বগুড়ায় ইউপি নির্বাচনে বিতর্কিতরাই পেলেন আ. লীগের মনোনয়ন
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার দুটি উপজেলার ২০ ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম দফার নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বেশকিছু বিতর্কিত প্রার্থী। কারো বিরুদ্ধে হত্যা, কারো বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার অর্থ আত্মসাৎ, কারো বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কাটা ছাড়াও মাদক, হাইব্রিড, বিরোধী দলের সঙ্গে ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ওই দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তৃণমূল থেকে নামের যে প্রস্তাব তারা পেয়েছেন সেটিই কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেই তালিকা থেকেই মনোনয়ন পেয়েছেন সকলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ১১ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টিতে এবং শেরপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৭ অক্টোবর নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এসব ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করে। এরমধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের মধ্যে বিহার ইউনিয়নের প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুবলীগ কর্মী ওমর ফারুক, আওযামী লীগ কর্মী শিমুল হত্যাসহ তিনটি হত্যা মামলা এবং একটি চাঁদাবাজির মামলা রযেছে। এরমধ্যে একটি মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। ময়দানহাটা ইউনিয়নের এসএম রূপম এখনও ওই ইউনিয়নের চেযারম্যান। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তাঁকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি উচ্চ আদালতে আপীল করে সেই আদেশ স্থগিত করেন। রায়নগর ইউনিয়নে শাহজাহান কাজী স্থানীয় বাগমারা মাদ্রাসায় পরিচালনা কমিটির সভাপতি থাকা কালে সেই মাদ্রাসার গাছ চুরির অপরাধে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। বুড়িগঞ্জের রেজাউল করিম চঞ্চলকে ২০০৭ সালে র্যাব বিশেষ ক্ষমতা আইনে (ফেন্সিডিল পাচার) গ্রেফতার করে। মাঝিহট্ট ইউনিয়নের আব্দুল গফুর মন্ডল দীর্ঘদিন বিদেশ ছিলেন। দেশে ফিরেই তিনি হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা, এরপর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাঁকে সভাপতি ঘোষণা করা হলে আদালতে বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়। সেই মামলা এখনও চলমান।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা নয়। তবে, দলের তৃণমূল থেকে তিনজন করে প্রার্থীর যে তালিকা পাঠানো হয়, সেটিই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিলো। সেই তালিকা থেকেই এসব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের শেখ মোহাম্মদ জুলফিকার আলীর বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের সবুজ নামের এক যুবকের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ওই টাকার বিপরীতে চেক প্রদান করলেও টাকা পায়নি সবুজ, ফলে আদালতে তিনি মামলা করেন। শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের আবু তালেব আকন্দ জাতীয় পার্টি ও বিএনপি হয়ে এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। খামারকান্দি আব্দুল মোমিন এক সময় ছিলেন ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। মির্জাপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী মন্টু বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদর আসনের সাংসদ জি এম সিরাজের মালিকানাধীন এস আর গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে এখনও কাজ করেন।
এসব বিষয়ে শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সকল প্রার্থীর অতীত রেকর্ড দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কারণ মাঠ পর্যায়ের নেতারাই তাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। হয়তো কারো বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকতে পারে, তবে অন্যান্য উপজেলার মতো সেসব গুরুতর অভিযোগ নয় বলে দাবি করেন তিনি।