একজন মুসলিমের বিদায়ী বছরের পর্যালোচনা যেমন হওয়া উচিত
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
একটি বর্ষের বিদায় মানে নতুন দিনের আগমন। নববর্ষের সূচনা মানে প্রেরণার ডালি ছড়িয়ে নতুন দিনের হাতছানি। সময়ের পালাবদলে আমাদের জীবনের ক্যালেণ্ডার থেকে আবারও বিদায় নিয়েছে বেদনা-বিধুর একটি বর্ষ- ২০২১ সাল।
নববর্ষ মানেই নতুন প্রেরণা, নতুন স্বপ্নের আশাজাগানিয়া পথচলার শিহরিত ভাবনা। সচেতন ব্যক্তিরা নববর্ষকে স্বাগত জানায় নতুন স্বপ্নের প্রত্যাশায় বিভোর হয়ে। নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের উদগ্র বাসনায়। তবে, নতুন বছরের স্বপ্নপূরণে প্রয়োজন বিগত বছরের সঠিক মূল্যায়ন। ফেলে আসা দিনগুলোর হালখাতা মেলানো।
একজন মুসলিম হিসেবে গত এক বছর আমার কী করার ছিল, কী করেছি; কতটুকু আমল করা দায়িত্ব ছিল, কতটুকু করতে পেরেছি- ইত্যাদি হিসাব মেলাতে হবে অতীত জীবনের ডায়েরি খুলে। জীবনের ডায়েরিতে ধরা পড়বে অসংখ্য ভুল। প্রভুর দরবারে সেসব ভুলের ক্ষমাপ্রার্থনা করা বর্ষবিদায়ের প্রথম কাজ।
হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের আত্মার হিসাব নাও নিজেদের হিসাব দেওয়ার আগে, তাকে ওজন করো নিজেদের ওজন দেওয়ার আগে।’
একজন মুমিনের প্রথম পরিকল্পনা হওয়া চাই ‘আমল’ বিষয়ে। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে আমার নামাজ, রোজাসহ ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো কীভাবে পালন করব, দৈনন্দিন কতটুকু কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি, নফল নামাজ কত রাকাত পড়তে পারি, নফল রোজা কয়টা রাখতে পারি, পরোপকার কীভাবে করতে পারি, দান-সদকা কীভাবে বাড়াতে পারি ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা করা।
একই সঙ্গে নিজে বদঅভ্যাসগুলো ছাড়ার পরিকল্পনাও করা চাই। মিথ্যা বলা, গিবত করা, অন্যের ক্ষতি করা, দুর্নীতি করা ইত্যাদি থেকেও যেন আগামী এক বছর বেঁচে থাকতে পারি- সে অনুযায়ী ভাবনা স্থির করা। সর্বোপরি চিন্তা করা এই বছর যেমনই কেটেছে- আগামী বছর যেন আমার আমলের খাতা নেকের দ্বারা আরও উজ্জ্বল হয়, আরও সমৃদ্ধ হয়। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সময়ের যথাযথ গুরুত্ব ও মূল্যায়ন করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো, আগামী দিনের জন্য মানুষ কী পেশ করেছে, সে যেন তা দেখে নেয়। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমরা যা করছ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।’ (সুরা হাশর : আয়াত ১৮)
বিগত বছরে আমর কী কী ব্যর্থতা ছিল, নতুন বছরে এসব ব্যর্থতা কীভাবে দূর করা যাবে, নতুন বছর ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য কী করতে পারি, প্রতিটি সময় সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারব কি না, একজন মুসলিম ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে প্রতিটি মুহূর্ত আমার কাছে কী দাবি রাখে- এসব নিয়ে পরিকল্পনায় বসা দ্বিতীয় কাজ। যদিও মুমিনের আত্মপর্যালোচনা কেবল বর্ষকেন্দ্রিক বা সময়কেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়। বরং মুমিন প্রতিদিন তার আমলের হিসাব নেয় এবং গতকালের চেয়ে আগামীকালকে বেশি উপকারী ও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করে।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সব মানুষ প্রভাতে উপনীত হয় এবং নিজের সত্তাকে বিক্রি করে। আল্লাহর কাছে বিক্রি হয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে, নতুবা শয়তানের কাছে বিক্রি হয়ে নিজেকে ধ্বংস করে।’ (মুসলিম : ৩/১০০)।