আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর , মানবিকতায় অনন্য পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম
কর্মজীবনের শুরু থেকেই নারায়নগঞ্জের বর্তমান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কঠোর অবস্থান, ভুমিদস্যুদের বিপক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ এবং মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের মাধ্যমে নজর কেড়েছেন সাধারণ জনগন এর। মুন্সিগঞ্জে পুলিশ সুপার থাকাকালীন মোহাম্মদ জায়েদুল আলমই প্রথম ২০১৭ সালে পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট চালু করেন। ১০০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের মধ্যে দিয়ে প্রশংসিত হন তিনি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা তথা জনসেবায় পুলিশকে জনগনের আরও কাছে আনতে ওপেন হাউজ ডে ও কমিউনিটি পুলিশিংকে সর্বোচ্চ গুরুত্ত্ব দিয়ে পুলিশ জনগনের বন্ধু বানানোর প্রক্রিয়ায় সবসময় তাকে আন্তরিক দেখা যায়।
চাকরি জীবনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক দুই বার, আইজি ব্যাজ পাঁচ বার, জাতিসংঘ পদক ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক (আবুল কাশেম ফজলুল হক) পদক পেয়েছেন।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক :
গঠিত হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ বুধবার বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর কার্যনির্বাহী কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০২০ সালের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম (বার)। বাংলাদেশ পুলিশ ক্যাডারে এএসপি থেকে তদুর্দ্ধ কর্মকর্তা রয়েছেন ৩০৮৮ জন। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন বিসিএস পুলিশ অফিসারদের প্রতিনিধিত্ব করে।
মুন্সীগঞ্জে ৩ বছর:
জায়েদুল আলম তিন বছর তিন মাস মুন্সীগঞ্জ জেলার এসপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি এসপি থাকাকালীন মুন্সীগঞ্জ জেলার ছয়টি থানার অবকাঠামো উন্নয়ন, থানার প্রধান ফটকে গেট নির্মাণ, রাস্তা প্রস্তুতকরণ, বিভিন্ন স্থাপনার উন্নয়ন এবং মুন্সীগঞ্জের প্রত্যকটি থানাকে সুসজ্জিতভাবে আধুনিক রূপে সাজানো হয়েছে। মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার পদে যোগদান করে তিন বছর তিন মাস এসপি হিসেবে কর্মরত ছিল। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ জেলাকে মাদকমুক্ত,সন্ত্রাসমুক্ত রাখার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
মাদক নির্মূল: পেশাগত জীবনের শুরুতেই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মনোভাব নিয়ে কাজ করে আসছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। মাদকের সাথে কোন আপোষ করেননি তিনি। মাদকসেবী আর মাদক ব্যবসায়ী সে যে দলেরই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনেছেন। এমনকি মাদকের সাথে পুলিশের কোনো সদস্যকে জড়িত থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের ঘুমাতে দেওয়া হবে না। সবাই ঐক্য হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এমনই ছিল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম এর মনোভাব।
পুলিশ সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’:
প্রথমবারের মতো পুলিশ সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’ করা হয়েছিলো মুন্সিগঞ্জে। পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমই প্রথম ২০১৭ সালে পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট চালু করেন মুন্সিগঞ্জে। যার মাধ্যমে বেশ কয়েকজন মাদকাসক্ত পুলিশ সনাক্ত করা হয়। সেই পুলিশ সদস্যদের তিনি প্রথমবারের মতো মাফ করে চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ ছিল, পুলিশ সদস্যরা মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসেহারা নেয়। কেউ কেউ আবার নিজেরাই মাদক ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত। অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা মাসোহারা দিয়ে কিছু পুলিশ সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে দীর্ঘদিন ধরে হেরোইন, ফেন্সিডিল, মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতো। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতেই পুলিশ সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’ এর ব্যবস্থা নেন পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।
করোনাকালে মোহাম্মদ জায়েদুল আলম এর তৎপরতা:
নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, পিপিএম (বার) করোনাকালে প্রত্যেকটি থানা পরিদর্শন করেন। এসময় থানার অফিসার ফোর্সদের মনোবল বৃদ্ধি, করোনাকালে করনীয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে খাবার সহায়তা, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া,পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ থানা পুলিশের নানামুখী কল্যাণ সংক্রান্ত বিষয়ে খোজখবর নেন। এসময় তিনি বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার নির্দেশনায় বিভিন্ন থানা এলাকার পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়। এছাড়াও মোবাইল ফোন ও ম্যাসেজ এর মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে অসংখ্য পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয়া হয়।
উপসর্গ দেখা মাত্রই নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সদস্যদের দ্রুত আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। মানবিক সহায়তা থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সামগ্রিক বিষয়াদি কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন। তারপরও তাদের বিনোদনের স্বার্থে মোবাইলে যেন তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য জেলা পুলিশের উদ্যোগে তাদের মোবাইলে ইন্টারনেট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম। স্বজনদের কাছে নিজ নিজ গ্রামে রেশন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারকেও (এসপি) তাদের দেখভালের জন্য অনুরোধ জানান।
মাদ্রাসাতু জাবালে নূর ও ইসলামিক কিন্ডারগার্টেনের দরিদ্র অভিভাবক ও মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেণ নারায়নগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক জায়েদুল আলম (পিপিএম)। তিনি দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী উপহার পৌঁছে দেন। পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম (পিপিএম) বলেন, দেশের এই দুর্যোগে সবাই সবার প্রতি মানবিক হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ সেভাবেই মানুষ ও দেশের জন্য কাজ করে চলছে। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া আছে, কেউ ফোন অথবা এসএমএস করলে সঙ্গে সঙ্গে উপহার পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্স গেটে ডিসইনফেকশন বুথ স্থাপন
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্স গেটে ডিসইনফেকশন বুথ:
আইইডিসিআর কর্তৃক নারায়ণগঞ্জ জেলাকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ক্লাস্টার এলাকা ঘোষণা করায় পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বেসরকারিভাবে পুলিশ লাইন্স গেটে এটি স্থাপন এবং চালু করা হয়েছে। এটি সয়ংক্রিয়ভাবে কোন ব্যক্তি এ বুথে প্রবেশ করলে জীবাণু নাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করবে। নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সদস্যরা দিন ও রাতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এলাকায় ডিউটিতে নিয়োজিত থাকেন। অনেক আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে তাদের। পুলিশ সদস্যদের কোভিড-১৯ ঝুঁকিমুক্ত রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে এ বুথ ২৪ ঘন্টা চালু থাকবে।
২২তম বিসিএস ক্যাডার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনীতে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের সহধর্মিনী জেসমিন কেকাও বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব পালন করছেন।