বন্ধ অধিকাংশ স্টল, নেই কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা-দর্শনার্থী

অধিকাংশ স্টল বন্ধ। যেগুলো খোলা, তাদের দুপুর পেরিয়েছে বই শুকোতে আর স্টল মেরামতের কাজে। বিকেল গড়িয়েছে পাঠকের অপেক্ষায়। তবে কাঙ্ক্ষিত সেই পাঠক-দর্শকের দেখা পাননি অধিকাংশ প্রকাশক ও স্টল মালিকরা।
সোমবার (৫ এপ্রিল) লকডাউনে নতুন সময়সূচিতে প্রথম দিন অতিবাহিত করছে অমর একুশে বইমেলা। দুপুর ১২টায় মেলা শুরু হওয়ার পর বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর দেখা মিলেছে খুবই কম। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় আসতে পারেননি অনেক স্টলের বিক্রয় কর্মী। পাঠক-ক্রেতাদেরও একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে মেলায় বড় কয়েকটি প্যাভেলিয়ন ছাড়া বই বিক্রি হয়নি অধিকাংশ ছোট ছোট স্টলগুলোতে। আর দুপুরের পরও বন্ধ দেখা গেছে অনেক স্টল।
এ বিষয়ে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের পূর্বপাশের (মৎস ভবন গেট এরিয়া) অনেক প্রকাশক জানিয়েছেন, আজ এমন একটা দিন পার হলো, বই বিক্রি তো পরের কথা, সেভাবে পাঠক দর্শনার্থীও দেখা যায়নি এই দিকে। এছাড়া এমন অনেক স্টল আছে, যেখানে কোনো বইও বিক্রি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক প্রচণ্ড হতাশা এবং ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ঝড়-তুফান, করোনা দাপট, বিক্রির খরা আর সহ্য হচ্ছে না। সব শেষ হয়ে গেল। এবার আর উঠে দাঁড়াতে পারব কী না জানি না!
বিকেলে শিশু কর্নারের রেজা পাবলিকেশনের মহসীন কবির বলেন, ঝড়ের সময় আমাদের বইপত্র সব উড়ে গিয়েছিল। সেসব কুড়িয়ে এনেছি। যদিও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি কিন্তু এখনও পর্যন্ত ক্রেতার দেখা পেলাম না।
বিস্তর ক্ষতির সম্ভাবনায় স্টল বন্ধের কথাও ভাবছেন অনেক প্রকাশক। এ বিষয়ে বইমেলার শিশু চত্বরের একজন প্রকাশক বলেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই আমার স্টল বন্ধ করতে হচ্ছে। আমি পরিস্থিতির শিকার। লকডাউনের ফলে স্টলের কর্মীরা আসতে পারছেন না। এরপর ঝড়-বৃষ্টিতেও ক্ষতি হয়েছে অনেক। আর যে সময়ে এখন মেলা, এই সময়ে পাঠক-দর্শনার্থীও আসে না। আর শিশু চত্বর তো একেবারেই ফাঁকা থাকে সব সময়। সব মিলিয়ে বন্ধ করার তুলনায় স্টল চালু রাখলেই আমার ক্ষতিটা বেশি হবে।
তবে কয়েকটা দিন গেলে মেলায় লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও লোকসমাগম হবে বলে আশা করছেন অনেকেই।
এদিকে, পুরো দিন শেষে মেলায় বিকেলের দিকে হাতে গোনা কয়েকজন পাঠক ও দর্শনার্থীর দেখা মেলে। তবে তারা এসময় বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ঘুরেছেন মেলা প্রাঙ্গন, কিনেছেন বই।
লালমাটিয়া থেকে পরিবার নিয়ে বইমেলায় আসা আমিরুল ইসলাম বলেন, বইমেলায় এবার আসা হয়নি। বাচ্চারা বেশ কয়েকদিন থেকেই বলছিলো বইমেলা আসার কথা। এবার সুযোগ পেয়ে চলে আসলাম। নিজস্ব পরিবহনে আসায় রাস্তায় ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে কম, আর বইমেলাও এখন বেশ ফাঁকা ফাঁকা। সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালো লাগছে।
নতুন বই: অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিনে সোমবার মেলায় নতুন বই এসেছে ২৮টি। বিষয়ভিত্তিকভাবে এগুলোর মধ্যে উপন্যাস-১, প্রবন্ধ-৫, কবিতা-১০, ছড়া-১, শিশুসাহিত্য-১, জীবনী-২, মুক্তিযুদ্ধ-১, নাটক-১, ভ্রমণ-১, ইতিহাস-৩, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক-১টি এবং অন্যান্য-১টি বই।
এসব বইয়ের মধ্যে আইডিয়া প্রকাশন থেকে অধ্যাপক. ড. আনোয়ার খসরু পারভেজের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের করোনা প্রেক্ষাপট ও চালচিত্র’, বর্ষা দুপুর থেকে মাহমুদুন নবী রনির উপন্যাস ‘হৃদয়পুর জংশন’, নবরাগ প্রকাশনী থেকে তানভীর দুলালের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘আধুনিক বাংলা কবিতার বিচিত্র স্বর’, আকাশ প্রকাশন থেকে পবিত্র অধিকারী সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ ‘তিনশো বছরের বাংলা ব্যঙ্গকবিতা’, বাংলানামা থেকে মো. আবুসালেহ সেকান্দারের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘শরণার্থী সমাজ ও সংস্কৃতি’, যুক্ত প্রকাশন থেকে নয়ন হাফিজের কাব্যগ্রন্থ ‘ছায়াসন্ন্যাস’, ভাস্কর চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ ‘তুমি আমার অবেলা’, দি রয়েল পাবলিশার্স থেকে আহমদ মতিউর রহমানের ইতিহাস বিষয়ক বই ‘নারিকেলবাড়িয়া থেকে বাংলাদেশ’, আল-গাজী পাবলিকেশন্স থেকে আমিনুর রহমান সুলতানের লোকনাট্য ‘লোকনাট্য ঘাটুগান’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) অমর একুশে বইমেলার ২০তম দিন। এদিন মেলা শুরু হবে বেলা ১২টায় এবং চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।