শিরোনাম

South east bank ad

১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা

 প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   এনবিআর

১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা
 

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আহরণে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ সময়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৫৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পণ্য আমদানিতে কিছু জটিলতার কারণে রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা। তবে মসলা জাতীয় পণ্যের আমদানি বাড়লে রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশন কার্যালয় থেকে জানা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হিলি স্থলবন্দরে ৭৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ হিসেবে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ, আগস্টে ৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৫৫ কোটি ৭ লাখ, অক্টোবরে ৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৬১ কোটি ৮৯ লাখ, নভেম্বরে ৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৩ কোটি ৮৯ লাখ, ডিসেম্বরে ৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৫৩ কোটি ৫৬ লাখ, জানুয়ারিতে ৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৯ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৭০ কোটি ২ লাখ, মার্চে ৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৯৫ কোটি ৭৭ লাখ, এপ্রিলে ৬৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৭ কোটি ৮৬ লাখ।

হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘এ বন্দর দিয়ে শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি করলে এইচএস কোডের ফাঁদে ফেলে অতিরিক্ত শুল্ক আদায় করা হয়। একই পণ্য অন্য বন্দরে আরো কম মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়। এখানে বাড়তি ব্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারকরা। তাই তারা হিলি স্থলবন্দর ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’

তিনি আরো জানান, কাস্টমসে যুগ্ম কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদায়ন না থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে সময় বেশি লাগে। ফলে ব্যবসায়ীদের একদিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়তি মাশুল গুনতে হচ্ছে। এছাড়া বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ভারী যন্ত্রপাতি আমদানির পর ওঠানামা করানোর মতো ইকুইপমেন্ট না থাকায় অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে ফল আমদানির ক্ষেত্রে ট্রাকের চাকা অনুযায়ী শুল্কায়ন প্রথা চালু থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে এ-জাতীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব দুর্ভোগের কারণে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমছে বলে মনে করেন তিনি।

এক সময় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ট্রাকে পাথর আমদানি হতো বলে জানান আমদানিকারক দয়াল মোল্লা। তিনি বলেন, ‘দেশের অন্য বন্দরগুলো দিয়ে পাথর আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ও বন্দরের সব ধরনের শুল্ক ও মাশুল পরিশোধ করে আমদানিকারকরা তাদের নিজস্ব ইয়ার্ডে নিয়ে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করা হলে সেগুলো বন্দরের অভ্যন্তরেই রাখতে হয়। ফলে ব্যয় বেড়ে যায়, এ কারণে এই বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে।’

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এ বন্দর দিয়ে মূলত চাল, পেঁয়াজ, ভুট্টা, খৈল ও ভুসি-জাতীয় পণ্য বেশি আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু চাল ও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) দেয়া বন্ধ থাকায় এ দুটি পণ্য আনা যাচ্ছে না। এছাড়া ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে পণ্য আসতে পারছে না। এসব কারণে আমদানির পরিমাণ কমে গিয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ফলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি নিয়ে আমরা কাস্টমসের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করছি, শিগগিরই এ বন্দর দিয়ে ফল আমদানি শুরু হবে।’ সেই সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের আমদানিও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি।

রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার কারণ সম্পর্কে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কিছুটা কমে গেছে। সেই সঙ্গে রেয়াতি শুল্কে চাল আমদানির সময়সীমা ১৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে। এরপর মেয়াদ বৃদ্ধি না করায় চাল আমদানিও বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া একসময় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ভুসি আমদানি হলেও সেটি এখন বন্ধ রয়েছে। এসব কারণেই রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’

তবে অর্থবছরের বাকি সময়ে অর্থাৎ জুন পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সামনে যেহেতু ঈদুল আজহা রয়েছে, এ সময়ে মসলা-জাতীয় পণ্যের আমদানি বাড়বে। এর ফলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে।’

BBS cable ad

এনবিআর এর আরও খবর: