গারো কিশোরী ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
মো. নজরুল ইসলাম, (ময়মনসসিংহ):
সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাটে দুই গারো কিশোরীকে গণধর্ষণের ১০ আসামী গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে গতকাল ময়মনসিংহের ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গারো দুই কিশোরীকে গণধর্ষণের মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার আসামিরা হল- শরিফ, মিয়া হোসেন, মিজান, রোকন ও হামিদ। শুক্রবার (০৭ জানুয়ারি) রাতে গাজীপুর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও তারাকান্দায় অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি চারজন ও আরেকজন সন্দেহভাজন। শনিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান।
পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, ঘটনার পর যখন জানতে পারি তখনই কিন্তু আমরা ভুক্তভোগী পরিবারকে অভিযোগ দায়ের করতে বলি। পরে তারা মামলা করেন। সুতরাং প্রথম অবস্থায় মামলা রেকর্ড করতেই কয়েকদিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। এই দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে অভিযুক্তরা গা-ঢাকা দেয়।
তবে থানা পুলিশের সহযোগিতায় ডিবির একটি চৌকস দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত চার আসামি ও এক সন্দেহভাজনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। পলাতক থাকা বাকি আসামিদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান।
এদিকে, প্রযুক্তিগত সহায়তায় এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত সোলায়মান হোসেন রিয়াদকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
হালুয়াঘাাটে দুই গারো কিশোরী গণধর্ষণের ১০ আসামী গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে ফিরোজ জাহাঙ্গীর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের আদিবাসী সংগঠনসমূহের ঐক্য পরিষদ (ইউসিজিএম)-এর মহাসচিব ও আদিবাসী নেতা লেখক ও গবেষক অরন্য ই. চিরান।
এসময় বক্তারা বলেন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ খ্রি. তারিখ ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ডুমনিকুড়া গ্রামের তিন কিশোরী স্কুল ছাত্রী পার্শ্ববর্তী কাটাবাড়ি গ্রামে এক আত্মিয়ের বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য যায়। অনুষ্ঠান শেষে মধ্যরাতের পর তিনজন কিশোরী তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যান, যাওয়ার পথে ঐ রাস্তায় ওৎ পেতে থাকা কচুয়াকুড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান মেম্বারের বখাতে ছেলে রিয়াদ (২২) এবং তার ৯ জন বন্ধু শরীফ (২০), মিয়া হোসেন (২০), রমজান আলী (২১), কাউছার (২১), আছাদুল (১৯), শরিফুল ইসলাম (২১), মিজান (২২), রুকন (২১) এবং মামুন (২০) দুইজনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায়।
এদিকে পাঁচজন আসামীকে গত শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে । বাকি পাঁচজনকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উক্ত সমাবেশে বক্তারা বাকি আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার, আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভিকটিমদের নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি মনিরা বেগম অনু, গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনসনের প্রতিনিধি শ্যাম আতিওয়ারা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি বাহাউদ্দিন শুভ, সারা সংস্থার ফিনান্স অফিসার রফিকুল আজাদ, বাংলাদেশ লিগাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর সমন্বয়কারী এড. মো: আবুল কাসেম (মুছা), লিগাল এসিষ্টেন্ট ফর ভার্নারাবল সোসাইটির সভাপতি অঞ্জন সরকার, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (টিডব্লিউএ) ঢাকা মহানগর উত্তরা থানা শাখার চেয়ারম্যান প্রসাদ চাম্বুগং, নারী যোগাযোগ কেন্দ্রের সমন্বয়কারী সুলতানা রাজিয়া অপি, আদিবাসী নেতা গ্রেনার মারাক, দিনাজপুর বাংলাদেশ খ্রিস্টান মহাজোট সংগঠনের সভাপতি সুমা রোজারিও, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর হাজং প্রমুখ।
সভাপতি তাঁর শেষ বক্তব্যে ৫জনকে গ্রেফতার করার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাকি আসামীদেরও দ্রুত গ্রেফতার এবং দ্রুত ভিকটিমদের মেডিকেল টেস্ট করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শান্তি মিত্র সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সুবর্ণা পলি দ্রং।