শিরোনাম

South east bank ad

অন্য রকম পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান

 প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারী ২০১৬, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   পুলিশ

অন্য রকম পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান

মানুষ মানুষের জন্য, মাত্র একজন মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বদলে যেতে পারে কোন অবহেলিত জনপদের জীবনযাত্রা। ঘুরে দাঁড়াতে পারে যুব ও তরুণ সমাজ। মহিলারা হতে পারেন স্বাবলম্বী। ইচ্ছা থাকলে যুগ যুগ ধরে অবহেলিত হলেও নিজ প্রচেষ্টায় কর্মক্ষম মানুষ গাইতে পারে জীবনের জয়গান। বদলে দেয়ার অসাধ্যকে সাধন করেছেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তার নাম হাবিবুর রহমান, যিনি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার। পুলিশ নিয়ে অনেকের বিরুপ ধারণা থাকলেও হাবিবুর রহমানের ব্যতিক্রম। তিনি তার আন্তরিকতা ও কর্মের মধ্যদিয়ে পাল্টে দিয়েছেন একটি জনপদের চেহারা।বাড়ি বাড়ি থেকে ডেকে পুলিশে চাকরি!ধামরাই (ঢাকা) থেকে ফিরে: মাইকিং করে চাকরি গ্রহণের আহবান! তাও আবার পুলিশে! কোন লেনদেন ছাড়া! অবিশ্বাস্য! অভাবনীয়! কিন্তু পুলিশে লোক নিয়োগে এমন কাণ্ডই এবার ঘটেছে ঢাকার ধামরাইতে।বাড়ি বাড়ি থেকে ডেকে চাকরি দেয়া হয়েছে সমাজের প্রকৃত অবহেলিত ও দু:স্থ পরিবারের ‘যোগ্য’ সন্তানদের।না। কোন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নয়।বরং রাজনীতিকে আড়ালে রেখে। নিয়োগ বাণিজ্য ছাড়াই। আকাশের চাঁদ হাতে পাবার মতো চাকরি পেয়ে গেছে ধামরাইয়ের অর্ধশতাধিক পরিবার। গোটা কার্যক্রমটিই পরিচালিত হয়েছে জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে। ধামরাই থানার ওসি মোহাম্মদ রিজাউল হকের প্রত্যক্ষ তদারকিকে।অথচ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পুলিশে চাকরি নেয়ার অজস্র অভিযোগের সাক্ষী এই ধামরাই। অন্য জেলার লোক হয়েও স্থায়ী বাসিন্দা সেজে ধামরাইয়ের কোটায় নিয়োগ, পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দিতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সেই ক্ষত এখনো শুকোয়নি ধামরাইতে।সেই ধামরাইতে কি করে বাড়ি থেকে ডেকে ডেকে অর্থ ছাড়া চাকরি হয় পুলিশে?এই উত্তরের খোঁজে ধামরাই থানায় গিয়েই দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র।থানা আর থানা নেই। মানসিকতায় যেমন, তেমনি বহিরাঙ্গনেও বদলে গেছে ধামরাই থানা। বাইরে ফুলের বাগান। তার মাঝে নির্মিত হচ্ছে উন্নতমানের আর আধুনিকতার মিশেলে ‘গোল ঘর’। ভেতরের চিত্রটাও অচেনা। বদলে যাওয়া থানার ভেতর আর বাইরের চিত্রটাই জানান দেয়, কিছু একটা ঘটে গেছে এখানে। এবার বদলে যাওয়ার বিপ্লবের সূচনার স্বাক্ষী হতে চায় ধামরাই। টাকার বিনিময়ে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্যের কলঙ্ক মোচনের জন্যে যেন খোলনলচে বদলে নিচ্ছে ধামরাই থানা।ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘সেবাই পুলিশের ধর্ম’।এই ধর্ম আগেও ছিলো। তবে সেই ধর্মের নামে অর্ধমই এতদিন দেখেছে ধামরাই। যার ব্যতিক্রমের শুরুটাও যেন এখানেই।অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রিজাউল হকের কক্ষে ঢুকে ভিমড়ি খেতে হয়। একি থানা! নাকি কোন অভিজাত ব্যক্তির বৈঠকখানা। চারদিকে আপনা আপনিই চোখ ঘুরে যায়। অপূর্ব আর নান্দনিকতার ছোঁয়া সর্বত্র। রুচিশীল ইন্টেরিয়র আর আভিজাত্যের সমন্বয়ে বদলে গেছে থানার চেহারা। থানার সামনে পেছনে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। নোংরা ড্রেনের উপচে পড়া আর্বজনা আর বমি টেনে আনা উৎকট দুর্গন্ধের বদলে সেখানে ফুলের সৌরভ। সেখানেই চোখ আটকে যায় সুসজ্জিত করে সাজানো পুলিশ সদস্যদের পরিচ্ছন্ন ডাইনিং রুমে।ওসির কক্ষে প্রবেশের আগে লেখা –‘ IF YOU R NOT SATISFIED TELL ME, IF YOU ARE SATISFIED TELL OTHERS’বিনে পয়সায় ডেকে ডেকে বাড়ি থেকে পুলিশে চাকরি দিয়ে কি অতীত কেলেঙ্কারী থেকে মুক্ত হতে চাইছে পুলিশ?ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রিজাউল হক বলেন, ‘যেভাবে খুশি। আপনি মূল্যায়ণ করতে পারেন। তবে পুলিশ সুপারের নির্দেশ একটিই। বদলে ফেলতে হবে নিজেদের নেতিবাচক ইমেজ। সূচনা করতে হবে গণমুখি পুলিশিং কার্যক্রম। সেটিই এখন দেখবে ধামরাই। দায়িত্ব নেবার পর আমি এই বার্তাই বয়ে চলছি থানার সর্বত্র’।‘পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান স্যারের নির্দেশে আমরা গোটা এলাকায় মাইকিং করেছি। বাড়ি বাড়ি থেকে ডেকে এনেছি প্রকৃত যোগ্যদের। অনেকের ধারণা ছিলো- টাকা ছাড়া আবার পুলিশে চাকরি হয় নাকি? টাকা নেই বলে আবেদনও করতো না ওরা। প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমরা তুলে এনেছি প্রকৃত দু:স্থ ও অবহেলিত পরিবারের ৫৪ জনকে। সেসব পরিবারের কাছে যা ছিলো এক কথায় অকল্পনীয়’ –পরিবর্তনের গল্পটা বলে যান ওসি।সেবার মানে আগের সঙ্গে পার্থক্যগুলো কি?আগে থানায় আসতো মানুষ দালাল ধরে। এখন দালাল মুক্ত। আমি বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বলেছি, থানায় জিডি বা মামলা করতে কোন পয়সা লাগে না। মসজিদ, মন্দির সকল স্থানেই উদ্বুদ্ধ করেছি মানুষকে। এখন টাউট বাটপাড় বা নেতাকর্মী ধরে থানায় আসার চল বলতে গেলে বন্ধ হয়ে গেছে। কমে গেছে এসব মাধ্যমে থানায় এসে অর্থ খরচ আর প্রতারণাও। এখানে কাউন্টার মামলা নেয়া হয় না। কমে গেছে মামলার সংখ্যা। যার কারণে দিন দিন উন্নত হচ্ছে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।আমরা প্রতিটি ইউনিয়নের চৌকিদার, দফাদারদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করি। অবহেলিত এই মানুষদের জন্যে সাধ্যমতো কিছু করার চেষ্টা করি। পুলিশ সুপার মহোদয় ইতোমধ্যে তাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। বিভিন্ন ফান্ডের অর্থ দিয়ে উৎসব, পার্বণে তাদের হাতে আমরা উপহার তুলে দিই। তাদের মুখে হাসি ফোটাই। তারাও তো মানুষ। আমরা তাদের বিশেষ মর্যাদা দিই। মাসের অন্তত দুটি দিন আমরা তাদের নিয়ে ভালোমন্দ খাই। এই রেওয়াজটাও কিন্তু পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে চালু হয়েছে এখানে।আরেকটি নতুন বিষয় আমরা চালু করেছি এই থানায়। যেটার নাম ‘ফোন পুলিশিং’।প্রতিদিন রাতে এলাকার গণমান্য ১০ থেকে ১৫ জনকে ফোন দিই। প্রথমে জানতে চাই তাদের কথা। কেমন আছেন তারা। খোঁজ খবর কি? পুলিশের সেবার মানে কোন অসঙ্গতি আছে কি’না, কিংবা পরামর্শ সবাই জানতে চাওয়া হয় ফোন করে।মানুষ আগে ফোন পেয়ে অবাক হতো। এখন স্বত:স্ফূর্তভাবে পুলিশের সঙ্গে খোলাখুলি মনে সবকিছু বিনিময় করতে পারছে।এই আইডিয়াটাও কিন্তু পুলিশ সুপার মহোদয়ের। তাঁর লক্ষ্যই হচ্ছে গণমুখি পুলিশিং সেবা নিশ্চিত করা।রাতে আমরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা এমনকি বিপণীবিতানের নিরাপত্তা রক্ষী বা সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন দিই। তিনবার ফোন দেবার পরও যদি ফোন রিসিভ না করে বা সাড়া পাওয়া না যায় তাহলে সেখানে পৌঁছে যায় আমাদের পুলিশ ফোর্স। দেখা যায় দায়িত্ব পালনের বদলে সে ঘুমুচ্ছে।পরদিন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আমরা লিখিতভাবে রিপোর্ট করি যে তার নিয়োজিত লোক ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না।পাল্টে গেছে সাভার বেদেপল্লীর জীবনযাত্রাইচ্ছা থাকলে যুগ যুগ ধরে অবহেলিত হলেও নিজ প্রচেষ্টায় কর্মক্ষম মানুষ গাইতে পারে জীবনের জয়গান। এ চিত্র সাভার বেদেপল্লীর। ঝাড়ফুঁক, সিংগা লাগানো, দাঁতের পোকা ফেলা, সাপ পালন ও বিক্রি এবং মাদক ব্যবসা যে এলাকার চিরচেনা রূপ ছিল সেই বেদেপল্লীতে দিন বদলে ছোয়া লেগেছে। থেমে গেছে নিজেদের মধ্যকার বিবাদ। বন্ধ হয়েছে বহুবিবাহ। জীবনমান বদলে যাওয়ায় ওই এলাকায় ঘরে ঘরে এখন কর্মক্ষম মানুষ। একসময়ের অলস মানুষগুলোর এখন কর্মব্যস্ত জীবন। যুগ যুগ ধরে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত বেদেপল্লীর চালচিত্র বদলে দেয়ার অসাধ্যকে সাধন করেছেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তার নাম হাবিবুর রহমান, যিনি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার। পুলিশ নিয়ে অনেকের বিরুপ ধারণা থাকলেও হাবিবুর রহমানের ব্যতিক্রম। তিনি তার আন্তরিকতা ও কর্মের মধ্যদিয়ে পাল্টে দিয়েছেন একটি জনপদের চেহারা। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তিনি ওই এলাকায় গড়ে তুলছেন কর্মক্ষম নারী-পুরুষ। জানা গেছে, সাভার থানায় বেদে সম্প্রদায়ের মধ্য মারামারীর অভিযোগ প্রায়ই মিলে। বিশেষ করে ওই এলাকায় মাদকের ভয়াবহতা রয়েছে। ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ সবধরনের মাদক মিলতো হাত বাড়ালেই। এ অবস্থায় পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে নেমে এরসঙ্গে নারী-পুরুষের সম্পৃক্ততা পায়। পুলিশ সুপার (এসপি) বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক কর্মসূচি। এরমধ্যে মারা যাওয়ার পর বেদেদের কবরস্থান সমস্যা সমাধান ও শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিত করতে স্থানীয়ভাবে গড়ে তুলেন জনমত। বেদেরা নাগরিক সুবিধা পেতে শুরু করলে তারা এসপির উপর আস্থাশীল হয়। এরপর তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ শুরু হয়। অমরপুর, পোড়াবাড়ি, কাঞ্চনপুর ও বক্তারপুর এলাকা নিয়ে ‘সাভার বেদে পল্লী’। সেখানে ২০ হাজারেরও বেশি বেদের বসবাস। মূলত সাপ নিয়েই কারবার তাদের। এক সময় নৌকায় বসবাস করলেও এখন গৃহস্থের মতো ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন বেদেরা। সাপ ধরে বিক্রি করা, সাপের রকমারি খেলা দেখানো, সিঙ্গা লাগানো, তাবিজ-কবজ বিক্রি তাদের প্রধান পেশা। এক সময় নিয়মিত সাপের হাটও বসাতো। কিন্তু সময় বদলেছে। মানুষও সচেতন হয়েছে। এসব করে এখন আর মানুষ ভুলানো যায় না। এভাবে তাদের সংসারও ভাল চলছে না। