অশুল্ক বাঁধা সরিয়ে দেয়া গেলে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভৌগলিক নৈকট্যের পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের ভোগের ধরণে যে মিল রয়েছে সেগুলোর বিবেচনায় একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে এই দুটি দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।
কাটস ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে ভারতের দিল্লীতে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালায় বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কাটস ইন্টারন্যাশনালের এসোসিয়েট ডাইরেক্টর পৃথ্বীরাজ নাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউএসএআইডি’র স্টিফেন ওয়াইড এবং ভারতের ন্যাশনাল এক্রেডিটেশন বোর্ড অফ সার্টিফিকেশন বডিজ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনিল জহুরি। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সরকার, গবেষণা সংস্থা, ব্যবসায়িদের সংগঠন ও এনজিও প্রতিনিধিরা এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন।
ড. আতিউর তাঁর বক্তব্যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ১.৭ বিলিয়ন ভোক্তার যে বাজার রয়েছে সে কথা মাথায় রেখে এ অঞ্চলের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর বিশেষ জোর দেন। অবকাঠামোগত স্বল্পতার পাশাপাশি বেশ কিছু অশুল্ক বাঁধাও এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এসব অশুল্ক বাঁধার মধ্যে রয়েছে আইনি প্রতিবন্ধকতা, সীমান্তের দুই পাশের দেশগুলোর মধ্যে পণ্যের সাধারণ মান বিষয়ে ঐক্যমত্য না থাকা এবং দক্ষতার অভাব সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে এ অঞ্চলে একটি অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর সুযোগ নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য সহজ করতে সরকারগুলো যেন যথাযথ উদ্যোগ নেয় তা নিশ্চিত করতে সুশীল সমাজ এবং গবেষণা সংস্থাগুলোকে সুনির্দিষ্ট গবেষণা ও এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বলেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ভারতের স্থল বন্দরগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কার্যকর বাণিজ্য নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের স্থল বন্দরগুলোকেও একই মানে উন্নিত করতে হবে। ভারত থেকে পাওয়া ঋণ আমরা রেল আবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করছি। পাশাপাশি এ অর্থ স্থল বন্দরগুলো উন্নয়নের জন্যও বিনিয়োগ করা যেতে পারে। স্থল বন্দর উন্নয়নে ভারতের অভিজ্ঞতাও আমরা কাজে লাগাতে পারি।
আন্ত:দেশীয় বাণিজ্যের জন্য সীমান্ত হাটের মতো আরও যেসব উদ্ভাবনি পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে সেগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য ড. আতিউর নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
পাশপাশি মাঠ পর্যায়ে আইন-কানুন, কার্যনীতি ইত্যাদি বিষয়ে যে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে পরিস্কার ধারণা থাকা জরুরি যাতে তারা রপ্তানি ও আমদানিকারকদের বিষয়গুলো সঠিকভাবে বোঝাতে পারেন। এজন্য সকল স্টেকহোল্ডারদের সচেতনতা বাড়ানোর নিয়মিত উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। আন্ত:দেশীয় বাণিজ্য সহজিকরণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সুফল পাওয়ার জন্য সকল পক্ষের অংশগ্রহণে নিয়মিত সংলাপ আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।