কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌছেছে নির্বাচনি সরঞ্জাম, ঝালকাঠি পৌরসভা ও ৩১ ইউনিয়নে ভোট কাল
মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):
ঝালকাঠি পৌরসভা ও জেলার ৩১ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল সোমবার। আজ রবিবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনি সরঞ্জাম। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্রে আনসার ও পুলিশ সদস্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।
নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ভোটের প্রচার শেষ হয়েছে। প্রচারের শেষ মুহূর্তের কিছু ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে, জানান দিয়েছে শঙ্কার কথাও।
সোমবার অনুষ্ঠিতব্য ভোট নিয়ে সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার কথা বিবেচনায় রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ব্যাপারে পৌরসভা নির্বচনের রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন জানান, আমরা সতর্ক। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে যা যা করার সবই করা হবে।’
সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঝালকাঠি পৌর সভা ও ৫টি ইউনিয়নে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)পদ্ধতিতে এবং ২৬টি ইউনিয়নে ব্যালটে ভোটগ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে ভোটগ্রহণের জন্য অধিকাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সুত্র জানায়, ‘সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে আরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।’
এই নির্বাচন নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে যেমন উত্তেজনা রয়েছে, তেমনি শঙ্কাও বিদ্যমান। এই ঘটনা ভোটের মাঠের পরিবেশ নিয়ে আরো শঙ্কা বাড়িয়েছে। ফলে সেখানে নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
এ নির্বাচনে দুটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব প্রতীক নিয়ে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছে। তবে ভোটের আগেই তিন ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
৪উপজেলার ৩২ ইউনিয়ন নিয়ে জেলা গঠিত হলেও ২বছর আগে অনুষ্ঠিত হওয়া সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হয়নি। একারনে পোনাবালিয়া বাদে জেলার ৩১ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঝালকাঠি জেলা নির্বাচন অফিসার অহিদুজ্জামান মুন্সি জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচনি এলাকাগুলোতে বিজিবি, পুলিশ, আনসার ছাড়াও থাকছেন মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্য।
নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ট্রাক ও পিকআপ চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। তবে জরুরি প্রয়োজনের গাড়ি এবং হাইওয়ে নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
জেলা নির্বাচন অফিস সুত্র আরো জানায়, ঝালকাঠি পৌরসভা ও জেলার ৩১টি ইউনিয়নে আগামী ২১জুন সোমবারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রিদ্বন্দ্বিতা করছেন পৌর মেয়র পদে ৩জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে পৌর এলাকায় ১৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩১জন এবং ইউপি চেয়ারম্যান পদে ১০১জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৩০৭জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৯৯৯জন। ৩১৩টি কেন্দ্রের ১৫০২টি কক্ষে এ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ৪লাখ ৭৩ হাজার ৬৪০জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ৩১৩টি কেন্দ্রে ৩১৩জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৫০২টি কক্ষে ১৫০২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৩হাজার ৪জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। ঝালকাঠি সদর থানার ওসি খলিলুর রহমান জানান, পৌর এলাকার মধ্যে ঝুকিপুর্ণ কেন্দ্র রয়েছে ১নং ওয়ার্ডের সরকারী কলেজ, বিকনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৩নং ওয়ার্ডের জেলা পরিষদ, ৬নং বাসন্ডা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছানীল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭নং ওয়ার্ডের কিফাইতনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯নং ওয়ার্ডের মসজিদ বাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (সিটি পার্ক), কলাবাগান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রকেই গুরুত্বপুর্ণ ধরে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ঝালকাঠি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকে বর্তমান মেয়র ও পৌর আ'লীগ সভাপতি লিয়াকত আলী তালুকদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র আফজাল হোসেন নারিকেল গাছ প্রতিকে ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতিকে হাবিবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ৬টি ওয়ার্ডে ৩১জনে এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৬জনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌর এলাকায় ২২টি ভোটকেন্দ্রে ১৩১ কক্ষে ২২জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৩১জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ২৬২জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। পৌর এলাকায় ৩৯হাজার ৬৩৬ জন ভোটারের মধ্যে ১৯হাজার ৪৭৬জন পুরুষ ও ২০হাজার ১৬০ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
অপরদিকে জেলার ৩১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। এতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২০জনে। সংরক্ষিত সদস্য পদে ৪৯ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১৫৫ জনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৪৮টি ভোটকেন্দ্রের ২৪০টি কক্ষে ৪৮জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২৪০জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ৪৮০জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ৫টি ইউনিয়নে ৭৪হাজার ৮২৯জন ভোটারের মধ্যে ৩৮হাজার ১৮৪ জন পুরুষ ও ৩৬হাজার ৬৪৫জন নারী ভোটার রয়েছেন।
এনালগ পদ্ধতির ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৬টি ইউনিয়নে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮১জনে। সংরক্ষিত সদস্য পদে ২৫৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৮৪৪ জনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৪৩টি ভোটকেন্দ্রের ১১৩১টি কক্ষে ২৪৩জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১১৩১জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ২২৬২জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ২৬টি ইউনিয়নে ৩লাখ ৫৯হাজার ১৭৫জন ভোটারের মধ্যে ১লাখ ৮২হাজার ৭৫৩জন পুরুষ ও ১লাখ ৭৬হাজার ৪২২জন নারী ভোটার রয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রকে চিহ্নিত করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। জয়ে শতভাগ আশাবাদী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের দাবি, তাদের দলীয় ভোটের উপর নির্ভর ছাড়াও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে সাধারণ মানুষ তাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
ঝালকাঠি পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অহিদুজ্জামান মুন্সি জানান, ২১জুন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে। যাতে জনসাধারণ নির্বিঘ্নে ও নির্দ্বিধায় ভোট দিতে পারেন। তারা আরো জানান, নির্বাচনকালী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও RAB মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ভুমিকা পালন করবে।