শিরোনাম

South east bank ad

ছাড় দিয়েও ক্রেতা পাচ্ছে না বড় ফ্যাশন হাউজগুলো

 প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   কনজুমার প্রোডাক্টস

প্রতি ঈদের আগেই জমজমাট হয়ে ওঠে বড় ফ্যাশন হাউজগুলোর ব্যবসা। ঈদ সামনে রেখে বর্ণাঢ্য ও ভিন্নধর্মী নতুন ডিজাইনের পোশাক বাজারে নিয়ে আসার মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণের প্রয়াস চালায় ফ্যাশন হাউজগুলো। সাড়া মেলে ক্রেতাদের কাছ থেকেও। নিজ নিজ সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী ঈদের পোশাক কিনতে এসব ফ্যাশন হাউজের আউটলেটগুলোয় ভিড় জমান ক্রেতারা। কিন্তু এবার সবকিছুই ওলটপালট করে দিয়েছে চলমান মহামারী পরিস্থিতি। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ছাড় দিয়েও ক্রেতা পাচ্ছে না দেশের বড় ফ্যাশন হাউজগুলো। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের নামিদামি ফ্যাশন হাউজগুলোর সারা বছরের পোশাক বিক্রির প্রায় ৬০ শতাংশই হয়ে থাকে পহেলা বৈশাখ ও দুই ঈদকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রোজার ঈদে। এসব উৎসব ও পার্বণকে ঘিরে তাই দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকে ফ্যাশন হাউজগুলো। কিন্তু মহামারীর কারণে এ বছর কোনো উৎসব-পার্বণেই এসব প্রতিষ্ঠান পোশাক কেনাবেচায় তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। বেচাকেনা নেই আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করেও। এখনো আগের ঈদের মজুদই খালি করতে পারেনি এসব প্রতিষ্ঠান। মজুদ খালি করার জন্য ছাড়সহ আকর্ষণীয় নানা অফারও দিচ্ছে ফ্যাশন হাউজগুলো। তার পরও সাড়া মিলছে না ক্রেতাদের। দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর মধ্যে রয়েছে ইয়েলো, সাদাকালো, আড়ং, কে-ক্রাফট, অঞ্জন’স, রঙ, ক্যাটস আই, অন্যমেলা, বাংলার মেলা, ওজি, নবরূপা, গ্রামীণ চেক, নগরদোলা, দেশাল, নীলাঞ্জনা, রিচম্যান, লুবনান, ফ্রিল্যান্ড, দর্জিবাড়ী, লা রিভ, ইজি ফ্যাশন, স্মার্টেক্স, সেইলর, ইনফিনিটিসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের ঈদ ও বৈশাখ সামনে রেখে আনা নতুন নতুন ব্র্যান্ডেড পণ্য বিক্রি হয় নিজস্ব শোরুমেই। দেশী-বিদেশী এসব ফ্যাশন হাউজের বেশির ভাগই এখন মূল্যছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটেই দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের বিজ্ঞাপন। বিশাল মূল্যছাড়ের বিজ্ঞাপন টাঙানো রয়েছে নিজ নিজ শোরুমগুলোর সামনেও। অনলাইন কেনাকাটায় ফ্রি ডেলিভারির সুবিধাও দিচ্ছে অনেক হাউজ। কিন্তু তার পরও সাড়া মিলছে না ক্রেতাদের। ফ্যাশন হাউজ সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর শুধু পহেলা বৈশাখ ও রোজার ঈদে দেশের ফ্যাশন হাউজগুলো প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে। কিন্তু এবার সেটা হয়নি। আবার চার মাস ধরেই কোনো বেচাবিক্রি নেই। যদিও ভাড়া, সার্ভিস চার্জসহ পরিচালন ব্যয় টানতে হচ্ছে আগের মতোই। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়েছে যে এ মুহূর্তে টিকে থাকাটাই ফ্যাশন হাউজগুলোর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্যাশন হাউজ সাদাকালোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফ্যাশন অন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি আজহারুল হক আজাদ বলেন, আমাদের সবাই টিকে থাকার চেষ্টা করছে। কেউ মূল্য ছাড় দিচ্ছে। আর আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে অনলাইন মেলা চলছে। সেখানে প্রায় সব ফ্যাশন হাউজই অংশ নিচ্ছে। যত উইন্ডো আছে সব খুলে দিয়ে চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু এটা খুব যে বেশি ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা নয়। এটা হয়তো আরো খারাপ অবস্থায় চলে যাবে। বৈশাখ ও ঈদে যেহেতু বেচাকেনা হয়নি, সেখানে অনেক প্রডাক্ট আটকে গেছে সবার। আর এ চার মাস ধরে ভাড়া, স্টাফদের বেতনসহ সবকিছুই বহন করতে হচ্ছে। তাই হাউজগুলো মনে করছে প্রডাক্টগুলো আটকে রেখে লাভ নেই। এ কারণে মূল্যছাড় দিয়ে পোশাক বিক্রি করে আয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এতেও তেমন বিক্রি হচ্ছে না। এর পরও নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো। ছাড় দিলেই যে মানুষ পোশাক কিনতে আসবে, তা নয়। হয়তো একটার জায়গায় দুইটা বিক্রি হবে, এ-ই যা। ফ্যাশন হাউজ মালিকদের সংগঠন ফ্যাশন অন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতারা জানান, দেশে ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ লোক সরাসরি কাজ করে। পরোক্ষভাবে যুক্ত লোকজনের হিসাব করলে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। করোনার প্রভাবে এ খাতসংশ্লিষ্ট সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রান্তিক কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীরাও এর সঙ্গে জড়িত। কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীদের মজুরি সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয় ঈদের পর। এটা এক ধরনের নিয়মেও পরিণত হয়েছে। কিন্তু এবার বিক্রি না থাকায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক না হলে ডিসেম্বরের পর অনেক ফ্যাশন হাউজ তাদের আউটলেটের সংখ্যাও কমিয়ে ফেলবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনেক প্রান্তিক মানুষও। ফ্যাশন অন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, করোনার কারণে সারা পৃথিবীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু আমাদের এ খাতে একটু বেশিই ক্ষতি হয়েছে। কারণ করোনার শুরু থেকেই বাজারে ক্রেতা কমতে থাকে। এরপর পহেলা বৈশাখ ও রোজার ঈদকে ঘিরে আমাদের বিশাল আয়োজন ছিল। এ দুটি উৎসবের জন্য আমাদের পোশাক তৈরিই ছিল। কিন্তু করোনার কারণে বিপদে পড়ে গেলাম। আমাদের সারা বছরের বিক্রির ৬০ শতাংশই বিক্রি হয় পহেলা বৈশাখ ও রমজানের ঈদে। কিন্তু এবার তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু মার্কেট খোলা হলেও সে সময় বিক্রি তেমন ছিল না। ঈদের পর খোলার পর প্রথম দিকে ক্রেতা তেমন ছিলই না। তবে সামনে ঈদ উপলক্ষে বিক্রি বাড়বে বলে মনে করছি। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ ক্রেতা ছিল, সেটা হবে না। মার্চ থেকে জুনে আমাদের কারো কারো বিক্রি ছিল শূন্যের কোঠায়। কিন্তু যাদের বেশি শোরুম ছিল, তারা হয়তো খুলেছিলও। কিন্তু তাদেরও এ চার মাসের বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের ৩-৪ শতাংশ হতে পারে। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও হতাশাকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন ফ্যাশন হাউজ উদ্যোক্তারা। তাদের ভাষ্যমতে, দেশের মানুষের মধ্যে করোনাভীতি আগের তুলনায় কমেছে। সবাই এখন ঘর থেকে বের হচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদ। রোজার ঈদে যারা কেনাকাটা করতে পারেননি, তাদের কিছু অংশ এবার কেনাকাটা করবেন। হাউজগুলো এখন যেভাবে বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে, তাতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এছাড়া পণ্যের মজুদও এখন অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। এখন দাম কম দেখে ক্রেতারা যদি একটু বেশি করে ক্রয় করে, তাহলে মজুদও ফুরোবে, কিছু অর্থ উপার্জনও হবে। এর মাধ্যমে হাউজগুলো এখন টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আর কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি হয়তো আরো অনুকূল হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। কে-ক্র্যাফটের উদ্যোক্তা খালিদ মাহমুদ খান বলেন, মূল্যছাড় দিয়েও যেভাবে সাড়া পাওয়া দরকার, ঠিক সেভাবে তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছি না। মূল্যছাড় ছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলো সেবার মান বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছে। যেহেতু করোনার কারণে ক্রেতারা তেমনটা মানসিক স্বস্তিতে নেই, তাই এটা তেমনটা কার্যকর হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ফেসবুকে যারা কেনাকাটা করছেন, তাদের আমরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের যেকোনো জায়গাতেই ফ্রি ডেলিভারি দিচ্ছি। ক্রেতারা যাতে খুশি হয়। কিন্তু এতে বড় কোনো প্রভাব পড়ছে না। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। আমরা ক্রেতাদের নানা ধরনের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি, যাতে তাদের কেনাকাটা স্বস্তিদায়ক হয়। অন্যদিকে রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি। নভেল করোনাভাইরাস তেমন কোনো কঠিন ভাইরাস না। কিন্তু এটা অর্থনীতির বড় ক্ষতি করে দিয়েছে। এখন আমাদের ছোট ছোট যেসব সহযোগী রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর আমরা যারা প্রসারিত করেছি, তাদেরও অনেকেরই বন্ধ করে দিতে হবে। এখন আমাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী-মজুদদাররাও রয়েছেন। আমরা পুরোপুরি নির্ভর করছি বৈশাখ ও ঈদের ওপর। তাই এজন্য বাধ্য হচ্ছি অনলাইনে নানারকম কার্যক্রম করে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য। সেটাতে মানুষ তেমন অভ্যস্ত না।
BBS cable ad

কনজুমার প্রোডাক্টস এর আরও খবর: