আবুল খায়ের গ্রুপ এর অর্থায়নে নির্মিত ব্যারাক উদ্বোধন করলেন আইজিপি
প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত ধনী দেশে পরিণত করার স্বপ্ন দেখছেন। উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়তে কাজ করছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।
আইজিপি আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে প্রধান অতিথি হিসেবে আবুল খায়ের গ্রুপ আবুল খায়ের গ্রুপ এর সম্পূর্ন নিজস্ব অর্থায়নে এবং তত্ত্বাবধানে নির্মিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা আঞ্চলিক পুলিশ লাইন্সের নবনির্মিত ব্যারাক ভবন উদ্বোধন করেন। পরে আইজিপি পুলিশ লাইন্স চত্বরে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা রোপণ করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ এর পুরুষ সদস্যদের আবাসনের জন্য ব্যারাক তৈরী করে দিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। আধুনিক প্রয়ুক্তি ও বিশ্বমানের কালার কোটেড শীট. নিজস্ব স্টীল কারখানায় তৈরী নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে উন্নতমানের আবাসন তৈরি করায় আইজিপি আবুল খায়ের গ্রুপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি পুলিশের ব্যারাক ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করার জন্য আবুল খায়ের গ্রুপকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের আবাসিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আমরা স্বল্পমেয়াদে অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যারাক ভবন নির্মাণ করেছি। ডেমরায় করা হয়েছে, উত্তরাতে আজ করা হলো। পূর্বাচলেও আমরা ব্যারাক ভবন নির্মাণ করব। দীর্ঘমেয়াদে আমরা বহুতল ভবন নির্মাণের দিকে যাব। পুলিশ ফোর্সের বসবাসের ঘনত্ব কমিয়ে তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক আবাসনের ব্যবস্থা করতে চাই আমরা।
আইজিপি বলেন, উন্নত দেশের পুলিশ হতে হলে পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে বিট পুলিশি়ংয়ের মাধ্যমে, পুলিশকে মাদকমুক্ত হতে হবে, পুলিশে থেকে মানুষের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেয়া যাবে না। মানুষের প্রতি নিষ্ঠুরতা নয়, মানবিক আচরণ করতে হবে। জনগণের সেবায় নিয়োজিত পুলিশ অফিসার ও ফোর্সের সার্বিক কল্যাণও নিশ্চিত করা হবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি তাঁর এ পাঁচ বার্তা সকল স্তরের পুলিশ সদস্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবুল খায়ের গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও দাবা ফেডারেশন এর সহ-সভাপতি মোঃ আবু সাঈদ চৌধুরী।
অতিরিক্ত আইজি ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরীসহ ঢাকাস্থ বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, অতিরিক্ত আইজিগণসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমরা মাত্র দুই সপ্তাহে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে ২৫০ বেড থেকে ৫০০ বেডের কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করেছি। পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় একটি উন্নত বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে, স্কুল-কলেজ এবং হোটেল ভাড়া করে আইসোলেশন সেন্টারে পরিণত করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য যেখানে চার সপ্তাহের কম সময়ে পিসিআর মেশিন স্থাপন করা যায় না, সেখানে মাত্র ১২ দিনে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতলে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে বিভাগীয় হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এর ফলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং মৃত্যুর হার কমছে। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হয় পুলিশে মৃত্যুর হার মাত্র ০.৫ ভাগ। জাতীয় পর্যায়ে এ হার ১.৩ ভাগ।
আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল দেশের বিভিন্ন হাসপাতল পরিদর্শন করে করোনা চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে সেরা বলে আখ্যায়িত করেছেন। চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও করোনা চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসা প্রটোকল ও ব্যবস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
প্যানডেমিক পুলিশিং ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমরা ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তাদের দেশের প্যানডেমিক পুলিশিং গাইডলাইন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন দেশের গাইডলাইন সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পুলিশের উপযোগী 'প্যানডেমিক পুলিশিং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)' তৈরি করেছি। এখন আমাদের একজন পুলিশ কনস্টেবলও জানেন, কিভাবে প্যানডেমিক পুলিশিং করতে হয়।
আইজিপি বলেন, করোনা সংক্রমণ কিভাবে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। জাতীয়ভাবেও এ হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য সবাইকে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে এ দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারব।
এ সময় উপস্তিত আবুল খায়ের গ্রুপ এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্রিগে. জেনারেল (অব.) শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, করোনায় সম্মূখযোদ্ধা পুলিশদের উন্নতমানের আবাসনের কথা মাথায় রেখে আমরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে এ ব্যারাক তৈরি করেছি। প্রত্যেকটা বেডে প্রযুক্তিবান্ধব প্লাগ, ওজুর জন্য সুব্যবস্থা এ ব্যারাকের আলাদা সংযক্তি। করোনার ব্যাপকতা ও ঘুর্নিঝড় আম্পান এর কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটলেও দ্রুততার সাথে কাজ সম্পন্ন করেছি।
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপ। দেশের যেকোনো প্রয়োজনে ঝাপিয়ে পড়ে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে। করোনা মহামারীর শুরু থেকেই প্রচারবিমুখ এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি নিরবে কাজ করে চলেছে।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঝুকিপূর্নদের জীবন বাচাতে আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে এমন খবরে এগিয়ে আসে আবুল খায়ের গ্রুপ। আবুল খায়ের গ্রুপের একেএস প্লান্ট তাদের উৎপাদিত অক্সিজেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। করোনা চিকিৎসায় দেশের সব সরকার নির্ধারিত হাসপাতাল ও সেনানিবাসের সব হাসপাতালকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করবে আবুল খায়ের গ্রুপ।
ঢাকা সেনানিবাসে মেজর জেনারেল মো. এনায়েতউল্লাহ বিএসপি,এনডিইউ, পিএসসি এর সাথে সাক্ষাত করে ১০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন হস্তান্তর করে আবুল খায়ের গ্রুপ। এর আগে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ হাসপাতালকে ৩০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন সরবরাহ করে।
আবুল খায়ের গ্রুপের একেএস প্লান্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্লান্ট । এটি স্টীল উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ২৬০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করে। এটি । যদিও আবুল খায়ের গ্রুপের একেএস প্লান্ট এর উৎপাদিত অক্সিজেন বিক্রয়ের জন্য নয়। কিন্তু মানবিক কারনে এগিয়ে এসেছে আবুল খায়ের গ্রুপ। দেশের মানুষকে সাহায্য করার জন্য আবুল খায়ের গ্রুপ সিলিন্ডারে অক্সিজেন ফিলিং ব্যবস্থা সংযোজন করে। এরপর বিদেশ থেকে আমদানীকৃত ৩০০ সিলিন্ডারে অক্সিজেন ফিলিং সম্পন্ন করে।
বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এনজিপি,এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি এর অনুরোধে কর্মহীন, অসহায় ৫৫০০ নৌযান শ্রমিককে খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আবুল খায়ের গ্রুপ এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান অব্যাহত রয়েছে । ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পোশাক (পিপিই), মাস্ক, গ্লাভস, বিশেষ নিরাপত্তা চশমা, থার্মোমিটারসহ বিভিন্ন সামগ্রী হস্তান্তর করে চলেছে আবুল খায়ের গ্রুপ।



