বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শিল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়তে মানসম্মত শিল্প পণ্য উৎপাদনের তাগিদ শিল্পমন্ত্রীর
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শিল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মানসম্মত শিল্প পণ্য উৎপাদনের তাগিদ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। তিনি বলেন, বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য শিল্পখাতের সক্ষমতা বাড়িয়ে কোয়ালিটি পণ্য উৎপাদনে নিজেদের এগিয়ে নিতে হবে। মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করলে, এটি জাতির সাথে বেঈমানি ও দুর্নীতি বলে বিবেচিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শিল্পমন্ত্রী আজ (২০ আগস্ট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবস ২০২০ পালন উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত "চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু: শিল্পোন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা" শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তাগিদ দেন। সেমিনারে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বিশেষ অতিথি ছিলেন। শিল্পসচিব কে এম আলী আজমের সভাপতিত্বে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সালাউদ্দিন মাহমুদ।
সেমিনারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হেলাল উদ্দিন এনডিসি, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও বিসিক চেয়ারম্যান মোশ্তাক হাসান এনডিসি আলোচনায় অংশ নেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর/ সংস্থার প্রধানগণ সেমিনারে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর শিল্প দর্শনের আলোকে দেশে গুণগত শিল্পায়নের ধারা জোরদারে উন্নতমানের পণ্য উৎপাদনে সক্ষম বিদেশি উদ্যোক্তাদের সাথে যৌথ বিনিয়োগের শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। রাষ্ট্রয়ত্ত শিল্প-কারখানার খালি জমিতে এগ্রো- প্রসেসিং, চামড়া, চিনিসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানিবিকল্প পণ্য উৎপাদন, মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষ্যে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিমধ্যে অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন। আগামী প্রজন্মের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য একটি শিল্পোন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে তিনি প্রজাতন্ত্রের মেধাবী কর্মকর্তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে নিরন্তর পরিশ্রম করে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম ব্যক্তিত্ব, শিল্পদর্শন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সততার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায় উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, যারা এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে, তারা নব্য রাজাকার হিসেবে বিবেচিত হবে। বঙ্গবন্ধু জাতিকে একটি বাস্তবসম্মত উন্নয়ন দর্শন দিয়ে গেছেন এবং সেই দর্শনের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে শিল্পসমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বোধ থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা শিল্প উন্নয়নের চলমান ধারাকে আরও এগিয়ে নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, জনগণের স্বার্থেই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শিল্প কারখানাগুলোকে জাতীয়করণ করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর লাভজনক শিল্পগুলোকে বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়। কারখানার দক্ষ কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে শিল্প খাত, বিশেষ করে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-কে অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঋণ সুবিধাসহ শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিতে হবে।
চলমান করোনা পরিস্থিতির মাঝেও দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রণোদনার অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করতে হবে। এই ক্ষেত্রে যাতে কোন প্রকার দুর্নীতির আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রদান করা না হয়, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিল্প-কারখানা সমূহের খালি জায়গায় নতুন কারখানা স্থাপনের উদ্যোগসহ বিসিকের মাধ্যমে শিল্পনগরী স্থাপনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, পুরানো কারখানার আধুনিকায়ন ও নতুন কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইউরোপের আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করে সেগুলো তৈরি করতে হবে।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী ২০২১ সালের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীতে দেশের শিল্পখাতের জন্য ভাল কিছু উপহার দেবার লক্ষ্য নিয়ে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান। শিল্প প্রতিমন্ত্রী রূপকল্প ২০৪১ অর্জনে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি শিল্প বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন, বঙ্গবন্ধু তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তরুণ বয়সেই দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষিপ্রধান অর্থনীতিকে শিল্পোন্নত অর্থনীতিতে পরিণত উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এজন্য বিচ্ছিন্নভাবে থাকা সঞ্চয়কে একত্রিত করে নতুন নতুন শিল্প কারখানা তৈরি করা যায় সেজন্য দেশের অর্থনীতিতে ক্লাস্টার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু একজন নেতা নন, তিনি একজন দার্শনিকও। বঙ্গবন্ধু জাতিকে যে দর্শন ও উন্নয়নের লক্ষ্য দিয়ে গেছেন, তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন।
