শিরোনাম

South east bank ad

দারুস সালাম ও চকবাজার হতে সংঘবদ্ধ চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

 প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীর দারুস সালাম ও চকবাজার এলাকা হতে বিভিন্ন প্লাষ্টিক বোতলের কাটিং মালামাল চুরির সংঘবদ্ধ চোর চক্রের ০৪ সদস্য’কে গ্রেফতার; চোরাইকৃত ৭৫০ কেজি প্লাষ্টিক বোতলের কাটিং মালামাল উদ্ধার।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‌্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।

গত ১২/০২/২০২২ ইং তারিখ অভিযোগকারী নুর মোহাম্মদ ভূইয়া (৪৪) র‌্যাব-৪ বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন যে, গত ০১/০২/২০২২ ইং তারিখ রাত অনুমান ২০.০০ ঘটিকার সময় জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানাধীন বাউসি বাজার এলাকা হতে ভাড়াকৃত একটি কাভার্ড ভ্যানে ৮,৩৫০ কেজি ওজনের প্লাষ্টিকের বোতলের কাটিং মালামাল লোড দিয়ে ঢাকার দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানাধীন এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। গাড়ীটি লোড করে কেরানীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেওয়ার পর গত ০৩/০২/২০২২ ইং তারিখ রাত অনুমান ২৩.০০ ঘটিকা পর্যন্ত উক্ত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। পরবর্তীতে ০৪/০২/২০২২ ইং তারিখ সকালে উক্ত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভারের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান এবং তিনি ঢাকা জেলার দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানাধীন যে স্থানে মালামাল পৌছানোর কথা ছিল সেই স্থানে উক্ত মালামালগুলো পৌছায় নাই।

অভিযোগকারীর উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে র‌্যাব-৪ এর বিশেষ আভিযানিক দল ইং ১৫/০২/২০২২ তারিখ সকাল ১০.০০ ঘটিকা ও রাত ১৯.৩০ ঘটিকার সময় ডিএমপি ঢাকার দারুস সালাম ও চকবাজার থানাধীন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চোরাইকৃত মালামালের মধ্যে ৭৫০ কেজি প্লাষ্টিকের বোতলের কাটিং মালামাল উদ্ধারপূর্বক মালামাল চুরির সংঘবদ্ধ চোর চক্রের নিম্নোক্ত ০৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার কৃতরা হলো, মোঃ ফয়সাল হোসেন (৩২), জেলা- মাদারীপুর, মোঃ রিপন (৪৩), জেলা- মুন্সিগঞ্জ, মোঃ সোহেল শিকদার (২৭), জেলা- বরগুনা ও মোঃ আব্দুল খালেক (৪৮), জেলা- মুন্সিগঞ্জ।

প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা উক্ত চুরির সাথে সম্পৃক্ত থাকার স্বীকার করেন। ধৃত আসামীরা আরো জানায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রের সদস্য। আসামীরা দীর্ঘদিন যাবত পরষ্পর যোগসাজসে উক্ত চুরি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো।

অপরাধের কৌশলঃ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মোঃ ফয়সাল হোসেন (৩২) পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার। সে গত ১৩/১৪ বছর যাবত ঢাকা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করতো। মালামাল আনা নেয়ার একপর্যায়ে তার সাথে মোঃ রিপন (৪৩) এর পরিচয় হয় এবং রিপন এর মাধ্যমে অন্যান্য গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির ফয়সালের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তারা পরষ্পর যোগসাজসে উক্ত চুরির পরিকল্পনা করে। মূলত উক্ত চুরির কাজটি ধৃত ব্যক্তিরা ০৪ টি ধাপে সম্পন্ন করে থাকে।

প্রথম ধাপঃ মূলত এই ধাপে কাজ করে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মোঃ ফয়সাল হোসেন (৩২)। সে প্রথমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে উক্ত প্লাষ্টিক বোতল কাটিং মালামাল এক স্থান হতে অন্য স্থানে আনা নেওয়ার জন্য তার পরিবহনটি ব্যবহার করে। মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে আনার সময় সে কৌশলে উক্ত মালামালের মালিককে তার ভুয়া নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর প্রদান করে যাতে তাকে সহজে কেউ সনাক্ত করতে না পারে। পরবর্তীতে আসামী ফয়সাল বিভিন্ন সুযোগের অপেক্ষায় থাকে এবং সুযোগ মতো মোঃ রিপন (৪৩) এর সাথে যোগাযোগ করে মালামালগুলো যেখানে পৌছে দেওয়ার কথা সেখানে না পৌছে আসামী ফয়সাল তার পরিবহনে লোড করা অবস্থায় সুবিধা জনক স্থানে নিজের হেফাজতে রেখে দেয়।

দ্বিতীয় ধাপঃ এই ধাপে কাজ করে মোঃ রিপন (৪৩) এবং মোঃ সোহেল শিকদার (২৭) তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকে। ঢাকা মহানগরীর দারুস সালাম থানাধীন জহুরাবাদ এলাকায় মোঃ রিপন এর একটি ভাঙ্গারীর দোকান আছে। সে উক্ত মালামাল চুরির পরে ফয়সাল এর সাথে যোগাযোগ করে তার নিকট হতে উক্ত চোরাইকৃত মালামালগুলো সুবিধাজনক সময়ে নিয়ে নেয় এবং তার উক্ত ভাঙ্গারীর দোকানে কৌশলে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে সে ধৃত মোঃ সোহেল শিকদার (২৭) এর সাথে যোগাযোগ করে উক্ত মালামালগুলো উচ্চমূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে। এরই প্রেক্ষিতে আব্দুল খালেকের সাথে যোগাযোগ করে তার মাধ্যমে উক্ত মালামালগুলো বিভিন্ন পার্টির বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে।

তৃতীয় ধাপঃ এই ধাপে কাজ করে মোঃ আব্দুল খালেক। সে মোঃ রিপন ও মোঃ সোহেল শিকদারের নিকট হতে উক্ত মালামালগুলো সুবিধাজনক সময়ে সংগ্রহ করে থাকে। পরবর্তীতে সে উক্ত চোরাইকৃত মালামালগুলো চকবাজার থানাধীন এলাকায় বিভিন্ন বড় বড় পার্টির নিকট প্রচুর অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করে থাকে।

চতুর্থ ধাপঃ উক্ত ধাপে মালামালগুলো বিক্রয়ের পর প্রাপ্ত অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। এতে কাজের ধরন বুঝে অর্থ ভাগাভাগি করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি যে যার অবস্থানে থেকে পুনরায় উক্ত চোরাই কাজের পরিকল্পনা করতে থাকে এবং সময় সুযোগ বুঝে পুনরায় তারা উক্ত চুরির কার্যক্রম পরিচালনা করে একই ভাবে তা বিভিন্ন বড় পার্টির নিকট বিক্রয় করে দেয়।

গ্রেফতার প্রক্রিয়াঃ উক্ত চোরাই চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গত ১২/০২/২০২২ ইং তারিখ হতে আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ইং ১৪/০২/২০২২ তারিখ সন্ধ্যা ১৮.৩০ ঘটিকার সময় ঢাকা মহানগরীর দারুস সালাম থানাধীন হরিরামপুর এলাকা হতে মোঃ ফয়সাল হোসেন কে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে উক্ত চুরির বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে। এছাড়াও মোঃ ফয়সাল হোসেন এর নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ১৫/০২/২০২২ তারিখ বেলা ১০.০০ ঘটিকার সময় দারুস সালাম থানাধীন জহুরাবাদ এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে মোঃ রিপন এবং মোঃ সোহেল শিকদার দ্বয়কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আসামীদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একই তারিখ রাত ২০.৩০ ঘটিকার সময় চকবাজার থানাধীন ইসলামবাগ এলাকা হতে মোঃ আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে তার উক্ত মালামাল চুরির বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে এবং তারা আরো জানায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রের সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবত উল্লেখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মালামাল চুরি করে তা বিভিন্ন বড় পার্টির নিকট বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করে উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং এই ধরনের সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাবের জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: