প্রতিকূলতার মধ্যে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেই উন্নয়নের ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) নিয়মিত সভায় সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রের এ বৈঠকে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিরদিন আমিও থাকবো না, কিন্ত বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়; এটাই আমি চাই। আমরা যেন এগিয়ে যেতে থাকি। যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিল, সেই আদর্শ যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।
তিনি বলেন, এদেশের প্রতিটি গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়া, খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার ব্যবস্থা করাসহ সব ক্ষেত্রেই সরকার সাফল্য অর্জন করেছে। তবে, আরো সামনে এগিয়ে যাবার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। তার আদর্শের সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নেই কাজ করেছে। তাই আজ যতটুকুই অর্জন আমি মনে করি তা জনগণেরই অবদান।
বাংলাদেশকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে পারার জন্য তার সহকর্মীদের এ সময় ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেভাবে আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছি, সেভাবেই বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ২০২০ সালে যখন জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, তখনই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের বিরাট অর্জন, তবে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, একটানা (তিনবার) জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারার কারণে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। কাজেই আমাদের ওপর জনগণের যেমন আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে; তেমনি আমারও জনগণের প্রতি সেই আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের পাশাপাশি আশু করণীয় নির্ধারণ ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তার সরকার ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যে রূপকল্প -২০২১ ঘোষণা করেছিল, তা বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছে।
আজকের অর্জনের পেছনে পরিকল্পনা কমিশনের একটা বিরাট অবদান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাদেরও ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ঔপনিবেশিক আমলের শাসন কাঠামোকে পরিবর্তন করে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিলেন এবং সে জন্য পদক্ষেপও নিয়েছিলেন, যার সুফল দেশের মানুষ পেতে শুরু করেছিল।
তিনি বলেন, জাতির পিতা পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন। দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ যেন কারো মুখাপেক্ষী না থেকে আত্মমর্যাদাশীলভাবে গড়ে ওঠে সেটাই ছিল তার চিন্তা। দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতা যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই আঘাত এলো, তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শুধু তাই নয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হলো। বাংলাদেশে আবার মেনে এলো স্থবিরতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল এদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করেনি তবে, ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। মানুষের তখন গণতান্ত্রিক অধিকার বা ভোটের অধিকার কিছুই ছিল না, প্রতি রাতে কারফিউ থাকতো। ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল। আমরাই আন্দোলন সংগ্রাম করে জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেই।
আপনজন হারানোর ব্যথা বুকে ধারণ করে কেবল বাবার যে স্বপ্ন, এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তার পথ চলা বলে জানান শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার খুনিদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, তাদের কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত ছিল না। মামলা করার বা বিচার চাওয়ার সে অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আমাদের প্রতি যে অবিচারটা হয়েছিল যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল জানি না তা আর কেউ স্মরণ করে কি-না।
’৯৬ সালে আওয়ামী সরকারে এসে সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের পরই কেবল মামলার সুযোগ পাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, খুনিদের পুরস্কৃত করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা, কি না করা হয়েছে। কত অন্যায় কাজ এদেশে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা হলে যে কেউ বিচার চাইতে পারে, কিন্তু আমাদেরতো সে অধিকার ছিলই না। বরং আমার চোখের সামনে দেখেছি জনগণের ভোট চুরি করে সেই খুনিদের খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বসিয়েছেন। জিয়াউর রহমান তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। এরশাদ তাদের রাজনৈতিক দল করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই অন্যায় অবিচার আমরা চোখের সামনে দেখে সবকিছু সহ্য করে, ধৈর্য ধরে, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছি। কারণ আমার একটাই সম্পদ ছিল জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা। সেটাকে মূলধন করেই আমি এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেছি। আর জনগণের সহযোগিতায় যতটুকু এগুতে পেরেছি, তা দেখে আমার বাবার আত্মা নিশ্চয়ই শান্তি পাবে।