শিরোনাম

South east bank ad

  ওসি মহসিন এর সহায়তায় অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে অপরাধীরা

 প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   থানার কথা

  ওসি মহসিন এর সহায়তায় অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে অপরাধীরা
বায়েজিদ বোস্তামি থানার শহীদনগর এলাকায় দীর্ঘদিন মাদক বিক্রি করতেন মমতাজ (ছদ্মনাম)। এলাকায় তার পরিচিতিই ছিল মাদক স¤্রাজ্ঞী হিসেবে।জেলও খেটেছেন তিন চারবার। তবে সেই মমতাজ এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। শুধু মমতাজ নয় তার মতো অন্ধাকার জগত থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন বাকলিয়ার মমতা , বাবলু, শামচু । আর আলোর মশাল হাতে তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখানো ব্যক্তিটি হলেন চট্টগ্রামের আলোচিত ওসি মোহাম্মদ মহসিন। এ প্রসঙ্গে ওসি মহসিন বলেন, ‘অপরাধী অপরাধ সৃষ্টি করে। অপরাধ অপরাধী সৃষ্টি করেনা। তাই যদি অপরাধীকে সংশোধন করা যায়। তাহলে অপরাধ আপনা আপনিই কমে যাবে। আমি তাই এ বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’ এ প্রসঙ্গে মমতাজ বলেন, ‘এতদিন সবাই শুধু গ্রেফতার করেছে। কিন্তু সংশোধনের সুযোগ দেয়নি। স্যার আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছেন। তাই আমরা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছি।’ সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার শহীদনগরে থাকতেন মমতাজ। জড়িত ছিলেন মাদক ব্যবসার সাথে। বারবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে এসে আবারো জড়িয়ে পড়ে পুরাতন অপরাধে। এক পর্যায়ে তার সাথে কথা বলেন ওসি মহসিন। কাউন্সেলিং করেন, আশ্বাস দেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্পূর্ণ সহযোগিতার। এতে কাজ হয় সাথে সাথেই। এরপর ১ ডিসেম্বর লালদীঘির ময়দানে কমিউনিটি পুলিশিং অনুষ্ঠানে আইজিপি তার হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন। তিনি সেইদিনই ঘোষণা দেন অন্ধকার জগত থেকে বের হয়ে আসার। একই ভাবে অন্যরাও ফিরে আসেন এভাবে। অশান্ত বায়েজিদে শান্তির আবাহন চট্টগ্রামের অশান্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত বায়েজিদ বোস্তামি এলাকা। চট্টগ্রামের প্রায় বড় সব শিল্প কারখানা এখানে থাকায় এখানে শ্রমিকদের সংখ্যা বেশী। তাই অপরাধের সংখ্যাটাও এখানে বেশী । শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ, পাড়ায়-পাড়ায় সংঘর্ষ, গ্রুপে গ্রুপে সংঘর্ষ এখানকার নিয়মিত ঘটনা ছিল। কিন্তু অশান্তির সেই বায়েজিদে এখন শান্তির আবাহন। মালিক-শ্রমিকের সাথে পুলিশের নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে কমানো হচ্ছে সামাজিক অপরাধ। মসজিদে মসজিদে আলোচনা সভার মাধ্যমে নির্মূল করা হচ্ছে মাদকও। প্রতিরোধমূলক এসব পদক্ষেপের কারণে গত ছয়মাসে বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতেসেখানে বিভিন্ন কারখানায় নিয়মিত সৌহার্দ্য মিটিং, অপরাধ দমনে সচেতনতা সৃষ্টি, মসজিদে কথা বলা, উঠান – বৈঠক,বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং করছি।’ এ প্রসঙ্গে বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার পাঁচলাইশ যুবসংঘের সভাপতি মনজুর আলম বলেন, ‘সাধারণত কোন ঘটনা ঘটলে আমরা পুলিশের কাছেই যায়। কিন্তু পুলিশের কাছে না গিয়েই নিজেরাই এসব সমস্যার সমাধান করতে পারি তা ওসি সাহেব আমাদের শিখিয়েছেন। সামাজিকভাবেই যে যেকোন সমস্যার সমাধান করা যায় তা এখন আমরা শিখছি। তাই ওসি মহসিনকে আমরা পুলিশ হিসেবে নয়, সহকর্মী হিসেবেই দেখি।’ বদলে যাও, বদলে দাও নিজেকে যোগ্য নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন ওসি মহসীন। নিজে যেমন সেরা হয়েছেন, পাশাপাশি সেরা করে তুলেছেন তার থানাকে। এ পর্যন্ত তিনবার সেরা থানার পুরষ্কার পায় বায়েজিদ বোস্তামি থানা। এছাড়াও দলগত বিভিন্ন পুরষ্কার জেতে প্রতিবারই। তার এই কাজ প্রভাব ফেলেছে তার অধীনস্থদের কাজেও। তার থানা থেকে এ পর্যন্ত সেরা অফিসারের স্বীকৃতি পেয়েছেন এস,আই শামীম শেখ, এস আই মো: কামাল হোসেন খান, , এস আই আবদুর রব, এ এস আই আব্দুল্লাহ। এ প্রসঙ্গে ওসি মহসীন বলেন, ‘পুলিশের কাজ সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করা যা একজনের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। এটি একটি টিমওয়ার্কের ব্যাপার। নিজে সেরা হলে হয়তো তুষ্টি পাওয়া যায়, কিন্তু তৃপ্তি পাওয়া যায় না। ’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আমরা সবাই নিয়মিত নিজেদের মধ্যে মিটিং করে থাকি। আমি না হয়ে আমরা হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করি। এর ফলে আমাদের মধ্যে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।’ সেরাদের সেরা ওসি মহসীন এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপিতে ওসি মহসীনের চমক চলছেই। টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে পুরষ্কার পাওয়ার পর এবার জিতলেন সিএমপির সেরা ওসির পুরষ্কার। চট্টগ্রামের ১৬ ওসিকে পেছনে ফেলে তিনি অর্জন করেছেন সিএমপির ব্যক্তিগত ক্যারিশমার সেরা এই সম্মান। নভেম্বর মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনবদ্য অবদান রাখায় এই পুরষ্কার পান সিএমপির আলোচিত এই ওসি। ব্যক্তিগত অর্জনের পাশাপাশি তার থানা পুরষ্কার পেয়েছে আরও তিন ক্যাটাগরিতে। সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ভাল কাজের স্বীকৃতি এবং কাজে গতিশীলতা আনতে গত মে মাস থেকে সিএমপিতে চার ক্যাটাগরিতে পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে প্রথম তিনবারই সেরা থানা হয়ে চমক দেখায় ওসি মহসিনের বায়েজিদ বোস্তামি থানা। এরপর আরও কয়েকবার সেরা অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার জেতে বায়েজিদ বোস্তামি থানা। তবে ব্যক্তিগত ক্যারিশমার সেরা এই স্বীকৃতি জেতেন এই প্রথমবার। নভেম্বর মাসে তিনটি বিদেশী পিস্তল, ১২ রাউন্ড গুলিসহ ২ সন্ত্রাসী, ৫০ হাজার টাকার জালনোট সহ ১ জন, ২১ টি মাদক মামলায় ২৬ জনসহ গ্রেফতারী পরোয়ানামূলে ১০২ জনকে আটক এবং ১৬ হাজার ২০০ ইয়াবা,১২ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজা এবং ১৮০ লিটার চোলাই মদ জব্দের স্বীকৃতি হিসেবে এই সেরার সম্মান অর্জন করেন তিনি। ব্যক্তিগত অর্জনের পাশাপাশি সেরা অস্ত্র উদ্ধারকারী এবং মাদক উদ্ধারকারী হিসেবে পুরষ্কার অর্জন করে মহসীনের বায়েজিদ বোস্তামি থানা।
BBS cable ad

থানার কথা এর আরও খবর: