শিরোনাম

South east bank ad

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে আন্তর্জাতিক বেসরকারি অপারেটর

 প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আমদানী/রপ্তানী

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে আন্তর্জাতিক বেসরকারি অপারেটর

পণ্যের ওঠানো-নামানোর সক্ষমতা বাড়াতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক বেসরকারি অপারেটর। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার একক।

চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি থেকে ভাটির দিকে ড্রাই ডক এবং বোটক্লাবের মধ্যবর্তী প্রায় ২৬ একর জায়গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে নির্মাণ করা হচ্ছে এ কনটেইনার টার্মিনাল। জানা গেছে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন প্রকল্পটির জন্য আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের উদ্দেশ্যে ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পিসিটি অন পিপিপি মডেল’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। টার্মিনাল অপারেশন পরিচালনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএসএ।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়নাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল শীর্ষক প্রকল্পটি ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয় ২০১৭ সালের ১৩ জুন। তখন এর বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করে আরডিপিপি পাঠানো হয়। প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী টার্মিনালটির বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। টার্মিনালটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সুবিধা থাকবে। এতে বছরে সাড়ে চার লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। এছাড়া তেলবাহী জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধাও থাকবে। সাড়ে নয় মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) এবং ১৯০ মিটার জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই টার্মিনালে। পিসিটি নির্মাণ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। শতভাগ কাজ শেষে তারা চট্টগ্রাম বন্দরকে টার্মিনালটি বুঝিয়ে দেবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশেরও বেশি চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে হ্যান্ডলিং হয়। যদিও এ বন্দরে বর্তমানে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নামের তিনটি টামিনালে মোট ১৯টি জেটি রয়েছে। পাশাপাশি তেল খালাসের জন্য রয়েছে চারটি ডলফিন জেটি। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোর পাশে ইয়ার্ড এলাকার মোট পরিমাণ ৮ লাখ বর্গমিটার। এ বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৩১ সালে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার একক ও ২০৪৩ সালে ৭৫ লাখ ৯৭ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সামাল দিতে হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

পিসিটিতে বন্দরের মূল জেটির চেয়ে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, পিপিপির আওতায় পিসিটি প্রকল্পটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বেসরকারি অংশীদারের মাধ্যমে পরিচালিত হলে আধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের মাধ্যমে এই কনটেইনার টার্মিনালের আউটপুট বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে একই ধরনের পিপিপি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কনটেইনার হ্যান্ডল করতে পারি। যেখানে সেসব দেশে ঘণ্টায় ৪০-৪৫ কনটেইনার হ্যান্ডল করতে পারে। পণ্যের ওঠা-নামা কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক অপারেটরদের পেশাদারিত্বের জায়গাটিও অনেক বেশি শক্তিশালী। পিসিটির নির্মাণকাজ সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালনায় গতি আনতে টার্মিনালটি বড় ভূমিকা রাখবে।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পোর্ট টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম সবচেয়ে বেশি। বন্দরের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি সক্ষমতা বাড়ানো হতো, তাহলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। নির্মাণ শেষে যত দ্রুত সম্ভব পিসিটি অপারেশনে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

BBS cable ad

আমদানী/রপ্তানী এর আরও খবর: