শিরোনাম

South east bank ad

আনন্দমোহন বসুর জন্মদিন আজ

 প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   জন্মদিন

আনন্দমোহন বসুর জন্মদিন আজ

রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক আনন্দমোহন বসু ১৮৪৭ সালের এ দিনে (২৩ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহ জেলার জয়সিদ্ধি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া ব্রাহ্মসমাজের পথপ্রদর্শক, ভারতীয় উপমহাদেশে ছাত্র রাজনীতির গোড়াপত্তনকারী, নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং উপমহাদেশের প্রথম ও একমাত্র ‘র‌্যাংলার’ হিসেবে তার আলাদা পরিচিত রয়েছে।

তার বাবা পদ্মলোচন বসু ছিলেন ময়মনসিংহ জজ আদালতের পেশকার। ১৮৬২ সালে আনন্দমোহন ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মেধা তালিকায় নবম স্থান অধিকার করে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। এফএ এবং বিএ পরীক্ষায় প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। পরীক্ষায় ধারাবাহিক কৃতিত্বের কারণে ১৮৭০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। এ বৃত্তির কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যাওয়া সহজ হয়। তিনি ক্যামব্রিজের ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে উচ্চতর গণিত নিয়ে পড়াশোনা করেন। অনার্সসহ ডিগ্রি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ করেন এবং প্রথম ভারতীয় র‌্যাংলার হন।

১৮৭৪ সালে আনন্দমোহন আইন ব্যবসা শুরু করেন। জীবনের প্রথম দিক থেকেই তিনি ধর্মপ্রাণ ছিলেন। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে ১৮৬৯ সালে ব্রাহ্ম ধর্মমত গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে কেশবচন্দ্র সেনের পরিচালনাধীন ব্রাহ্মসমাজ পরিচালিত ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন। ১৮৭৮ সালে নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মসমাজে ফাটল সৃষ্টি হয়। বিরোধের বিষয়গুলোর একটি ছিল কেশবচন্দ্র সেনের নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে কুচবিহারের রাজার নাবালক ছেলের বিয়ে। আনন্দমোহন ভিন্ন মতাবলম্বীদের নেতৃত্ব দেন এবং সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ নামে একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।

নতুন ব্রাহ্মসমাজের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এর কর্মকাণ্ড ব্যবস্থাপনা ও আন্দোলনকে এগিযে় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গডে় তোলেন। ১৩ বছর ধরে তিনি সভাপতি ছিলেন। এ সময়ে ব্রাহ্মসমাজের জন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে বিস্তৃত একটি পাকা চত্বরও (কমপ্লেক্স) ছিল। ব্রাহ্ম প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের শারীরিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণের জন্য ঘনিষ্ঠতম সহযোগী পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর সাহায্যে ‘স্টুডেন্টস উইকলি সার্ভিস’ নামে একটি নৈতিক শিক্ষা কোর্স চালু করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন এ বিষযে়র বক্তা।

রাজনীতির ক্ষেত্রে আনন্দমোহনের দুটি উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনিই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন, ঔপনিবেশিক পরিমণ্ডলে সমাজের সর্বাপেক্ষা সচেতন শ্রেণী ছাত্রসমাজকে অবশ্যই দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গঠনমূলক ভৃমিকা পালন করতে হবে এবং সে লক্ষ্যে তাদের নিজস্ব একটি সংগঠন থাকা উচিত। ১৮৭৫ সালে ‘ক্যালকাটা স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এর প্রথম সভাপতি হন। পরের বছর ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিযে়শন’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা। ১৮৮৩ সালে সংগঠনটি একটি জাতীয় আলোচনা সভা আহ্বান করে। পরে এটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে পরিণত হয়। তিনি এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৯৮ সালের মাদ্রাজ অধিবেশনে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।

সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে আনন্দমোহন বসুর বিশেষ অবদান রয়েছে। নারীশিক্ষা ও সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য সামাজিক কর্মসূচি প্রণয়ন করতে তিনি সকলকে উদাত্ত আহ্বান জানান। ১৮৭৬ সালে কলকাতায় ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি বিদ্যালয়টিকে বেথুন স্কুলের সঙ্গে একীভূত করেন। ১৮৭৯ সালে কলকাতায় সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তার ময়মনসিংহের বাড়িতে সিটি কলেজের একটি শাখা খোলেন, যা বর্তমানে আনন্দমোহন কলেজ নামে পরিচিত।

সফল শিক্ষাজীবন ও শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগের কারণে ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৮৮২ সালে ইন্ডিয়ান এডুকেশন কমিশনের (হান্টার কমিশন) সদস্য করে। এর পর একে একে বঙ্গীয় আইন সদস্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ‘ফেলো’ মনোনীত হন। তার চেষ্টায় ‘ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট অব ইনকরপোরেশন’ সংশোধন করা হয়। এতে এটি একটি পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থা থেকে পরীক্ষা গ্রহণকারী ও শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। ১৮৯২ সালের ভারত আইনের অধীনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গীয় আইন পরিষদে একজন সদস্য নির্বাচন করার অধিকার পায়। তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদে প্রথম প্রতিনিধি।

তিনি তীব্রভাবে বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতা করেন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গবিরোধী এক সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং রোগশয্যা থেকে বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেন।

বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর বোন স্বর্ণপ্রভা বসু ছিলেন তার স্ত্রী।

১৯০৬ সালের ২০ আগস্ট আনন্দমোহন বসু মারা যান।

BBS cable ad

জন্মদিন এর আরও খবর: