প্রাচীন লোকগাঁথা বাঙালির আত্মপরিচয়ের জন্য বড় সম্পদ: পরিকল্পনা মন্ত্রী

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাংলার প্রাচীন লোকগাঁথা বাঙালির আত্মপরিচয়ের জন্য বড় সম্পদ। মরমী শিল্পি হাসন রাজা ও শাহ আবদুল করিমসহ স্থানীয় লোক শিল্পিদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া প্রাচীন লোকগাঁথা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। বাংলা ও বাঙালির যত অবজ্ঞাই অতীতে করা হয়েছে তা টিকেনি।বাংলা লোক সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পরিকল্পনা মন্ত্রী গত শুক্রবার রাতে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরে, বঙ্গমাতা মিলনায়তনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাস্কৃতিক ফোরাম‘র উদ্যোগে ড. দীনেশ চন্দ্র সেন সংকলিত‘ মৈমনসিংহ গীতিকা‘র তৃতীয় সংস্করণের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. সৌমিত্র শেখর দে, সাবেক সিনিয়র সচিব ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির নির্বাহী সভাপতি মো: আবদুস সামাদ, দীনেশ চন্দ্র সেন গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক দেবকন্যা সেন এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ২০১৫ সালে বৃহ্ত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে মৈমনসিংহ গীতিকার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের পর এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশকে একটি যুগান্তকারী কাজ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মধ্যযুগের লোকপালা মহুয়া, মলুয়া, বীরঙ্গনা সখিনা কিংবা দেওয়ানা মদিনাসহ অসংখ্য পালাগান নিয়ে ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলা লোক সাহিত্যের এক অফুরন্ত ভান্ডার।
ড. দীনেশ চন্দ্র সেন সংকলিত মৈমনসিংহ গীতিকাকে বাংলা লোক সংস্কৃতির রত্ম ভান্ডার আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, ময়মনসিংহ গীতিকার প্রবাহমান ধারা ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা বিধৌত জনপদ বিশেষে করে গারো পাহাড়ের পাদদেশে নেত্রকোণা-সুনামগঞ্জসহ বিস্তৃর্ণ হাওর অঞ্চলের প্রাচীন জীবনধারাকে সারা দেশের জীবনধারার সাথে একসূত্রে গেঁথেছে।এখানকার লোকসংস্কৃতির গৌরবময় ইতিহাস, গবেষণার বিপুল তথ্য সম্ভার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লোকসংস্কৃতি অনুরাগীদের আকর্ষিত করে।
মন্ত্রী বলেন, মধ্যযুগের লোকপালা মহুয়া, মলুয়া, বীরঙ্গনা সখিনা কিংবা দেওয়ানা মদিনাসহ অসংখ্য পালাগান নিয়ে ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলা লোক সাহিত্যের এক অফুরন্তেএই ভান্ডারকে তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।বাঙালির এই প্রাচীন সম্পদকে রক্ষায় এগুলো চর্চা করতে হবে । বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে এই কাজটি করে যাচ্ছে উল্লেখ করেন।
একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সমিতির ভূমিকা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমাদের লোক সাহিত্যের আরও একটি সম্পদ হচ্ছে পূর্ববঙ্গ গীতিকা। এটিও প্রকাশ করা হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য মৈমনসিংহ গীতিকা প্রকাশিত ও সমাদৃত হওয়ার পরে দীনেশচন্দ্র সেন ময়মনসিংহ, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চল থেকে আরও অনেক গীতিকা সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে পূর্ববঙ্গ গীতিকা (১৯২৬) নামে মোট তিন খন্ডে প্রকাশ করেন। স্থানীয় গ্রামের মানুষ এগুলিকে ‘পালাগান’ নামে অভিহিত করে থাকে।
অনুষ্ঠানে আবুল কালাম আজাদ বাংলার লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রহ এবং তা সংরক্ষণে সংস্কৃতি সংগঠনসমূহকে এগিযে আসার আহ্বান জানান্।
দীনেশ চন্দ্র সেন গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক দেবকন্যা সেন দীনেশ চন্দ্র সেনের পৈতিক ভিটা মানিকগঞ্জে লোক সংস্কৃতির গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠান শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।এর আগে ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম সভাপতি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বারকে মহুয়া পালা গানের একটি ডিজিটাল ভার্সন হস্তান্তর করা হয়।