বাংলাদেশ কি সোনা চোরাচালানের রুট?

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘বাংলাদেশ কি সোনা চোরাচালানের রুট হয়ে গেল? ভাবতেই লজ্জা লাগে। বোঝা যায় যে ৬০০ কেজি সোনা ধরা পড়ছে, কিন্তু ধরা পড়ছে না ছয় হাজার কেজি। ৬০০ কেজি ধরা পড়ছে ধরা না পড়া ছয় হাজার কেজি সোনাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য।’
রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে গতকাল মঙ্গলবার ‘আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস’ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কাস্টমস এ সেমিনারের আয়োজক।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন। আরও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এনবিআর সদস্য ফরিদউদ্দিন। এনবিআরের কমিশনার লুৎফর রহমান ‘ডিজিটাল কাস্টমস: ক্রমবর্ধমান সংযোগ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ৬০ হাজার কোটি টাকা ও ব্যবসায়ীদের কাছে মামলার কারণে আটকা ৩০ হাজার কোটি টাকাকে আর্থিক খাতের দুটি বড় ‘ক্যানসার’ বলে উল্লেখ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বেশির ভাগই শুল্ক-সম্পর্কিত।’
তবে কয়েক বছরে এনবিআরের মানসিকতার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বলে জানান মাতলুব আহমাদ। বলেন, ‘আগে এনবিআরের কাউকে দেখলে অন্যদিকে হাঁটা দিতাম। এখন তা করতে হয় না। এখন এনবিআরের কর্মকর্তারা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। বলেন, ভাই, আসুন, সমস্যা কোথায় বলুন?’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একসময় মনে করতাম শুল্ক বিভাগ বাতিল হয়ে যাবে। মুক্ত বাণিজ্যব্যবস্থায় আবার এ বিভাগের কাজ কী! কিন্তু যতই মুক্ত বাণিজ্য হোক, এটা থাকবেই।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির বক্তব্যের শুল্ক মামলা অংশটুকুর বিষয়ে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘মামলার পরিবর্তে সালিসি চালু আছে। কিন্তু সুযোগটি কেউ নিচ্ছেন না। কেন নিচ্ছেন না, কী অসুবিধা?’
দুর্ভোগ না বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের পরামর্শ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বলেন, ‘এ সরকার ব্যবসাবান্ধব। তবে রাজস্ব আদায়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ানো যাবে না।’ অনেকে আন্দাজের ওপর নেতিবাচক লেখালেখি করে সরকারের ক্ষতি করেন বলে মনে করেন তোফায়েল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ অনেকের কাছে অনুকরণীয় দেশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে অনবরত বিরোধিতা করে আসছে যে ইকোনমিস্ট পত্রিকা, তারাও এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন লিখছে।’
বাংলাদেশ যাতে সোনা চোরাচালানের রুট হতে না পারে, সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ চান অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘জাতির গায়ে এ কলঙ্ক লেপন হতে দেওয়া যাবে না।’
কাস্টমসের একজন কর্মকর্তার বদলির সুপারিশ বিষয়ে একটি গল্পও করেন জনাব রাজ্জাক। বলেন, ‘এক কর্মকর্তার বদলি হলো ঢাকায়। তদবির হলো, তাঁকে কমলাপুর আইসিডি বা বিমানবন্দরে আনতে হবে। অথবা চট্টগ্রামে। আমার প্রশ্ন, ঢাকায় বদলিই তো বড়। নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে চাওয়ার উদ্দেশ্য কী?’
সার্টিফিকেট পেলেন ২০ জন: কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় পাঁচ ব্যবসায়ী ও কাস্টমসের ১৫ কর্মকর্তাকে সার্টিফিকেট অব মেরিট দেন অর্থমন্ত্রী। ব্যবসায়ীরা হলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মাহবুবুল আলম, পরিচালক শেখ ফজলে ফাহিম ও হাসিনা নেওয়াজ, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হায়দার আহমেদ খান। কাস্টমসের কর্মকর্তারা হলেন তিন অতিরিক্ত কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী, সৈয়দ মুশফিকুর রহমান ও কাজী তৌহিদা আখতার; তিন যুগ্ম কমিশনার মিয়া মো. আবু ওবায়দা, মো. গিয়াস কামাল ও শামীমা আক্তার; চার উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, রোজিনা পারভীন, মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও লুবানা ইয়াসমিন; চার সহকারী কমিশনার নুসরাত জাহান, বদরুজ্জামান মুন্সী, নাজমুন নাহার ও সানজিদা খানম এবং সহকারী কর্মকর্তা প্রিতীশকুমার চৌধুরী।