দেশে প্রথম ইইউ জিএমপি সনদ অর্জন করেছে রেনাটা

ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি রেনাটা পিএলসি ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (ইইউ জিএমপি) সনদ অর্জন করেছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শক্তিশালী ওষুধ উৎপাদন সুবিধা বা পেটেন্ট প্রডাক্ট ফ্যাসিলিটির জন্য এ অনুমোদন পেয়েছে কোম্পানিটি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে গতকাল এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুসারে, মিরপুরে অবস্থিত কারখানার শক্তিশালী ওষুধ উৎপাদন সুবিধার জন্য ইইউ জিএমপি অনুমোদন পেয়েছে রেনাটা। এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইইউ জিএমপি অনুমোদিত শক্তিশালী পণ্য উৎপাদন কারখানা, যা একটি মাইলফলক। জার্মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ‘স্যাক্সনি-আনহাল্ট’ কারখানাটি পরিদর্শনের পর এ অনুমোদন দেয়া হয়।
এর আগে রেনাটার বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্র যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ), যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ), ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্সপেকশন কো-অপারেশন স্কিম (পিআইসি/এস) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রি-কোয়ালিফিকেশন (ডব্লিউএইচও-পিকিউ), কানাডার হেলথ কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ব্রাজিলের জাতীয় স্বাস্থ্য নজরদারি সংস্থাসহ (এএনভিআইএসএ) বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) রেনাটার আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৮২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২৬৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
প্রথম তিন প্রান্তিকে রেনাটার শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৫ টাকা ৯৫ পয়সা, আগের বছরে যা ছিল ২২ টাকা ৯৫ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২৫ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩০২ টাকা ৪৯ পয়সায়।
সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ৯২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে রেনাটার পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩১ টাকা ৫৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২০ টাকা ৪০ পয়সা। ৩০ জুন ২০২৪ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৯৫ টাকা ৫৬ পয়সায়।
সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে রেনাটার পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২০ টাকা ৪০ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৪৪ টাকা ৫৬ পয়সা। ওই বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৬৬ টাকা ৮৭ পয়সায়।
রেনাটার সর্বশেষ সার্ভিল্যান্স রেটিং দীর্ঘমেয়াদে ‘ট্রিপল এ’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি ওয়ান’। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৪ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও ৭ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত কোম্পানিটির প্রাসঙ্গিক অন্যান্য গুণগত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রত্যয়ন করেছে আলফা ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (আলফা রেটিং)।
১৯৭৯ সালে পুঁজিবাজারে আসা রেনাটা পিএলসি ১৯৭২ সালে মার্কিন ওষুধ জায়ান্ট ফাইজারের একটি কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে যাত্রা করে। ১৯৯৩ সালে ফাইজার স্থানীয় শেয়ারহোল্ডারদের কাছে তাদের মালিকানা বিক্রি করে চলে যায় এবং কোম্পানির নাম ফাইজার (বাংলাদেশ) লিমিটেডের বদলে হয় রেনাটা লিমিটেড। বর্তমান নাম রেনাটা পিএলসি। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২৮৫ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১১৪ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৩ হাজার ২৭২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯০। এর ৫১ দশমিক ২৯ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২১ দশমিক ৮৬, বিদেশী বিনিয়োগকারী ২১ দশমিক ৮৬ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।