শিরোনাম

South east bank ad

প্রভাবশালীদের মদদে পরিবহনে চাঁদাবাজি

 প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মো. রাকিব হোসাইন রনি, (লক্ষ্মীপুর) :

লক্ষ্মীপুরে-রায়পুরে পরিবহন খাতে প্রতি মাসে অর্ধ-কোটি টাকা চাঁদা (জিপি) উত্তোলন করা হচ্ছে। বাস, ট্রাক, টেম্পো, মাইক্রো বাস, সিএনজি ও অটোরিকশা ও ট্রলির ৫টি স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।এ চাঁদার ভাগ যায় বড় নেতা, পাতিনেতা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। মাঝে মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হঠাৎ ধরপাকর হলেও আবারও শুরু হয় জিপির নামে চাঁদা উত্তোলন। পরিবহন মালিক ও চালকদের অভিযোগ, প্রতিটি বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতির নামে বিভিন্ন সংগঠন।

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রায়পুর উপজেলা আইন-শৃংখলা মাসিক সভায় পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ উত্তাপন হয়। এতে রায়পুরের সাংসদ এডঃ নুর উদ্দিন চৌধুরি নয়নের নির্দেশনায় ওসি অভিযান চালিয়ে চাঁদপুরের প্রায় ৩৫টি অনটেষ্ট সিএনজি আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত।

সিএনজি চালক ও বাস মালিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিটি স্ট্যান্ডকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ নামধারীরা স্বঘোষিত মালিক ও শ্রমিক নেতা সেজে কমিটি গঠন করে রেখেছেন। প্রতিটি স্ট্যান্ডে রয়েছে তাদের লাইনম্যান। এরা নির্ধারিত হারে বাস,ট্রাক, মাইক্রো, ট্রলি, সিএনজি ও অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায় করে থাকেন। চাঁদা পরিশোধ না করে কারও পক্ষে স্ট্যান্ড ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। চাঁদা পরিশোধ করা না হলে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। চাঁদপুরের ১২৮ টি সিএনজি থেকে মাসে ৩০০ ও ৭৩টি সিএনজি থেকে ২০০ টাকা করে আদায় হয়। এতে চালকরা রায়পুরের বাসাবাড়ি বাজার থেকে শুরু করে সরকারি হাসপাতাল, বাসটার্মিনাল, ট্রাফিকমোড়, সাব-রেজিষ্টার মসজিদের সামনেসহ যেখানে-সেখানে দাড়িয়ে যাত্রী নিতে পারেন। রাতে এরা দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর- রায়পুরের সিএনজি চাঁদপুরে ঢুকলেই মাসে ৫'শ টাকা করে ট্রাফিক সার্জেনকে দিতে হয়।

রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাটের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে বৈধ ইজারার মাধ্যমে তিন স্ট্যান্ড থেকে টাকা তোলা হচ্ছে বলে জানান। এ টাকা পৌরসভার উন্নয়নে খরচ করা হয়। চলতি জুন-২০ইং মাসে নতুন করে ইজারা হয়।

রায়পুর পরিবহন সেক্টরের খোঁজ-খবর রাখেন এমন লোকজন জানান, বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। পরিবহন চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে দেখা দিয়েছে সিএনজি অটোরিকশা। রায়পুর থেকে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও চৌমুহনী সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ৮২ টি আনন্দ পরিবহন প্রতিদিন গাড়ী প্রতি রায়পুরে ১১৫ টাকাসহ ৬৩৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। রায়পুর থেকে চট্রগ্রাম সড়কে ৪৭টি ও ঢাকা সড়কে ৪০ জোনাকি পরিবহন এবং ৫০টি শাহী পরিবহন গাড়ি প্রতি ২০ টাকা ও ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। রায়পুর থেকে ঢাকা সড়কে চলাচলকারি ৩০টি ঢাকা এক্সপ্রেস বাস থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। রায়পুর থেকে কুমিল্লা সড়কে ১০টি বোগদাদ পরিবহনকে গাড়ি প্রতি ৯০ টাকা করে দিতে হয়। প্রায় ১২০টি মাইক্রো গাড়ীকে গাড়ি প্রতি চাঁদপুরে ৮০০ ও লক্ষ্মীপুরে ট্রাফিক বিভাগকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। রায়পুর ট্রাক ষ্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারি প্রায় ২ শতাধিক পন্যবাহী ট্রাককে গাড়ি প্রতি ৭০/১২০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। ছোট-বড় পন্যবাহী থেকে পৌরসভা কর্তৃক নির্ধারিত ১০/১৫ টাকা হারে নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও ইজারাদার ওহীদ উল্লাহ তার ৬ জন লাইনম্যানের মাধ্যমে ৪০,৭০ ও ১২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন।

লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইন্জিন) অনুজ চন্দ বলেন, জেলায় সিএনজি আটোরিকশার লাইসেন্স আছে ৭ হাজার ২’শটি। হাজার-হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে থাকে স্ট্যান্ড কমিটিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে। প্রতি মাসেই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে আদালত পরিচালনা হয়ে থাকে। কোন চালক বা লোককে লাইসেন্স পেতে হয়রানি করা হয় না বলে দাবি ।

রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের সিএনজি স্ট্যান্ডে কথা হয় সিএনজি চালক রহমত ও নূর ইসলামের সঙ্গে। তারা দুঃখের সঙ্গে বলেন, রুটে চলাচল করতে তাদের ভর্তি হিসেবে তিন-চার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। গাড়ি চালাতে দিতে হয় প্রতিদিন ৩০ টাকা। চাঁদপুর রুটের তারেক হোসেন ও মনোয়ার জানান, তারা লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত করে রেখেছেন। কিন্তু বিআরটিএ লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে। এখন প্রতি মাসে ৩০০ টাকা পরিশোধ করে স্ট্যান্ড থেকে টোকেন নিতে হয়। রাস্তায় পুলিশকে স্ট্যান্ডের টোকেন দেখিয়ে চলাচল করতে হয়। টোকেন দেখাতে না পারলে গাড়ি আটক হয়ে যায়। মামলা করা হয়।

রায়পুর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে, প্রতিদিন শহরের থানার কর্নারে, বাসটার্মিনাল, সাবেক শহীদ মিনারের সামনে,মধ্যবাজারের মোড়ে এসব বাস, সিএনজি,অটো, ট্রাক ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। তবে করোনায় কয়েকটি স্পটে ১০, ৭০, ১২০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়াও ১০টি ইউনিয়নের গুরুত্বপুর্ণ স্থানে এসব ষ্টান্ড রয়েছে।

পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেলার অন্যতম ব্যাস্ত রায়পুর-চাঁদপুর-কুমিল্লা, নোয়াখালি, রামগন্জ সড়কের রায়পুর বাসস্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ আহব্বায়ক তানভির হায়দার চৌধুরী রিংকু, আ'লীগ কর্মী জুম্মান সুলতান ও আ’লীগ কর্মী মোঃ ডালিম, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম লিটন, আবুল কাশেম দেওয়ান, মোঃ বাবুল প্রমুখ। প্রায় ৫ বছর আগে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকের নামে ৫০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হতো।গ্রুপিংয়ের কারনে তা বন্ধ হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ দেশে করোনার আগে বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তবে করোনায় সময়ে তা বন্ধ রয়েছে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা না হলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না। বরং পরবর্তী সরকারের আমলে আরও বৃদ্ধি পাবে।

রায়পুর থানার ওসি আবদুল জলিল জানান, সড়কে পরিবহন থেকে চাঁদা উত্তোলনের বিষয়ে পুলিশ সুপার স্যার সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে সতর্ক করেছিলেন। পরিবহন মালিকরা অভিযোগ করলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রতিমাসে ট্রাফিক বিভাগের নামে সিএনজি থেকে ৫ হাজার টাকা করে উত্তোলনের কথা শুনেছি। কোন চালক বা ব্যাক্তি অভিযোগ করেননি। সোমবার উপজেলা আইনশৃংখলা সভায় চাঁদপুরের সকল সিএনজি রায়পুরে ঢুকতে পারবে না এনির্দেশনায় বিশেষ অভিযানে মঙ্গলবার ৪০ সিএনজি আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক তানভীর হায়দার চৌধুরী বলেন, স্ট্যান্ডে কোন চাঁদাবাজি হয় না। রায়পুর পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে ১০ ও ২০ টাকা করে জিপি উত্তোলন করছি। রায়পুর-হায়দরগন্জ ও আলোনিয়া সড়ক নিয়ন্ত্রনকারি স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা তানভির হায়দার চৌধুরী বলেন, ইজারা নিয়ে অটোরিকসা ও সিএনজি থেকে ১০ টাকা করে উত্তোলন করছি। রায়পুর-চাঁদপুর- রামগন্জ-মীরগন্জ ও গাজিনগর সড়ক নিয়ন্ত্রকারি মোঃ ডালিম একই বক্তব্য দিয়েছেন।

রায়পুর আনন্দ পরিবহনের মালিকদের সমন্বয়কারী শিপন ভুঁইয়া মোবাইলে বলেন, ৮২টির মধ্যে ৭০ পরিবহন চাঁদপুর-রায়পুর-লক্ষ্মীপুর ও চৌমহনী সড়কে চলাচল করছে। প্রায় ৮ মাস আগে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজন লাইনম্যানকে আটক করে জেলে পাঠিয়েছিলো। অনিয়মতান্ত্রীকভাবে দায়িত্ব নেয়া শ্রমিকলীগ নেতা ভুট্রু ও খোকন তাদের দ্বায়ীত্ব ছেড়ে দেয়। এ চাঁদার টাকা রায়পুর পৌরসভা, মসজিদের চাঁদা, শ্রমিকদের মেয়েদের বিয়ে ও সংগঠনের নামে মামলার খরচে ব্যা হচ্ছে। তাছাড়া এ পরিবহনের সকল কিছুই লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের ও আ’লীগ নেতা শাহজাহান হাজী পরিচালনা করছেন।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: