বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের মডেল হতে চায় ঢাকা

ব্যবসা সহজিকরণে সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড যে পলিসি চর্চা করে বাংলাদেশও সেই পলিসি অনুসরণ করতে চায়। এই পলিসি অনুসরণ করলে দেশে আরো বিদেশি বিনিয়োগ হতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ। এসডিজি সমন্বয়ক বলেন, ডুইং বিজনেসে সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ড হলো পৃথিবী সেরা। আমরা সিঙ্গাপুর থেকে ডুইং বিজনেসের সেরা চর্চা সম্পর্কে জেনে বুঝে এসেছি, যা বাংলাদেশে আরো বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ-এফডিআই আনতে সহায়ক হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানিয়েছে তিনি। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সফরে কী অর্জন হয়েছে সে বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিডা। বিডার প্রতিনিধিদল গত ১ আগস্ট থেকে ৪ আগস্ট সিঙ্গাপুর সফর করে। সে সময় বাংলাদেশ-জাপান বিটুবি (বিটুবি) কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
সিঙ্গাপুর সফর নিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, মূলত জাপান ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার জন্য গত বছর জাপানের সেরা কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সাথে একটা প্রোগাম করার কথা ছিল। কিন্তু গুলশানের হলি আর্টিজানে দুঃখজনক ঘটনার পর সেটা আর করা সম্ভব হয়নি। এবার সিঙ্গাপুরে বসে সেই প্রোগাম করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সিঙ্গাপুরে ব্যবসা নিয়ে নানাভাবে পর্যালোচনা করেছি। আমরা দেখেছি কোম্পানির ফি নির্ধারণ করা হয় ফ্লাট রেট অনুসারে; যেখানে বাংলাদেশে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন অনুসারে করা হয়। আবার বাংলাদেশে কোনো কোম্পানি এজিএম করতে না পারলে হাইকোর্টের অনুমতি নিতে হয়। সেখানে আবার এমন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। আমরা ট্যাক্স, ডুইং বিজনেস এবং ব্যবসার অনূকুল পরিবেশ বিষয়গুলো সফলভাবে তুলে ধরেছি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র সভাপতি আবুল কাসেম খান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-সিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুরের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সেখানের ব্যবসায়ী এজেন্সি আমাদের কী দিতে পারে, আমরা কী দিতে পারি সে ব্যাপারে জাপানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। হলি আর্টিজান হামলায় জাপানিরা বেশি আতঙ্কিত হয়েছে। তাদের ফোকাস করে আমরা আলোচনা করেছি। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়েছ। তাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভীতি কেটে গেছে। আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক মাস আগে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন বিজনেস ফেডারেশনের (এসবিএফ) একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসে। সে সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। সে বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়। তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, সিঙ্গাপুর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিশ্বের তৃতীয়। বিশ্বব্যাংকের ‘ডুইং বিজনেস’ বা ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে তারা এক দুই এর মধ্যে থাকে। ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৭৬তম। আমরা পাঁচ বছরের মধ্যে এ সূচকে ১০০ দেশের মধ্যে উন্নীত হতে চাই। সাংবদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ইচ্ছে আছে, লক্ষ্য আছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়া। আমরা ব্যবসায়ীদের সেবা দেয়ার জন্য কাজ করছি। ব্যবসায়ীরা আমাদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করছেন। আমরা ক্রমেই অগ্রগতি করছি। কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, সব বিদেশি কোম্পানির স্টেশন হলো সিঙ্গাপুর। তাদের কোয়ালিটি শিক্ষাব্যবস্থা, তাদের অভিজ্ঞতা কীভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের শেয়ার মার্কেটও ভিজিট করেছি।
বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু বলেন, সিঙ্গাপুরে জাপানি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এটা ইফেক্টিভ আলোচনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে আসছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে করা কোম্পানি আইন আধুনিক করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আশিয়ানভুক্ত ৬টি দেশে জাপানের প্রতি বছরে বিনিয়োগ ২০ বিলিয়ন ডলার। ওইসব দেশে শ্রমিকের মজুরি ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে। যা নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। এই ২০ বিলিয়নের মধ্যে ১০ শতাংশ বা ২ বিলিয়ন বিনিয়োগ যদি আসে তবে অনেক বড় ব্যাপার হবে বাংলাদেশের জন্য। তিনি বলেন, আমরা সেখানে তাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ ভালো। বিশেষ করে হলি আর্টিজেন ঘটনার পর জাপানের ব্যবসায়ীদের যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল; তা কাটিয়ে ওঠার প্রথম ধাপ সফলভাবে আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির-(সিসিসিআইয়) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এ মাসের প্রথমে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের অন্যতম প্রধান সংগঠন সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের (এসবিএফ)সঙ্গে আমাদের মতবিনিময় হয়েছে। তারা বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের আগ্রহী। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাদের বিভিন্ন পলিসি তৈরি করার ক্ষেত্রে এনগেইজ করুন। গত ৪৫ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি হলেও প্রাইভেট সেক্টরে এখনো তেমন এগোয়নি।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, সিঙ্গাপুর দক্ষিণ এশিয়ার যে ২০টি দেশে বিনিয়োগের তালিকা করেছে তার মধ্য বাংলাদেশ ১৩ তম অবস্থানে আছে। যেটা আগে ২০ এর মধ্যে ছিল না। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেসনের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর সফরের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক শমী কায়সারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।