তৃতীয় কারখানায় বিনিয়োগ বাড়াবে বার্জার পেইন্টস
বহুজাতিক রঙ উৎপাদক বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড তাদের তৃতীয় উৎপাদন কারখানার জন্য বিনিয়োগ পরিকল্পনা সংশোধন করেছে। কোম্পানিটির পর্ষদ পূর্বনির্ধারিত ৮১৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৯৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ অনুমোদন করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে গতকাল এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুসারে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নকশা পরিবর্তন, উন্নত অটোমেশন, যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা (এমইস) যুক্ত করা এবং নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। নকশা পরিবর্তনের কারণে সময় বেশি লাগবে বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটির পর্ষদ বাণিজ্যিক উৎপাদনের নতুন তারিখ ২০২৭ সালের ১ এপ্রিল নির্ধারণ করেছে। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলেই উৎপাদন শুরুর কথা ছিল।
বাণিজ্যিক উৎপাদনের সময়সূচি পরিবর্তনের কারণে রাইট শেয়ার থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যয়ের সময়সীমা ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার্জার পেইন্টস। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন সাপেক্ষে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে আগামী ১৮ ডিসেম্বর বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করেছে কোম্পানিটি। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ নভেম্বর।
বার্জার পেইন্টসের রাইট শেয়ার ইস্যুর সাবস্ক্রিপশন চলতি বছরের ৩ আগস্ট শেষ হয়। শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটি ৩০২ কোটি ৮২ লাখ ৩ হাজার ২১০ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে, যা হাতে পায় গত ২০ আগস্ট। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এ অর্থ ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যয় করার কথা ছিল। যদিও এখন তা বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে প্রথম এ কারখানার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বার্জার পেইন্টস। তখন আনুমানিক বিনিয়োগ ধরা হয়েছিল ৪৮০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা সংশোধন করে ৮১৩ কোটি টাকা করা হয়। এবার সেটি ৯৮০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে চলতি ২০২৫-২৬ হিসাব বছরের প্রথেমার্ধে (এপ্রিল-জুন) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩১ টাকা ১৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩২ টাকা ২৮ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৫৬ টাকা ৩৩ পয়সায়।
সর্বশেষ ৩১ মার্চ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ৫২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে বার্জার পেইন্টসের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৭২ টাকা ৬৬ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৬৯ টাকা ৯২ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২৫ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ টাকা ৪২ পয়সায়।
সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ৫০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে বার্জার পেইন্টসের ইপিএস হয়েছে ৬৯ টাকা ৯২ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৬৪ টাকা ৯১ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২৪ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩০৯ টাকা ৫৩ পয়সায়।
সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে বার্জার পেইন্টসের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৬৪ টাকা ৯১ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৬২ টাকা ৬৮ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২৩ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৭৯ টাকা ৭৮ পয়সায়।
বার্জার পেইন্টসের সর্বশেষ ঋণমাণ দীর্ঘমেয়াদে ‘ট্রিপল এ’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি ওয়ান’। ৩১ মার্চ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন এবং রেটিং ঘোষণার দিন পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক অন্যান্য পরিমাণগত ও গুণগত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রত্যয়ন করেছে ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (সিআরআইএসএল)।
২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বার্জার পেইন্টসের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৪৯ কোটি ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ৫০৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৯১ লাখ ৫ হাজার ৯৯১। এর ৮৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৮ দশমিক ৩০, বিদেশী বিনিয়োগকারী দশমিক ১০ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।


