৭ বছরেও আইপিওর টাকায় ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেনি আমান কটন

ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে পুঁজিবাজার থেকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল আমান কটন ফাইব্রাস পিএলসি। তবে আইপিওতে আসার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ব্যবসা সম্প্রসারণে ১ টাকাও ব্যয় করতে পারেনি কোম্পানিটি। আইপিও তহবিলের ৮৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ অর্থ এখনো অব্যবহৃত রয়েছে বলে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আইপিও তহবিল ব্যবহারসংক্রান্ত নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, এ বছরের জুলাই শেষে আইপিওর ৮০ কোটি টাকার মধ্যে ৮ কোটি ২৫ লাখ ১ হাজার ৬৬৩ টাকা ব্যয় করেছে আমান কটন, যা মোট তহবিলের ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ। অব্যবহৃত রয়েছে ৭১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩৭ টাকা। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি বাবদ ৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ও ব্যবসা সম্প্রসারণ বাবদ ৫ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখনে পর্যন্ত এ দুই খাতে কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি কোম্পানিটি।
কোম্পানিটির আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে নিরীক্ষক তার মতামতে জানিয়েছেন, বর্তমানে কোম্পানিটির ব্যাংকে গচ্ছিত এফডিআরের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ৯১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬০ টাকায়। এর মধ্যে ৭৩ কোটি টাকা আসল ও ৭ কোটি ৯১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬০ টাকা সুদ। এফডিআরের ক্ষেত্রে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৩৮ কোটি ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে ৩৫ কোটি রাখা হয়েছে। এফডিআরের বিপরীতে লিয়েন সুবিধার আওতায় আমান ফুডস লিমিটেড ও আকিন ক্যারিয়াস লিমিটেড ঋণ সুবিধা ভোগ করছে। ২০২১ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এ বিনিয়োগের বিষয়ে অনুমোদন নেয়া হয়েছে।
নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আন্তঃকোম্পানি ঋণ হিসেবে গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৮ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ৭৯২ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ধরনের অর্থ স্থানান্তরের আগে এজিএমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন নিরীক্ষক। নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কোম্পানির পর্ষদ সভায় যন্ত্রপাতি ও ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আইপিওর অর্থ ব্যয়ের সময়সীমা ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর কিংবা সে বছরের এজিএম যেটি আগে আসবে সে সময় পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আইপিওর টাকা ব্যাংকে এফডিআর করে সেই এফডিআরের বিপরীতে গ্রুপের অন্য কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে অপব্যবহারের কারণে ২০২২ সালে আমান কটনের প্রত্যেক পরিচালককে ৩ কোটি টাকা করে জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তাছাড়া সম্প্রতি ব্যাংক এশিয়ার ৪৮০ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলায় আমান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, মো. তৌফিকুল ইসলাম ও মো. তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আইপিওর অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও আমান কটনের কোম্পানি সচিব শরীফুল আলমের সাড়া পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) আমান কটনের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ১ পয়সা। এ বছরের ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৩৮ পয়সায়।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৪ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছিল আমান কটনের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ২৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৯৪ পয়সা।
২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আমান কটন ফাইব্রাসের অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
রিজার্ভে রয়েছে ১৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩। এর ৪৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ১২ শতাংশ বিদেশী ও বাকি ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।