বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ৪৪তম শাহদাত বার্ষিকী আজ

আজ বুধবার (২৮অক্টোবর) বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে এক সম্মুখ সমরে মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হন এই বীর সেনানী। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেছে তাকে।
দিনটি উপলক্ষে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে উপজেলা প্রশাসন এবং মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। একই সাথে মহেশপুরে তার পরিবারের লোকজনও কোরানখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ।
দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সরকার তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ হামিদুর রহমানসহ ৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন এসব বীর সেনানীদের স্মৃতি রক্ষার্থে অতীতের সরকারগুলো ছিল অনেকটা উদাসীন। অবশ্য এই ৭ জনের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বিএনপি সরকারের ২০০১-০৬ মেয়াদের শেষ সময়ে কিছু উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই একাত্তরের এসব বীর শহীদের সমাধিস্থান সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে কমলগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। এছাড়া কমলগঞ্জের ভানুগাছ-মাধবপুর সড়কটির নামকরণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান সড়ক। এমনকি বিজিবি তৎকালীন বিডিআর ২০০৭ সালে ধলই বিওপির নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান সীমান্ত ফাঁড়ি করে। এছাড়া হামিদুর রহমানের গ্রামের নাম খার্দ্দো খালিশপুরের নাম পরিবর্তন করে হামিদনগর ও এলাকায় কলেজটির নাম বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের নামে করা হয়।
এছাড়া ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিজিবির উদ্যোগে ধলই সীমান্ত চৌকি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। এখানেই নির্মাণ করা হয় একটি বড় পুকুর, গাড়ি পার্কিং এরিয়া, টয়লেট, ওয়েটিং রুম, রিসোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, গলঘর। নির্মাণ করা হয় সীমান্ত স্মৃতিকুঞ্জ দু’তলা ঘর, সীমান্ত অবকাশ যাপন কেন্দ্র। যা পর্যটকদের জন্য এখন আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্রান্ত দলিলপত্র অনুযায়ী দেশ বিভাগের সময় সিপাহী হামিদুর রহমানের পৈত্রিক সম্পত্তি ভারতে পরায় তারা দেশমাতৃকার টানে এসব সম্পদ রেখে বিনিময় সূত্রে আসেন তৎকালীন যশোর জেলার মহেশপুরে। বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার খার্দ্দোখালিশপুর গ্রামে। এখানেই ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন হামিদুর রহমান। মাত্র ১৮ বছর এক দিন বয়সে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে (ইপিআর) একজন সিপাহী (নং-৩৯৪৩০১৪) হিসেবে দেশ সেবায় মনোনিবেশ করতে যোগ দেন ইপিআর’এ (বর্তমান বিজিবিতে)। ক’দিন যেতে না যেতেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। হামিদুর রহমান ৪ নম্বর সেক্টরে একজন যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। মৌলভীবাজার জেলার ধলই সীমান্তে ইপিআরের একটি চেকপোস্ট ছিল। এখানে ১২৫ জনের মত পাক সেনা অবস্থান করছিল। ২৮ অক্টোবর এই চেকপোস্টে আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। গ্রেনেড বহনের দায়িত্ব নেন হামিদুর রহমান নিজে। পাহাড়ি চ্যানেলে থেকে এই পোস্ট লক্ষ্য করে তিনি একের একের এক গ্রেনেড ছোড়ছিলেন। এক পর্যায়ে দু’টি গ্রেনেড লক্ষ্যবস্তুতে হানা দিলে চেকপোস্টটি ধ্বংস হয়ে যায়। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁড়িটি দখলে নেয়। কিন্তু দেখতে পায় সিপাহী হামিদুরের মরদেহ পড়ে আছে। কোন এক সময় শত্রু সেনাদের মেশিন গানের গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। সহযোদ্ধারা পরে তাকে সীমান্তের ওই পারে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে আমবাসা গ্রামে একটি মসজিদের পাশে নিয়ে দাফন করেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার দেহাবশেষ ভারত থেকে এনে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।