তৈরি পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জারা ফ্যাশনে ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান

রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত তৈরি পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জারা ফ্যাশনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির স্টলে অভিযান চালিয়ে ৩৯ কোটি টাকার গোপন বিক্রয় হিসাব উদ্ধার করা হয়েছে।
নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বুধবার (২৪ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় জারা ফ্যাশনের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
স্টলটিতে অভিজাত ও বিদেশি ব্রান্ডের জামাকাপড়, ঘড়ি, জুতা, ব্যাগ ও গহনাসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রয় করা হয়। কোনো কোনো পণ্য লাখ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হয়।
মঙ্গলবার অভিযানটি পরিচালনা করেন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার। এ সময় অধিদফতরের গোয়েন্দা দল জারা ফ্যাশন থেকে হিসাবপত্র জব্দ করে আনে।
বুধবার জব্দ করা কাগজপত্র যাচাই করে প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩৮ কোটি ৮১ লাখ টাকার বিক্রয় হিসাব গোপন করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে সরকারের ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি সংঘটিত হয়েছে।
অনুসন্ধান অনুসারে, জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত সময়ে জারা ফ্যাশন ৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। এসব বিক্রয়ের গোপন হিসাব জব্দ করা কাগজপত্রে লিপিবদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে মাসিক রিটার্নে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বিক্রির হিসাব দেখিয়েছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৩৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
জারা ফ্যাশন ওই একই সময়ে রিটার্নের মাধ্যমে ভ্যাট দিয়েছে ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার নিট ভ্যাট ফাঁকি পরিলক্ষিত হয়েছে। সময়মতো ভ্যাট না দেয়ায় সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী মাসিক দুই শতাংশ হারে আরও ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সুদ আদায়যোগ্য হয়েছে।
নতুন ভ্যাট আইন অনুসারে পোশাকের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। আগে এই হার ৫ শতাংশ ছিল।
একজন ভোক্তার অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে এই অভিযানটি পরিচালিত হয় বলে জানান মইনুল খান। তিনি জানান, কাস্টমার লাখ টাকার পণ্য কিনলেও তাকে যথাযথ ভ্যাট চালান দেয়া হয়নি। পরে তিনি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরে অভিযোগ দেন।
অভিযানে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট নিলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা করেনি। প্রতিষ্ঠানটি কোনো কোনো মাসে ৫০ লাখ টাকার বিক্রয় করলেও ভ্যাট সার্কেলে ঘোষণা দিয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকার হিসাব। ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার জন্যই এই তথ্য গোপন করা হয়, বলেন মইনুল খান।