একাত্তরের এই দিনে
আনোয়ার হোসেন:
আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে যৌথবাহিনীর অগ্রবর্তী দল শীতলক্ষ্যা এবং বালু নদী অতিক্রম করে রাজধানী ঢাকার ৫-৬ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর "এস ফোর্স" ঢাকার উপকণ্ঠে ডেমরা পর্যন্ত চলে আসে।
ঢাকার আকাশে যৌথবাহিনীর, বিমান বাহিনীর একছত্র আধিপত্য থাকায় তারা পাকিস্তানের সামরিক অবস্থানের ওপর অনবরত আক্রমণ চালাতে থাকে।
১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় বগুড়া, মানিকগঞ্জ, রুপগঞ্জ, গংগাছড়া, মির্জাপুর, লালপুর, কাহালু, ধামরাই ,তারাশ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা।
অপরদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে চলছিল শেষ খেলা। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের মুলতবি বৈঠকে যুদ্ধবিরতি এবং ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব পুনরায় উত্থাপন
করে।
কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের তৃতীয়বার ভেটো প্রদানের কারণে যথারীতি তা বাতিল হয়ে যায়।
আলোচনা দীর্ঘায়িত করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের পরামর্শে পোল্যান্ড নতুন একটি প্রস্তাব পেশ করে। এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি এবং সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার সমাধানের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির প্রশ্নটি অন্তর্ভুক্ত করে।
কিন্তু জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি জুলফিকার আলী ভুট্টো পোল্যান্ডের প্রস্তাবের এই কপিটি টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে দিয়ে সভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
এর সাথে সাথেই মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক সমাধানের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ইসলামাবাদ যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের শোচনীয় অবস্থা বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের কাছে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য বারবার অনুরোধ জানাতে থাকে।
ইসলামাবাদ থেকে ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি কর্মকর্তাগণ পূর্ব পাকিস্তান রণাঙ্গনের সৈনিকদের মনোবল চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছিল এই বলে যে, আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরতে। তারা পশ্চিমে ভারত আক্রমণ করে এমন শিক্ষা দেবে, যেন ভারত সৈন্য প্রত্যাহার এবং যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু পাক হানাদার বাহিনীর জন্য সেই দিনটি আর আসে নাই।
অপরদিকে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর শান্তি কমিটি এবং স্বাধীনতাবিরোধী দালাল চক্র অবস্থা বেগতিক দেখে গা ঢাকা দিতে থাকে। কিন্তু এর মধ্যেও ঘাতক "আলবদর" চক্র সক্রিয় ছিল। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এদেশের সবচেয়ে কৃতি সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে। এদিন সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে তার সিদ্ধেশ্বরী বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় কিছু আলবদর কর্মী। ১৪ ডিসেম্বর রায়েরবাগ বধ্যভূমিতে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।
(আনোয়ার হোসেন , ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ)