কংস নদের ভাঙনে ঘরবাড়ি নদীগর্ভে হুমকিতে সড়ক
এইচ. এম জোবায়ের হোসাইন:
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার ফকিরের বাজার এলাকায় কংস নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চারটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর। হুমকির মুখে রয়েছে আরও কয়েকটি গ্রাম। ভেঙে যাচ্ছে জেলা শহর থেকে ফকিরের বাজার পর্যন্ত চলাচলের একমাত্র সড়কটিও। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড মাটির বস্তা ফেলে সড়ক রক্ষার চেষ্টা করে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলার বারহাট্টার ফকিরের বাজার এলাকার কর্ণুপুর, চরপাড়া, পাঁচপাই ও বাঘরুয়াসহ কয়েকটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর চলে গেছে নদী গর্ভে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও পাঁচটি গ্রামের শতশত বাড়িঘর। হুমকির মুখে রয়েছে ঠাকুরাকোনা ফকিরের বাজার সড়কের চরপাড়া এলাকায় আধা কিলোমিটার অংশ। নদীর ভাঙনে আতংকে রয়েছে নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।
ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বাঘরুয়া গ্রামের ইমরান শাহ্ ফকির বলেন, কংস নদীর ভাঙনে আমাদের গ্রামের অনেক বাড়ি ঘর, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফসল রক্ষা বাঁধ ও গ্রামের কবরস্থান, মসজিদ হুমকির মূখে রয়েছে। এরই মধ্যে আবাদি জমি, জঙ্গল ও অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর সড়ক ও বাঁধ রক্ষায় কিছু বস্তা ফেলা হয়েছিল। আমাদের দাবি ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন।
চরপাড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক তালুকদার জানান, কয়েক বছর ধরে কংস নদের ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চরপাড়া-কর্ণপুর দুই গ্রাম মিলে পাঁচশতাধিক ঘর নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। মানুষজন বসতভিটা হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে ঠাকুরাকোনা- ফকিরের বাজার সড়কটিও। সড়কটিসহ ওই দুই গ্রামে নদীর তীরে স্থায়ী বাঁধ না দিলে আরও কয়েক হাজার ঘর হুমকির মূখে রয়েছে।
কর্ণপুর গ্রামের পংকজ মজুমদার জানান, আমরা কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের বাড়ি জমি সব কিছু নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। গতবছর সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি সরেজমিনে এসে এলাকা ঘুওে দেখে গেছেন। ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে দ্রুত স্থায়ী বাঁধের আশ্বস দেন।
কর্ণপুর গ্রামের বসতবাড়ি হারানোর সাহেব উদ্দিন, আবদুল মন্নাফ, স্বপন সরকার, সত্যেন্দ্র বর্মণ, সবুর মিয়া ও সেলিম মিয়াসহ অনেকেই জানান, এরিমধ্যে বাড়িঘর সব নদী গর্ভে চলে গেছে। অন্যের বাড়িঘরে আশ্রিত আছেন তারা। নিজের বাড়িঘর বাপের আমলের বাড়ি সব আজ কংস নদীতে বিলীন হয়েছে। শুধু বাড়িঘরই নয় ফসলি জমিও চলে গেছে নদী গর্ভে।
বারহাট্টার রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু জানান, কর্ণপুর চরপাড়া, ফকিরের বাজারসহ অন্তত চারটি গ্রামের অনেক পরিবার বসত ভিটা হারিয়েছে। শতশত একর ফসলি জমি চলে গেছে নদী গর্ভে। চোখের সামনে বাড়িঘরসহ ফসলি জমি নদীতে চলে যায়। গ্রাম রক্ষা বাঁধ সহ সড়কটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কোন কাজ হয়নি।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, নদীর ভাঙন টেকানো এবং সড়কটি রক্ষার জন্য গত বছর কিছু কাজ করা হয়েছিল। এবারও নদী ভাঙন রোধের জন্য কাজ করা হবে।