শিরোনাম

South east bank ad

ফুটওভার ব্রিজ: ব্যবহার আযোগ্য নাকি অনীহা

 প্রকাশ: ২৮ অগাস্ট ২০১৭, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

সন্ধ্য ৭টা, নিউমার্কেট থেকে ফিরছিলেন তামান্না। হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ, রাস্তা পারাপারের জন্য হন্তদন্ত হয়ে উঠছিলেন ফুটওভার ব্রিজে। আগে থকেই সেখানে কিছু বখাটে যুবক আড্ডা দিচ্ছিল। তামান্নাকে দেখে যুবকটি বাজে মন্তব্য করা শুরু করে। তামান্না পাত্তা না দিয়ে এগোতে থাকে দ্রুত। কিন্তু যুবকটির সঙ্গে আরও কিছু যুবকও জড় হয়। এই ঘটনার পর থেকে পারতপক্ষে তামান্না ফুটওভার ব্রিজগুলো এড়িয়েই চলে। তামান্নার মত অনেক নারীই প্রতিনিয়ত এমন ঘটনার শিকার হয়ে ঢাকার ফুটওভার ব্রিজগুলো ব্যাবহারে অনিহা প্রকাশ করেন। ঢাকা শহরের পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে অনেক ফুটওভার ব্রিজ, আছে আন্ডারপাসও। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সূত্রমতে, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছে ৫১টি ওভারব্রিজ ও তিনটি আণ্ডার পাস। তারপরও জিবনের ঝুঁকি নিয়েই মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই মৃত্যুর ঘটনাসহ ঘটছে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা। ইতিমধ্যে নগরবাসীকে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে চলাচলে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে ফুটওভার ব্রিজকে ফুল দিয়ে সাজানো, রাতের বেলায় পর্যাপ্ত আলো ও ফুটওভার ব্রিজগুলো সারাক্ষণ তত্ত্বাবধায়নের জন্য লোক রাখা হয়েছে। তবুও কিছু কিছু যায়গায় নিরাপত্তা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং হকারদের দখল থকায় অনেক পথচারীরাই ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন না। বর্তমানে, রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মোট ১০০টির বেশি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে রয়েছে ৫৬টি। এর বেশিরভাগই ব্যবহার করেন না পথচারীরা। চরম ঝুঁকিপূর্ণ জানার পরও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের বেশিরভাগ পথচারীরই চরম অনীহা। অবশ্য পথচারীদের অভিযোগ, এসব ফুটওভার ব্রিজের অনেকগুলোই রাতের বেলা ভবঘুরে, মাদকাসক্ত ও ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের দখলে থাকে, আর দিনের বেলা দেখা যায় হকারদের মেলা। এছাড়া রাতে ছিনতাইকারীরা ওভারব্রিজ ব্যবহারকারী পথচারীদের কাছ থেকে মালামাল ছিনিয়ে নিয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ত্রপা বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে কাপড়ের ব্যাবসা করি আমি। ফলে কিছুদিন পর পরই নিউমার্কেটে যাওয়া হয়। নিউমার্টেক সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয় আমাকে। কিন্তু হকারদের ভিড়, আজে বাজে ছেলেপেলেদের আড্ডার ফলে দিনের বেলায়ই ব্রিজে ওঠা দায়। উপায় না পেয়েই রাস্তা দিয়ে পার হতে হয়। সাম্প্রতিক এক জরিপ মতে, রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই পথচারী। ডিএমপির তথ্যমতে, ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২০৬ জন পথচারী মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ২৮৮ জন। আগের বছরের তুলনায় এ সংখ্যা কিছুটা বেশি। আর ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো রয়েছেই। বর্তমানে, রাজধানীর অনেক ব্রিজ অনেকটাই অপরিষ্কার। এসব কারণে এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। এ ছাড়া সড়ক নিরাপত্তার জন্য নগরীর চারশ মোড়ে জেব্রা ক্রসিং থাকার কথা, কিন্তু এর অধিকাংশেরই সাদা দাগ উঠে গেছে। ফলে জেব্রা ক্রসিং চিহ্নিত স্থানগুলোও অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রাস্তা পারাপারের সময় বিপদে পড়ছেন পথচারীরা। এ অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে নগরীতে অবৈধ রাস্তা পারাপার বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করায় আরও ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা। ‘এত কষ্ট করে ফুট ওভার ব্রিজে উঠতে ইচ্ছা করে না। আর উঠেই বা কি, ভাঙ্গা চোড়া, উঠতেও তো ভয় লাগে।’- এমন মন্তব্য করেন পথচারী বিথির। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুটওভার ব্রিজের যে উচ্চতা থাকা প্রয়োজন ঢাকার ফুটওভার ব্রিজগুলোর উচ্চতা তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বিভিন্ন এলাকার ফুটওভার ব্রিজগুলো পথচারীরা ব্যবহারে উৎসাহ পান না। অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের আন্ডারপাসটি পথচারীরা ব্যবহার করলেও রাতে নিরাপত্তার অভাবে পথচারীরা এটি এড়িয়ে চলেন। ফুট ওভার ব্রিজ ব্যাবহার না করার আরেকটি বড় কারণ হলো এর অবস্থান। অনেক জায়গায় ওভারব্রিজ দূরে থাকায় পথচারীরা নিচ দিয়ে পার হয়। রাজধানীর গুলিস্তান, শাহবাগ, মতিঝিল, উত্তরা, বনানী, ফার্মগেট এবং মিরপুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ ফুটওভারব্রিজ দিয়ে পারাপার না হয়ে ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে পার হচ্ছে। নিরাপত্তা এবং পরিস্কারপরিচ্চন্নতার দিকে একটু খেয়াল করে ফুটওভার ব্রিজগুলোর উন্নয়ন করলে সাধারণ মানুষ এগুলো ব্যবহারে আগ্রহী হবে বলে করেন পথচারী টুম্পা।
BBS cable ad

সম্পাদকীয় এর আরও খবর: