শিরোনাম

South east bank ad

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্মরণে ডাকটিকেট অবমুক্ত করলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী

 প্রকাশ: ১০ জানুয়ারী ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   মন্ত্রনালয়

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্মরণে ডাকটিকেট অবমুক্ত করলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী


বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় একটি দিন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন-সার্বভৌম ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। ঐতিহাসিক এই দিনটি স্মরণে ডাক অধিদপ্তর স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটাকা্র্ড প্রকাশ করেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আজ রোববার(১০জানুয়ারি) তার দপ্তরে এ বিষয়ে ১০(দশ) টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট ও ১০(দশ) টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন এবং ০৫(পাঁচ) টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড এ সময় উদ্বোধন করা হয়। মন্ত্রী এ বিষয়ক একটি সীলমোহর ব্যবহার করেন। তিনি দিবসটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বিবৃতিতে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান বিজয় পূর্ণতা পায়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশ প্রবেশ করে আলোকিত অভিযাত্রায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত নির্দেশনায় বাঙালি একদিকে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে কবরের পাশে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন।
বিবৃতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন,২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গণনা শেষে লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে তিনি ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছেন ।
বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তার বিস্ময়কর নেতৃত্বের ক্ষমতায় বিশ্ব নেতাদের কাছেও অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন, বাঙালিকে গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি বেশ কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড হিথ ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন।প্রধানমন্ত্রী হিথ বঙ্গবন্ধুকে নজীরবিহীন সম্মান দেখান। ঐদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ নিজে তার কার্যালয়ের বাইরে এসে যতক্ষণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাড়ী থেকে বেড়িয়ে না এলেন ততক্ষণ গাড়ীর দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলেন, ।’ বঙ্গবন্ধুকে স্বদেশে ফেরার জন্য ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেট জেটে উঠানো হয় উল্লেখ করে রাজপথে আন্দোলনে ছাত্রলীগের সাবেক লড়াকু সৈনিক জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন বাংলাদেশে ফেরার পথে বিমানটি দুই ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে দিল্লীতে। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান।
বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলার প্রতি দিল্লীর সমবেত জনতার বিরল ভালবাসার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিব মুক্তি পেয়ে আসার খবর শুনে দিল্লি বিমানবন্দরের পাশে হাজার হাজার ভারতীয় নারী-পুরুষ বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। সেখানে বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বিদেশের মাটিতে বক্তৃতাররীতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সেদিন ইংরেজিতে ভাষণ শুরু করে ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান…’ বলতে না বলতেই উপস্থিত হাজার হাজার ভারতীয় দর্শক একসঙ্গে সমস্বরে চিৎকার করে তাকে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। জনতার দাবির মুখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্মিত হেসে বলেন, ‘দে নিড বেঙ্গলি’। তিনিও বঙ্গবন্ধুকে বাংলায় বক্তৃতা করার আহ্বান জানান।এরপরে বঙ্গবন্ধু ‘ভাই ও বোনেরা’ বলতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে ভারতের অভ্যর্থনা সভার জনস্রোত।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও সে সময়কার ঢাকার চিত্র তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার পর খোলা গাড়ীতে দাঁড়িয়ে জনসমুদ্রের ভেতর দিয়ে রেসকোর্স ময়দানে এসে পৌঁছাতে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। সেদিনের মানুষের অনুভূতি বর্ণনা করে বলা হয়, রেসকোর্স ময়দান ছিল লোকারন্য, জয়বাংলা, জয়বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়েছিল সেদিন বিজয়ের আনন্দ গীতিধারার মুর্ছনায়। বাঙালির হৃদয়ের মুকুট বিহীন সম্রাট বঙ্গবন্ধুও সেদিন বাংলার মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদেছিলেন।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূণ ভাষণ দেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণটি ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা।বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরণের হবে, পাকিস্তানি বাহিনীর সংগে যারা দালালী করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের কাজ কী হবে এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা। বিবৃতিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার সংগ্রামের সেদিনের ডাকে রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত লাখ লাখ মন্ত্রমুগ্ধ দু‘হাত তুলে সেই সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।
স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটাকার্ড আজ রোববার থেকে ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে এবং পরে দেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান পোস্ট অফিসগুলো থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

BBS cable ad

মন্ত্রনালয় এর আরও খবর: