দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক এর এমডি ও সিইও হিসেবে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন মো. মাহবুব উল আলম
ভালো ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি থাকলেও ইসলামী ব্যাংকের সর্বজনীন গ্রাহণযোগ্যতা ছিল না। কিছু মানুষ হূদয় দিয়ে ভালোবাসলেও সরকার ও সমাজের অগ্রসর একটি শ্রেণী এ ব্যাংককে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতেন। ইসলামী ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা কম ছিল। এটি নিয়েও কথা হতো। পর্ষদে বড় পরিবর্তনের ফলে সরকার ও সুশীল সমাজের কাছে ইসলামী ব্যাংক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ও ভালো ব্যাংক হিসেবে আমরা সব শ্রেণীর মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন পাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নিয়মিতই ইসলামী ব্যাংকে আসছেন। এ ব্যাংকের কার্যক্রম ভেতর থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের সব শ্রেণীর মানুষ এখন ইসলামী ব্যাংককে নিজেদের প্রতিষ্ঠান মনে করছে। আর এ পরিবর্তনের নিরব কারিগর হলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উল আলম।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মাহবুব উল আলম এর আগে ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ইনভেস্টমেন্ট (ক্রেডিট) কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে মাহবুব ১৯৮৪ সালে শিক্ষানবিস কর্মকর্তা হিসেবে ইসলামী ব্যাংকে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩৪ বছরের কর্মজীবনে তিনি ব্যাংকটির কর্পোরেট ইনভেস্টমেন্ট, রিটেইল ইনভেস্টমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং এবং অপারেশন্স উইং, প্রধান কার্যালয়ের হেড অব ট্রেজারি ও বিভিন্ন ডিভিশন প্রধান এবং বিভিন্ন শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরুপ ‘সিইও অব দ্য ইয়ার-২০১৯’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন মো. মাহবুব-উল আলম। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স হাউজ ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজরি মো. মাহবুব-উল আলমকে এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
মো. মাহবুব-উল আলম এর প্রচেষ্টায় ইসলামী ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের জেপি মরগানের সঙ্গে চারটি হিসাব চালু করেছে।
মো. মাহবুব-উল আলম দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সম্প্রসারিত হয়েছে। এ সময়ে ইসলামী ব্যাংকের আমানত, বিনিয়োগ, মুনাফা, রেমিট্যান্স, আমদানি, রফতানিসহ ব্যবসার সব ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে। গত মাসে আমরা আমানতের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক এক মাইলফলক স্পর্শ করেছে ব্যাংকটি। এ সময়ে ইসলামী ব্যাংকের আমানত ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত ছয় মাসে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার আমানত বেড়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের আমানত ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। তবে অন্য ব্যাংকগুলোর আমানতের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের আমানতের মৌলিক তফাত রয়েছে। আমাদের ব্যাংকে কোনো সরকারি আমানত নেই। নেই কোনো বড় করপোরেটের আমানতও। ইসলামী ব্যাংকের আমানত হলো দেড় কোটি গ্রাহকের ক্ষুদ্র সঞ্চয়।
দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকদের পাশে ছিল। শাখাগুলোর প্রতি আমাদের নির্দেশনা ছিল, চাওয়া মাত্রই যেন গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেয়া হয়। শুরুর দিকে অনেক শাখা ব্যবস্থাপক আমানত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। দুঃসময়ে গ্রাহকদের পাশে দাঁড়ানোর ফল আমরা এরই মধ্যে পেয়েছি। গত তিন মাসের প্রতিটি দিন আমাদের আমানত বেড়েছে। এটি ইসলামী ব্যাংকের প্রতি গণমানুষের অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ।
রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুর নাম ইসলামী ব্যাংক। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও দেশের মোট রেমিট্যান্সের এক-চতুর্থাংশ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। গত অর্থবছরে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪১৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই ৫৮ কোটি ডলার এসেছে। গত মাসে ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১৬ শতাংশ। মে মাসেও ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। যদিও অতীতে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড ছিল ৩৯ কোটি ডলারের।
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করেছে ২০১৭ সালে। মো. মাহবুব-উল আলম এর পরিকল্পনায় দেশের শহরাঞ্চলে ইসলামী ব্যাংকের কোনো এজেন্ট নেই। তাদের সব এজেন্টই গ্রামে। এ সংখ্যা এখন ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। এজেন্টদের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ৭ লাখ ৫৩ হাজার গ্রাহক। এসব গ্রাহকের ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার আমানত এ ব্যাংকে জমা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এজেন্টরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এটি ঠিক প্রযুক্তির উত্কর্ষের কারণে দিনদিন ব্যাংকিং লেনদেনে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করার পক্ষে মো. মাহবুব-উল আলম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো এখন লেনদেনসহ অনেক সেবাই মোবাইল অ্যাপসে নিয়ে যাচ্ছে। তার পরও বাংলাদেশে আগামী ১৫-২০ বছর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রয়োজন হবে। কারণ দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে থেকে গেছে। প্রযুক্তির সেবা নিয়ে লেনদেন করবে, গ্রামাঞ্চলে এমন লোকসংখ্যাও বেশি নয়। ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং চমৎকার মাধ্যম। আমি এজেন্টদের পক্ষে। তবে এটিও দেখতে হবে, এজেন্টরা যাতে লাভবান হতে পারে। ইসলামী ব্যাংক এমন স্থানেই আউটলেট দিচ্ছে, যেখানে একজন এজেন্টের লাভবান হওয়া খুব সহজ। ক্ষুদ্র আমানতকারীরা যে কোনো ব্যাংকের বড় শক্তি। ইসলামী ব্যাংক এদিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক। কারণ দেড় কোটি ক্ষুদ্র আমানতকারীর সঞ্চয়ই হলো আমাদের ১ লাখ কোটি টাকার আমানত।
ব্যাংকিং কার্যক্রমে প্রযুক্তি খাতের গুরুত্ব সম্পর্কে মো. মাহবুব-উল আলম এর বক্তব্য হচ্ছে, শুরু থেকেই ইসলামী ব্যাংক প্রযুক্তি খাতের খরচকে ব্যয় হিসেবে না ভেবে, বিনিয়োগ হিসেবে ভেবেছে। ফলে এ ব্যাংকটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আমাদের চেয়ে দু-একটি ব্যাংক প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকতে পারে। তবে যে দুর্বলতাগুলো ছিল, তা-ও কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা ও উদ্যোগ আমাদের রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমরা ডিজিটাল মেলার আয়োজন করেছিলাম। তার পরও করোনা মহামারী আমাদের চোখ আরো বেশি করে খুলে দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য আমাদের ২০০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে। এ টাকা দিয়ে আমরা বিপুল পরিমাণে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কিনতে চাই।