শিরোনাম

South east bank ad

‘মোঘল স্থাপত্যের নিদর্শন’ ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী মসজিদ

 প্রকাশ: ০৯ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ইসলাম ও জীবন

এম.এস রিয়াদ, (বরগুনা) :

বরগুনা জেলাধীন বেতাগী উপজেলার এক অজপাড়া গায়ের নাম বিবিচিনি। নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্যে আচ্ছাদিত টিলার উপর মাথা উঁচু করে মোঘল স্থাপত্যের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও এই গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক “শাহী মসজিদ”।

চারিদিকে সবুজের সমারোহ। এ এক হৃদয় ছোঁয়া মনোরম পরিবেশ। ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে এক কথায় বলা যায় সুন্দরের কুটির। কিন্তু হৃদয় দিয়ে অনুভব করলে এ অনুভবের যেনো শেষ নেই।

দেশের যতগুলো ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, তার মধ্যে এই বিবিচিনি শাহী মসজিদ অন্যতম। কালের বিবর্তনে জরাজীর্ন অবস্থায় পড়ে আছে ঐতিহাসিক নিদর্শনটি। হারিয়ে যাচ্ছে তার অতীতের রূপের উজ্জলতা।

তবুও এর অবশিষ্ট যা কিছু আছে; পুরোনো ঐতিহ্য ও শৌর্য বীর্জের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে। এই শাহী মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনা, বহু ইতিহাস।

স্থানীয় লোকজনের জল্পনা-কল্পনার যেনো শেষ নেই এই মসজিদটিকে ঘিরে। অনেকেই মনে করেন, মসজিদটি তৈরী করেছিল পরীরা। তাই কেউ কেউ এ মসজিদকে পরীর মসজিদ বলে জানেন।

এই ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং যার নাম এই মসজিদের নামের সাথে একই সুতোয় গাঁথা, তিনি হলেন মহান আধ্যাত্বিক সাধনার শক্তিমান পুরুষ হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ্।

১৬৫৯ খ্রীস্টাব্দে সুদূর পারস্য থেকে তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লীতে আসেন। ওই সময় মোঘল সম্রাট শাহ্জাহানের পুত্র শাহ্ সুজা বঙ্গ দেশের সুবেদার এই মহান সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। কয়েকজন শিশ্যকে সাথে নিয়ে এই আধ্যাত্বিক সাধক দক্ষিণ বাংলার বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায় বিবিচিনি গ্রামে এসে আস্তানা গাড়েন। পরবর্তীতে তাঁর শিশ্য শাহ্ সুজার অনুরোধে এই গ্রামেই তিনি এক গম্বুজ বিশিষ্ট শাহী মসজিদটি নির্মাণ করেন।

জানা গেছে, নেয়ামত শাহের কন্যা চিনি বিবির নামের সাথে মিল রেখে গ্রামের নামকরণ করা হয় বিবিচিনি।
সমতল ভূমি থেকে মসজিদটির অবস্থান প্রায় ৪০ ফুট উঁচু টিলার উপর। এর দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট। চার পাশের দেয়াল ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি চওড়া। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে তিন তিনটি দরজা খিলানের সাহায্যে নির্মিত। মসজিদের ইটের রং ধূসর বর্ণের। ইটের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি।

বর্তমান যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি সম্পুর্ন আলাদা। মসজিদ প্রাঙ্গণে রয়েছে তিনটি কবর। এই কবর গুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪-১৫ হাত। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, তা হল ১৭০০ খ্রীস্টাব্দে আওরঙ্গ জেবের রাজত্বকালে শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ্ ইহলোক ত্যাগ করেন এবং ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী মসজিদের উত্তর, পশ্চিম পার্শ্বে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

এই কবরেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন কির্তীমান পরুষ আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ্ এবং তার পাশের দু’টি কবরে শুয়ে আছেন দুই সহদর চিনিবিবি ও ইছাবিবি।

BBS cable ad