শিয়ালের কামড়ে ২০ জন আহত
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে শিয়ালের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায়ই শিয়ালের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছেন তাদের। শিয়ালের কামড়ে এ পর্যন্ত ১৫-২০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। শিয়ালের আক্রমনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বর্তমানে গ্রামবাসিরা লাঠি হাতে পাহারা বসিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ফুলকোট, রামপুর, রাধানগরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে হঠাৎ করে শিয়ালের উপদ্রুপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন গ্রামে শিয়ালের কামড়ে আহত হচ্ছেন অনেকে। গত শনিবার থেকে গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত নারীসহ অন্তত ১৫-২০ জন মানুষ শিয়ালের কামড়ের শিকার হয়েছেন। রাতের পাশাপাশি দিনের বেলাতেও শিয়ালের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে তাদের।
মঙ্গলবার রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলকোট মোবার মার্কেট এলাকায় গ্রামের ১০-১২ জন মানুষ লাঠি হাতে পাহারা বসিয়েছেন। অনেকে বাড়ি থেকে লাঠি হাতে নিয়ে বাজারে আসছেন। মানুষ দেখলেই ঝোঁপঝাড়ে লুকিয়ে থাকা শিয়ালগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়ে দিচ্ছে। শিয়ালের আক্রমণের ভয়ে এলাকার মানুষের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে রামপুর গ্রামের নাজমা বেগম নামে এক নারী বাড়ির দরজার সামনে বের হওয়া মাত্র এক শিয়াল ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড় দিয়েছে। এর কিছু পরে একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন নামে এক কৃষক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শিয়ালের আক্রমণের শিকার হন। এছাড়া সোমবার রাতে ফুলকোট গ্রামের চা স্টলে বসে চা-পানের সময় পাশের ঝোঁপ থেকে কয়েকটি শিয়াল ঝাঁপিয়ে পড়ে তিনজনকে কামড়ে দেয়। একই ভোরে ফুলকোর্ট দক্ষিণপাড়া গ্রামের মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে আব্দুর রহমান, সাইদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান নামে তিন মুসল্লি শিয়ালের আক্রমণের শিকার হন। শিয়ালের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা বাধ্য হয়ে লাঠি হাতে চলাফেরা করছেন। ৩-৪টি শিয়ালকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন বলেও জানান তারা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম নয়ন জানান, শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে ২০ জন আহত হয়েছেন। শিয়ালের হাত থেকে রক্ষা পেতে গ্রামবাসীরা লাঠি হাতে নিয়ে চলাফেরা করছেন। হঠাৎ করে শিয়ালের আক্রমণ গ্রামবাসিকে ভাবিয়ে তুলেছে। যেভাবে ঝোঁপঝাড় বিলিন হয়ে যাচ্ছে তাতে করে খাদ্য, বাসস্থানের অভাবে মানুষের উপর আক্রমণ শুরু করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি শিয়ালের কামড়ে জলাতংক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকায় আতংকিত হয়ে পড়েছে গ্রামবাসি। এমতাবস্থায় গ্রামবাসিদের শিয়ালের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে সু-ব্যবস্থা এবং আহত ব্যক্তিদের সু-চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোতারব হোসেন জানান, মানুষের উপর শিয়ালের আক্রমণের খবর পেয়েছেন। খাদ্য, বাসস্থান সংকট ও জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে শিয়াল মানুষের উপর আক্রমণ করতে পারে। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত শিয়ালের কামড়ে মানুষও জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই কামড় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত স্থানটি জীবাণুনাশক বা সাবান পানি দিয়ে দিয়ে কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট পরিষ্কার করতে হবে। এরপর জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন দিতে হবে।