শিরোনাম

South east bank ad

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত থাকলেও বিনিয়োগে স্থবিরতা ও রাজস্ব খাতে চাপ বিদ্যমান

 প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   মন্ত্রনালয়

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত থাকলেও বিনিয়োগে স্থবিরতা ও রাজস্ব খাতে চাপ বিদ্যমান
 

দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) ‘ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক জুলাই ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, জুলাইয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছু অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। তবে কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

জিইডির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, জুলাইয়ে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেলেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, শিল্পে উৎপাদনে মন্দা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূলতা এখনো মাথাচাড়া দিচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি, বহুজাতিক সংস্থাগুলোর প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসে কাটছাঁট এবং বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস বাংলাদেশের রফতানিনির্ভর অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে।

বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। অন্যদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অনুমান করছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে ২০২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে, এ প্রত্যাবর্তন অর্জনের জন্য এখনই দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে এগোতে হবে।

জিইডি বলছে, খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকায় মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তবে অব্যাহতভাবে চালের দাম বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে উচ্চ উৎপাদন খরচ, ফসল সংগ্রহ-পরবর্তী অপচয়, পরিবহন ব্যয় এবং ব্যবসায়ীদের মজুদভিত্তিক কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি। অবশ্য দেশের বহির্বাণিজ্য খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার সামান্য মূল্যবৃদ্ধি ইতিবাচক বার্তা দেয়। একই সঙ্গে তৈরি পোশাকসহ রফতানি খাত পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এসব উপাদান অর্থনীতির বহিরাগত ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করছে।

তবে রাজস্ব খাতে এখনো চাপ বিদ্যমান রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, কর প্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রমের কারণে জুনে রাজস্ব সংগ্রহ সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এনবিআরের প্রস্তাবিত পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কারণে কিছু দপ্তরের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ছিল, ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি।

দেশের ব্যাংক খাতেও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান রয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ টানা ছয় মাস ধরে ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে, যা বিনিয়োগ ও শিল্প উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর পেছনে রয়েছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতি এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো আমানত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখাতে পারছে না।

তবে কিছু ইতিবাচক দিকও সামনে এসেছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে, যা মাঝারি মেয়াদে বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও এতে তাৎক্ষণিক প্রবৃদ্ধির গতি তেমন বাড়বে না, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তুলতে হলে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। এর মধ্যে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে জোর দেয়া, বিদ্যমান উৎপাদনশীলতাকে কাজে লাগানো এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একটি স্থিতিশীল নীতিনির্ধারণী পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।

সব মিলিয়ে জুলাইয়ে অর্থনীতিতে কিছুটা পুনরুদ্ধারের চিত্র স্পষ্ট হলেও এ অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কাঠামোগত সংস্কার এবং অর্থনৈতিক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করছে জিইডি।

BBS cable ad

মন্ত্রনালয় এর আরও খবর: