শিরোনাম

South east bank ad

নলছিটিতে পাখি হত্যাকারীর বিরুদ্ধে দুটি জিডি : ছাড় দেবে না বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট

 প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ভিন্ন খবর

নলছিটিতে পাখি হত্যাকারীর বিরুদ্ধে দুটি জিডি : ছাড় দেবে না বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট

রাজু খান (ঝালকাঠি) : ঝালকাঠির নলছিটিতে বাবুই পাখির বাসায় আগুন দিয়ে ছানা পোড়ানোর ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রূম্পা সিকদার অপরাধীকে ক্ষমা করে দিলেও ছাড় দেবেন না ঢাকা বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক জহির আঁকন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই মামলা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদকারী যুবক আবদুল্লাহ আল শিপন নিজের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন। আর এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে আরেকটি জিডি করেছেন নলছিটির বন কর্মকতা কার্তিক চন্দ্র মন্ডল। নলছিটি থানার ওসি আলী আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, রোববার করা জিডির বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক জহির আকন সাংবাদিকদের জানান, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে, প্রত্যক্ষদশর্ীদের স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। জিডির বিষয়ে যুবক আব্দুল্লাহ আল শিপন বলেন, আমি সেদিন পাখিদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছি। নিজের বিবেকের তাড়নায় ওদের জন্য সামাজিক মাধ্যমে ছবি পোস্ট করে সামাজিকভাবেও প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু তারপর দেখলাম আমার জীবন হুমকির মুখে। যদিও অনেক সংবাদ মিডিয়া, প্রশাসন, বনবিভাগ আমার পাশে আছে। কিন্তু সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল ঝালকাঠির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এলে তার উপস্থিতিতেই পাখি পোড়ানো জালাল সিকদার আমাকে অপমান করে। এছাড়া তিনি ও তার স্বজনরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি ভয়ভীতি দেখিয়েছে। তাই নিজের নিরাপত্তা চেয়ে নলছিটি থানায় জিডি করেছি।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানাগেছে, ক্ষেতের ধান নষ্ট ও কিচিরমিচির শব্দ করায় আক্রোশ মেটাতে আগুন দেওয়া হয় বাবুই পাখির বাসায়। আর এতে পুড়ে মারা যায় বাসায় থাকা অন্তত ৩৩ বাবুইছানা। গত শুক্রবার (৯এপ্রিল) ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে ওই গ্রামের ওয়াজেদ আলী সিকদারের ছেলে জালাল সিকদার। আগুনে প্রায় ২০টি বাসা ধ্বংস হয়েছে ও ৩০টি ছানা মারা গেছে। গাছে যে কটি বাবুই পাখির বাসা অক্ষত ছিল, তান্ডবের পর তাতে পাখি নেই। ভয়ে বাসা ছেড়ে চলে গেছে। শুধু ওই গাছটিতেই না পার্শবর্তি গাছগুলোতে নেই কোন পাখির বাসা। এক সময়ের পাখির অভয়া শ্রম ওই এলাকায় এখন আতঙ্কে পাখিশূন্য। এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে শনিবার (১০এপ্রিল) সকালে পুড়ে যাওয়া পাখির বাচ্চা ও বাসাগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলে জালাল সিকদার।
এমন নৃশংসতার ভিডিও যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেয়ায় নিরাপত্তা চেয়ে নলছিটি থানায় জিডি করেছেন। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের আগে জালাল লম্বা বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে একটি তাল গাছের একাধিক বাবুই পাখির বাসা ছুটিয়ে ফেলে। এরপর বঁাশের মাথায় কাপড় পেঁচিয়ে তাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে বাসা পুড়িয়ে দেয়। এভাবে ৩৩টি বাবুই পাখির ছানা পুড়িয়ে মারে সে। এই নির্মম ঘটনার সময় বাবুই পাখিরা আতঙ্কিত হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি ও কিচিরমিচির শব্দ করছিল। একই গ্রামের মালেক মল্লিকের তালগাছে ছিল পাখির বাসাগুলো। সেই গাছের নিচেই জালাল সিকদারের মুদি দোকান। জালাল সিকদার বলেন, বাবুইপাখি আমার ক্ষেতের প্রচুর ধান নষ্ট করে প্রতিদিন। এ ছাড়া পাখির কিচিরমিচির শব্দে আমি অতিষ্ঠ। এ কারণে এ ঘটনা ঘটালেও পরে বুঝতে পেরেছি এটা আমার ভুল হয়েছে। শনিবার রাতে ইউএনও ম্যাডাম আমাকে ডেকেছিলেন, তার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি আমাকে মাফ করেন।
এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোসাম্মৎ জেবুন্নেছা বলেন, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী মারা নিষিদ্ধ। জালাল যে কাজ করেছে এটা সমাজে খারাপ বার্তা দেবে। অতিষ্ঠ হলেও বিকল্প উপায়ে ওদের সরিয়ে দিতে পারত। এভাবে পাখিদের মারতে পারে না। তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে সচেতন না হলে আমাদের জীববৈচিতত্র্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে।
অভিযুক্তকে ক্ষমা করলেন ইউএনওঃ- আক্রোশে বাবুই পাখির বাসায় আগুন দিয়ে ছানা পোড়ানোর ঘটনার সত্যতা না পেয়ে নলচেটি উপজেলার ইউএসও অভিযুক্ত জালাল সিকদারকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। শনিবার (১০এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় পুলিশ পাঠিয়ে জালাল সিকদারকে ধরিয়ে নেন ইউএনও রূম্পা সিকদার।। জালাল সিকদার আগুন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও পাখির বাসা পিটিয়ে ভাঙার কথা স্বীকার করেছেন। এ জন্য ভুল স্বীকার করায় ইউএনও রূম্পা সিকদার তাকে ক্ষমা করে দেন। ইউএনওর দাবি, পাখির বাসা বা ছানা পোড়ানোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে রোববার ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জোহর আলীর নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি পাখির বাসায় আগুন এবং ছানা পুড়িয়ে মারার সত্যতা পেয়েছেন বলে জানান।
অন্যদিকে, এই নির্মম ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা কলেজছাত্র আব্দুল্লাহ আল শিপন অভিযোগ করেছেন, পাখির পাশে দঁাড়ানোয় তার জীবন এখন হুমকির মুখে। চঁাদাবাজসহ বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন জালাল ও তার লোকজন। শিপন বলেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে ইউএনও আমাকে তার কার্যালয়ে যেতে বলেন। একই সঙ্গে ইউএনও পুলিশ পাঠিয়ে জালাল সিকদারকে ধরিয়ে নিয়ে যান। ইউএনওর দপ্তরে জালাল সিকদারের সঙ্গে তার লোকজনও ছিল। এ সময় তাদের কাছে ইউএনও ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায়, পাখির বাসা বা ছানার গায়ে আগুন দেওয়া হয়নি, ২-১টি বাসা পিটিয়ে ছুটিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আমার কোনো সাক্ষী না থাকায় জালাল সিকদারকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। শিপনের দাবি, ইউএনও ঘটনাস্থলে এলেই সত্যতা দেখতে পেতেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হাসান বলেন, কতটি পাখির ছানা পুড়ে মারা গেছে, তা তদন্তের বিষয়। তবে বাবুই পাখির বাসায় আগুন দেওয়া হয়েছে এটা সত্য।
ইউএনও রূম্পা সিকদার বলেন, পাখির বাসায় আগুন দেওয়া বা ছানা পুড়িয়ে মারার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। পাশাপাশি পাখির বাসা পিটিয়ে ভেঙে ফেলার কথা স্বীকার করে জালাল সিকদার অনুতপ্ত হয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ায় তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। জালাল সিকদার আমাকে বলেছে, তার প্রচুর ধান খেয়ে ফেলায় মাথা গরম হওয়ায় তিনি ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিষয়টি ক্ষমার যোগ্য মনে করায় জালাল সিকদারকে ক্ষমা করা হয়েছে।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. হাবিবুল্লাহ জানান, বাবুই পাখির বাসায় আগুনের ঘটনায় নলছিটি থানার ওসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে এলে তা গ্রহণ করে আদালতে পাঠিয়ে দিতে।

BBS cable ad

ভিন্ন খবর এর আরও খবর: