভাবে অন্য কারও ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম জানান, রেহেনার সাথে যে ঘটনা টি ঘটেছে সত্যি দুঃখজন আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে থানার ওসি সাহেবকে জানিযেছি বিষটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে। আশা করি রেহেনা সঠিক বিচার পাবে তার পাশে মুক্তি মহিলা সমিতি আছে।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, রেহেনা বেগম, ঝুমুরসহ ৫/৭জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এছাড়াও রেহেনার বিরুদ্ধেও তার এক ভাড়াটিয়া একঠি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ২টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

p

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: