মালিকের হাতে ফিরল হলি আর্টিজান

নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি সাড়ে চার মাস পর প্লট মালিকের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদর রহমান জানান, প্লটমালিক সামিরা আহম্মদ তার সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আদালতে আবেদন করেছিলেন।
“আদালত অনুমতি দেওয়ায় আমরা ওই জমি ও ভবন রোববার বিকালে প্লট মালিকের কাছে হস্তান্তর করেছি।”
গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর প্লটটি ১৯৭৯ সালে ‘আবাসিক ভবন কাম ক্লিনিক গড়ে তোলার জন্য’ ডা. সুরাইয়া জাবিনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। গুলশান লেকের পার ১৯৮২ সালে ওই প্লটের একপাশে গড়ে তোলা হয় লেকভিউ ক্লিনিক।
জঙ্গি হামলার আগে হলি আর্টিজান বেকারি ছিল এমনই জঙ্গি হামলার আগে হলি আর্টিজান বেকারি ছিল এমনই সুরাইয়া জাবিনের মৃত্যুর পর প্লটের মালিক হন তার মেয়ে সামিরা আহম্মদ ও সারা আহম্মদ। সামিরার স্বামী সাদাত মেহেদী তার বন্ধু নাসিমুল আলম পরাগসহ কয়েকজন মিলে ২০১৪ সালের জুনে ওই জমির খালি অংশে গড়ে তোলেন হলি আর্টিজান বেকারি।
লেকের ধারে খোলামেলা পরিবেশে দ্বিতল ভবনের ওই ক্যাফে দ্রুত বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ক্যাফের সঙ্গে সবুজ লনে বিদেশি অনেকে চাদর বিছিয়ে রোদ পোহাতেন, শিশুদের খেলার পর্যাপ্ত জায়গাও ছিল।
জনপ্রিয়তা বাড়ায় এক সময় মূল ফটকের ঠিক পাশেই বসানো হয় পিজা কর্নার। চলতি বছরের শুরুতে যোগ হয় আইসক্রিমের স্টল।
এরপর রোজার মধ্যে ১ জুলাই রাতে একদল জঙ্গি হলি আর্টিজানে ঢুকে বিদেশিসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে তারা। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।
ঘটনার পরপরই সেখানে গিয়ে নিহত হন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর সকালে অভিযান শেষে ছয় জঙ্গির লাশ পাওয়ার কথা জানায় নিরাপত্তা বাহিনী।
সাঁজোয়া যান নিয়ে ওই অভিযানে হলি আর্টিজান বেকারি অনেকটাই বিধ্বস্ত হয়। ওই প্লটের দায়িত্ব নেয় পুলিশ। ফটকে তালা দিয়ে বসানো হয় সার্বক্ষণিক প্রহরা।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্ত ও আলমত সংরক্ষণের প্রয়োজনে সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে কূটনৈতিক পাড়া গুলশানের নিরাপত্তা ভেদ করে ওই হামলার ঘটনার পর আসাসিক প্লট ও ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
জঙ্গি হামলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর হলি আর্টিজান বেকারি জঙ্গি হামলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর হলি আর্টিজান বেকারি গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সে সময় বলেছিলেন, ওই জমিতে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছিল। এ জন্য মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
ইজারার শর্ত ভঙ্গ করায় এরপর রাজউকের পক্ষ থেকে নোটিস পাঠানো হয়। সেই নোটিস মালিকের হাতে না পৌঁছানোয়, হলি আর্টিজানের ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় নোটিস।
এরপর প্লটের মালিক আদালতে গেলে সম্প্রতি বিচারক তার পক্ষেই আদেশ দেন। সেই আদেশের ভিত্তিতে পুলিশ রোববার নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দেয়।
সামিরা আহমেদের স্বামী সাদাত মেহেদী বলেন, তারা আবার তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করবেন।
“আমরা আদালতের কাছে ওইরকম আবেদন করেছি, আদালত আমাদের অনুমতি দিয়েছে।”
হলি আর্টিজান বেকারির বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইল মেহেদী বলেন, “ওই প্লট অবৈধ ছিল না। এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর পারমিশন ছিল না। আমরা আপাতত লেকভিউ হাসপাতালটা চালাব।”
হলি আর্টিজান বেকারি আবার চালু হবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা সেখানে থাকব ইনশাল্লাহ।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাজউক চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী বলেন, “আমরা বিষয়টি জেনেছি। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আমরা সেখানে লোক পাঠিয়েছি।”