ঢাকার এই ঐতিহ্য কখনো হারিয়ে যাবে না, এটা আমার বিশ্বাস : মির্জা ইয়াহিয়া
ঢাকা অনেক প্রাচীন শহর। তবে মোগল রাজধানী হিসেবে ঢাকার ইতিহাস চারশো বছরের। মোগল শাসকদের সময় থেকেই ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি লক্ষণীয়। সেই সপ্তদশ শতকে ঢাকা যখন সুবা বাংলার গুরুত্বপূর্ণ নগরী তখন বকশীবাজারে গড়ে উঠে হোসেনী দালান ইমামবাড়া। সেই ঐতিহ্য কালক্রমে আরো প্রসারিত হয়েছে। হোসেনী দালান থেকেই আশুরার দিন ঢাকায় মহরমের মিছিল বের হয়। এটাও সেই মোগল আমল থেকেই হচ্ছে। আশুরাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় মেলাও বসতো।
আমাদের বাড়ি আজিমপুর। তাই কিশোর বয়সে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে অনেকবারই হোসেনী দালানে গিয়েছি। কাছ থেকে দেখেছি ইমামবাড়া। বকশীবাজার ও নাজিমউদ্দিন রোডে স্কুলের অনেক বন্ধুর বাসা ছিলো। সত্তর-আশি-নব্বই দশক পর্যন্ত এ এলাকায় আশুরার যে তাজিয়া বা শোকমিছিল, তা অনেক বড় আকারে হতো। যুবকরা ধারালো কিছু দড়িতে বেঁধে বুক-পিঠ রক্তাক্ত করতো। এই মিছিল হোসেনী দালান থেকে শুরু হয়ে বকশীবাজার দিয়ে সলিমুল্লাহ এতিমখানা, দায়রা শরীফ, আজিমপুর বটতলা, কবরস্থানের পাশ, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডির জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হতো। গত কয়েক বছর ধরে দায়রা শরীফ, বটতলা আর আজিমপুর কবরস্থান এলাকায় মিছিল আর ঢুকে না। আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সোজা নিউমার্কেট হয়ে জিগাতলা দিয়ে শেষ হয় তাজিয়া মিছিল।
আশুরার শোকের আয়োজন শিয়া সম্প্রদায় করলেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নানা মতাবলম্বীরা এতে যোগ দিয়ে থাকে। আমরা এই মিছিলে যেতাম না। দূর থেকেই দেখতাম। আশির দশকে দেখেছি তাজিয়া মিছিলের সময় আজিমপুর বটতলা থেকে মিছিলকারীদের সরবত বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে ড্রামের শব্দে তাজিয়া মিছিল প্রকম্পিত অবস্থা ধারণ করতো। আশুরার দিন বিজিবি (বিডিআর) দুই নম্বর গেট থেকে শুরু করে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মেলাও বসতো। এই মেলায় আমাদের কুটির শিল্পের নানা উপকরণ পাওয়া যেতো। থাকতো দেশি নানা খাবার। নব্বই দশকের পর এই মেলা আর বসতে দেখিনি।
সবমিলিয়ে হোসেনী দালানের ইতিহাস প্রায় চারশো বছরের। এই সময় পর্যন্ত আশুরার দিন তাজিয়া মিছিল ছিলো আবশ্যক এক বিষয়। এবার করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন। ইমামবাড়ার ভেতরেই সীমাবদ্ধ তাজিয়া মিছিল। সামনের বছর করোনা পরিস্থিতি চলে গেলে আবার হয়তো আগের মতো বড় পরিসরে হবে আশুরার শোকের মাতম। ঢাকার এই ঐতিহ্য কখনো হারিয়ে যাবে না, এটা আমার বিশ্বাস।
পরিশেষে ১০ মহরম কারবালার প্রান্তরে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।




(মির্জা ইয়াহিয়া,সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জনসংযোগ ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান। সিটি ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ, এর ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া।)