বাগেরহাটে খুশি শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা
বাগেরহাট প্রতিনিধি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর রবিবার বাগেরহাটের দেড় সহ¯্রাধিক স্কুল খুলেছে। জেলার সব স্কুলগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে করা হয়েছে সুসজ্জ্বিত। স্কুলগুলোর গেটে তোরণ তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দারুণ খুশি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
রবিববার সকালে স্কুল খোলার প্রথম দিনে বাগেরহাট শহরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে সকাল আটটায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে মুখে মাস্ক পরে স্কুল গেটে আসলে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক শিশুর শরীরের তাপমাত্রা মেপে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করায়। পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসে শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে বসে। জেলার সকল স্কুলে সকাল দশটা থেকে ক্লাস শুরু করে কর্তৃপক্ষ। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে পঞ্চম শ্রেণি, ২০২১ ও ২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও নতুন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস হবে। আর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ্য, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির সপ্তাহে একদিন ক্লাস করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণির প্রতিদিন ক্লাস হবে। আর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সপ্তাহে একদিন ক্লাস হবে। তবে প্রাথমিকের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আপাতত স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে।
প্রধমদিনে শিক্ষার্থীদের মুখে মাস্ক পড়ে স্কুলে ঢুকতে দেখা গেছে। একটি ব্যাঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থীকে বসতে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দারুণ খুশি। শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলে আসতে পেরে ভালই লাগছে। শুধু বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয় নয়, জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি ছিল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়াও সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শণ করেছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে ১১৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক লক্ষ ৯৩ হাজার ৫০৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮৮ হাজার শিক্ষার্থী, ১৬৪টি মাদরাসায় ৩০ হাজার ৬৪৮ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর বাইরে ৩৪টি স্নাতক পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং ১৩৪টি কিন্ডার গার্টেনে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন পাল বলেন, করোনা সংক্রমণের কারনে স্কুল বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি অবস্থায় ছিল। দীর্ঘ দেড় বছর পর স্কুল খুলেছে। স্কুলের পাঠদানের পরিবেশ তৈরি করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে প্রবেশের সময়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে, ক্লাসে বড় বেঞ্চে দুইজন করে শিক্ষার্থীদের বসানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। খোলার প্রথম দিনে চতুর্থ, পঞ্চম, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পাঠদান দেয়া হচ্ছে। আর বাকি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস করবে।
বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করেছি। সকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শণ করেছি। সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করছেন। পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।