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই সংগ্রামী জীবন বেদেদের। পুরনো পেশায় জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ায় ‘বিকল্প’ হিসেবে তারা এক পর্যায়ে বেছে নেন মাদক ব্যবসা। টেকনাফ কিংবা উখিয়ায় সাপের খেলা দেখাতে গিয়ে ফেরার পথে সাপের ঝুঁড়িতে করে নিয়ে আসেন ইয়াবা। সেসব বিক্রি করেই চালাতেন সংসার। সাভারে মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের। তিনি বুঝলেন বেদেদের নতুন পেশার ব্যবস্থা করতে পারলেই মাদক ব্যবসা থেকে তাদের ফেরানো সম্ভব। সেই লক্ষ্যে ১০৫ জন বেদে নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করান। তাদের সেলাই করা কাপড় কিনতে এগিয়ে আসেন তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের নাজনীন নামের একজন মালিক। তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য আশুলিয়ার জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডম এর সামনে একটি শো-রুম তৈরি করে দেয়া হয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘উত্তরন বুটিকস্’। পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বেদে পল্লীর যুবকদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। এরমধ্যে ৩৫ জন বেদেকে গাড়ি চালনা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। যে হাতের মুঠোয় একসময় শোভা পেত বিষধর সাপ সেই হাত তারা ধরছে গাড়ির স্টিয়ারিং। আবার কয়েকজন যুবককে পুলিশ বাহিনীতে চাকরির সুযোগও তিনি করে দিয়েছেন। জানা গেছে, ১১ অক্টোবর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে বেদেপল্লীর ৩৫ বেকার যুবকের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। তিন ব্যাচে তারা এই প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। উত্তরার ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলে প্রতিটি ব্যাচকে দুই মাস করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ব্র্যাকের প্রশিক্ষকরা। প্রশিক্ষণ শেষে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে দেবে ব্র্যাক। এ বাবদ প্রশিক্ষণার্থীদের কোন খরচ বহন করতে হবে না। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসার সভাপতিত্বে এইদিন এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. নূরুন নবী তালুকদার এবং ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার সোহেল, বেদে যুব সংগঠনের নেতা রমজান উপস্থিত ছিলেন। বেদে সম্প্রদায়ের নেতা রমজান জানান, পুলিশ শুধু অপরাধ ও অপরাধী নিয়েই কাজ করে না। পুলিশ চাইলে বদলে দিতে পারে গোটা সমাজ ব্যবস্থা। হাবিবুর রহমানের বদৌলতে সাভার বেদে পল্লী এর উদাহরণ হয়ে থাকবে। পুলিশ জনগণের বন্ধু এর সার্থকতা মিলে হাবিবুর রহমানের কর্মকা-ে। এসপি হাবিবুর রহমান বলেছেন, বেদেপল্লীর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে আইনী পদক্ষেপে এদের সুপথে ফেরানো কঠিন এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এরচেয়ে ভালবাসা দিয়ে তাদের মনজয় করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে কাজ করে সাড়া মিলেছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে একটি সমাজ। তিনি বলেন, পৈত্রিক পেশাকে ঘৃণা করে নয়, বরং সময়ের প্রয়োজনে সমাজে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের জন্যই বেদেরা বিকল্প পেশায় যেতে চাইছে। এইকাজে পুরো পুলিশ বাহিনী তাদেরক সহায়তা করছে। হাবিবুর রহমান বলেন, ইচ্ছা আছে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকার বেদে সমাজের জন্যও এরকম উন্নয়নমূলক কাজ করার।আহত রিক্সাচালক ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান :হঠাৎ করেই সরগরম সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। রক্তে ভেজা এক রোগীকে স্ট্রেচারে ঠেলে সোজা জরুরি বিভাগে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের তদারকিতে এক পুলিশকর্তা। হাতে ওয়্যারলেস সেট। রোগীকে নিয়েই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে অবিরত কথা হচ্ছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার।এরই মাঝে পুলিশ সদস্যদের কেউ ছুটছেন ফার্মেসিতে ওষুধ আনতে। কেউবা পরম যত্নে ওই রোগীকে নিয়ে যাচ্ছেন সিটিক্স্যান করাতে।এসব দৃশ্য দেখে মনে হতেই পারে বেসরকারি ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন কোন ভিআইপি। কিংবা রোগী পুলিশের কোন উদ্ধর্তন কর্মকর্তা। আর রোগীকে নিয়ে পুলিশের তোড়জোড়ে আড়মোড়া ভেঙ্গে নড়ে চড়ে বসতে দেখা যায় চিকিৎসক আর সেবিকাদের।তবে চিকিৎসার শুরুতেই যেন ধাক্কা খান তারা।প্রশ্ন ওঠে রক্ত ভেজা শরিরে চিকিৎসা নিতে আসা কে এই রোগী? কি তার পরিচয়? খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, আহত রোগীর নাম সাহাবুদ্দিন (৩৩)। পেশায় রিকশাচালক। রোগীর এই পরিচয়ে যেন আকাশ থেকে পড়েন সবাই।চিকিৎসদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে, তাহলে রিকশাচালকের জন্যে পুলিশের এত তোড়জোড় কেন! রাস্তায় মানুষ মরে পড়ে থাকে। দুর্ঘটনায় পড়ে কতজনই না বাচাঁনোর আর্তি জানায়! সেসব আর্তি শোনার জন পোশাকী বাহিনীর সদস্যদের খুঁজে পাওয়া কি এতো সহজ?একজন রিকশাচালকের জন্যে পুলিশের এ দৌড়ঝাঁপ যেন বিস্ময়ের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় শতগুণে।আর সেই বিস্ময়ের ঘোর কাটাতেই সাংবাদিকরা নামে রহস্য সন্ধানে।খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, বিকেলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ট্রাকচাপায় গুরুতর আহত হন রিকশাচালক সাহাবুদ্দিন। একটি ট্রাক আচমকা ওই রিকশাচালককে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।ঠিক সে সময় ওই পথ ধরে আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। দ্রুত গতির গাড়ি মুহূর্তেই স্থির হয়ে যায়। রিকশাচালককে পেছনে থাকা পুলিশের একটি গাড়িতে তুলে দিয়েই তিনি ছোটেন ট্রাকের পেছনে।বেশ কিছুদূর ধাওয়া করে আটক করা হয় চালক রমিজ উদ্দিন সমেত ট্রাকটিকে।বেশ দ্রুততার সঙ্গেই আটক ট্রাকটিকে (চট্ট-মেট্রো-ন-২২১৫) নেয়া হয় সাভার মডেল থানায়। আর হতভাগ্য রিকশাচালক সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান সাভার মডেল থানার পরিদর্শক(তদন্ত)দীপক চন্দ্র সাহা।তার নেতৃত্বেই চলে রোগীর চিকিৎসা আর দেখভালের সবকিছু।তিনি জানান,এসপি স্যার ট্রাকটি ধাওয়া করে ধরেছেন, আর আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। চিকিৎসার দায়িত্ব আমি নিজে নিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও বলে দিয়েছে, যাতে সবোর্চ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়। আর সেটি তদারকি করতেই আমার এখানে থাকা!

BBS cable ad

পুলিশ এর আরও খবর: