শিরোনাম

South east bank ad

ঈদ ও অদম্য বাংলাদেশ

 প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

ঈদের আগে বাংলাদেশের মানুষ দুটো বিষয় নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিল। প্রথমত এবারের কোরবানির প্রয়োজনীয় পশু পাওয়া যাবে কিনা। দ্বিতীয়ত গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করা যাবে কিনা? কয়েক মাস আগেই ভারত ঘোষণা দেয় যে, বাংলাদেশে গরুর চালান বন্ধ থাকবে। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু চোরাই পথে বাংলাদেশে আসে, সেখানে এ ধরনের ঘোষণা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। আবার এটি ঠিক চোরাইও বলা যায় না। বাংলাদেশের সরকার, ভারতের সরকার এবং দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভালো করেই জানে যে কীভাবে সীমান্ত দিয়ে গরু আসে। এ ব্যাপারে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সীমান্তরক্ষীদের একটি অলিখিত চুক্তি থাকে। সেই চুক্তি মোতাবেক এত দিন ভারত থেকে প্রায় নির্বিঘ্নে গরু আসত। মাঝে মধ্যে সংঘর্ষও হতো যখন একপক্ষ চুক্তির শর্ত অমান্য করত। গরুর চালানে দুই দেশেরই লাভ। কিন্তু হঠাৎ ভারতের বিজেপি সরকার গরুর চালান বন্ধের ঘোষণা দিলে বাংলাদেশ বিপদে পড়ে। গরুর মাংসের দামও বেড়ে যায়। তাই ঈদকে সামনে রেখে মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। অনেকের মতে, প্রতি বছর ঈদুল আজহায় যে সংখ্যক গরু কোরবানি হয়ে থাকে, তার অর্ধেকেরও বেশি নাকি ভারত থেকে আসত। এ অবস্থায় ঈদের আগে ভারত থেকে গরু না এলে মহা সংকট হবে বলে আশঙ্কা করা গিয়েছিল। কিন্তু আনন্দের কথা হলো এবারে ভারত থেকে গরু কম এলেও কোরবানির পশুর সংকট হয়নি। যেটুকু সমস্যা হয়েছে, তা যানজট তথা পরিবহন অব্যবস্থাপনার কারণে। বাংলাদেশের খামারি ও ব্যবসায়ীরা জোর দিয়েই বলেছিলেন, ভারত থেকে গরু আনার কোনো প্রয়োজন হবে না। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী তারা গরুর জোগান দিতে পারবেন। এমনকি ঈদের কদিন আগে যখন হাটে গরু আসতে শুরু করেছে, তখন খামারিরা উল্টো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ভারতীয় গরু এলে তাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাদের গরুগুলো হাট থেকে ফেরত নিয়ে যেতে হবে। ঈদের আগের দিন বিকেলে ঢাকার কোনো কোনো হাটে গরুর অভাব দেখা দিলে তারা ক্রেতাদের এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, যানজটের কারণে গরুবাহী ট্রাক ঢাকায় আসতে পারছে না। ওই দিন রাতেই গরুবাহী ট্রাকগুলো ঢাকায় আসে এবং সংকট কেটে যায়। ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। এই ঘটনা প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশ অবিলম্বে পশুখাদ্যেও স্বাবলম্বী হবে। আর ঈদে মানুষের ঘরে ফেরা নিয়ে যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তার দুটো দিক আছে। প্রথমত একই সময়ে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘরে ফিরলে পরিবহনব্যবস্থার ওপর যে বাড়তি চাপ পড়ে সেটি মোকাবিলা কঠিন। তবে এই কঠিন কাজটিকে আরও কঠিন করে দিয়েছে পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ক্ষেত্রে তারা বরাবরই উদাসীন।কিন্তু তারা যদি আগে থেকে সতর্ক থাকতেন, যদি যদি রাস্তাঘাটগুলো সময়মতো সংস্কার করতেন, যদি ট্রাফিকব্যবস্থা উন্নত হতো, তাহলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমত। প্রতি ঈদেই ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। তাই বলে কি তারা হতোদ্যম হন? কখনো বাড়ি না যাওয়ার কথা ভাবেন? ভাবেন না। ঈদের আগের দিন যারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন, তাদের কারও কারও তিন ঘণ্টার পথ নয় ঘণ্টা লেগেছে। ছয় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়েছে পনেরো ঘণ্টায়। কিন্তু তারও তারা হতোদ্যম হননি। বাস-ট্রেনের দুর্লভ টিকিট পেয়ে মানুষ যতটা আনন্দ পেয়েছিল, গন্তব্যে পৌঁছার পর তাদের সেই আনন্দ আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। দীর্ঘ পথের সব ক্লান্তি ও ক্লেশ মুছে গেছে। ভাববেন না, এবারে যারা বাড়ি যেতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন, তারা আগামী ঈদে বাড়ি যাবেন না। হয়তো আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে যাবেন প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে। কেননা আমাদের রাজনীতিকেরা চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পেলেও সাধারণ মানুষ চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পান না।
BBS cable ad

সম্পাদকীয় এর আরও খবর: