ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় বাঁধ ভেঙ্গে গ্রাম প্লাবিত তলিয়ে গেছে মাছের ঘেল ও ফসলের ক্ষেত
মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঠালিয়ার ভেরী ভেঙ্গে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। জেলার নিম্মাঞ্চলে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত।ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে শতাধিক মাছ চাষী ও কয়েকশত কৃষক। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ফুট বাড়তি ছিলো। জেলার কাঠালিয়া উপজলা পরিষদ ও কাঠালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বিষখালী তীরের বাঁধের একটা অংশ ভেঙ্গে পানি ঢুকে বাড়ির আঙ্গিনাসহ তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। এতে আতংকে রয়েছেন বাঁধ ভাঙ্গনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে কাঠালিয়া সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বড় কাঠালিয়া, পূর্ব কচুয়া, লতাবুনিয়া, রঘুয়ার দড়ির চর, সোনার বাংলা, আওরাবুনিয়া, জাঙ্গালিয়া, ছিটকী ও আমুয়া, ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি, নতুন কলাবাগান, পৌরসভা খোয়াঘাট এলাকা, রাজাপুরের বাদুরতলা লঞ্চঘাট, নাপিতের হাট, চল্লিশ কাহনিয়া এলাকাসহ সুগন্ধা-বিষখালী নদী তীরবর্তী নিন্মাঞ্চলের প্রায় ৪৫টির অধিক গ্রামে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে অধিক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সকাল থেকেই থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাস বাড়রা সাথে সাথে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিষখালী নদী পাড়ের (বাঁধ ভাঙ্গন) বাসিন্দা আঃ রব খান জানান, ঝড়-বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসলে আমারা খুবই আতংকে থাকি। বিশেষ করে মঙ্গলবার রাতে আতঙ্কিত হয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে থাকি। কখন বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে নদীতে চলে যায়। হঠাৎ করে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যেভাবে পানি উঠতেছে এতে খুবই বিপদে আছি।
কলেজ শিক্ষার্থী মোঃ জহিরুল লিমন জানায়, বহু বছর ধরে লঞ্চঘাট এলাকা ভেঙ্গে নদী বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর লঞ্চলঘাটের ৩শ মিটার এলাকায় বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের উত্তর সাইডে কিছুই ফেলানো হয়নি। পানির স্রোতের চাপে প্রতিদিন নদী ভাঙ্গছে।বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে আমাদের এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। রাতে পানি আরো বাড়বে। আমারা সবাই আতংকে আছি। তাই দ্রুত এ বাঁধটি মেরামত করা জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানাই।
কাঠালিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান জানান, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। কোথাও কোন সমস্যা নেই। তবে উপজেলা পরিষদের পিছনের বিষখালী তীরের বাঁধের কিছু অংশ ভেঙ্গেছে। কিন্তু তেমন কোন ক্ষতির আশংকা নেই। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় উপজেলায় একটি কন্ট্রোল রুম, ৬টি মেডিক্যাল টিমসহ প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ৬৩টি কমিটির সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা পযায়ে ৪টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৫৯টি সাইক্লোন সেল্টার খুলে দেয়া ও ৪৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়েছে। ৩৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা, তৃণমূল পর্যায়ে মাইকিং করা, স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জোহর আলী জানান, ঝালকাঠিতে ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে কন্ট্রোলরুম, ৪৯৯টি আশ্রয় কেন্দ্র, ৩৭টি মেডিকেল টিম, ১কোটি ১৩লক্ষাধিক টাকা ও ২শ টন চাল মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার মজুদ আছে।