ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা বন্ধ ঘোষণা
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা ও প্রদর্শন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেন তাহলে এক বছরের কারাদ- অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বন বিভাগের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নিষেজ্ঞাধার কথা জানানো হয়। আগামী (৯ ফেব্রুয়ারি) বুধবার পোড়াদহ মেলা হবার কথা রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বগুড়ার বিখ্যাত পোড়াদহ মেলায় প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ বাঘাইড় মাছ ক্রয় বিক্রয় হয়। যা বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ বাঘাইড় মাছ একটি মহাবিপন্ন বন্যপ্রাণি। এজন্য আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পোড়াদহ মেলাতে মহাবিপন্ন বন্যপ্রাণি বাঘাইড় মাছ ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য বগুড়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মৎস্য কর্মকর্তা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, র্যাব, ইউএনও, ওসি, মেলা কমিটিসহ ১৬ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জেলা সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত। প্রায় চারশ বছর আগের ঘটনা। মেলাস্থলে ছিলো একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে।
প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গ-ি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয় এই মেলা। মেলাটি একদিনের।
তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন। মেলায় হরেকরকম মাছের সঙ্গে দৈত্যাকার বাঘাইড় ওঠে। মেলায় প্রতিবছরই দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইড়ও পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রওনক জাহান বলেন, চিঠি পেয়েছি। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার আনোয়ারুল কবীর আহম্মেদ বলেন, করোনার বিধি নিষেধের কারণে সম্ভবত এবার মেলা হচ্ছে না। কারণ এখন পর্যন্ত মেলার করার অনুমতি পায়নি কমিটি। তারপরও যদি মেলা হয় তাহলে বাঘাইড় মাছ বিক্রি বন্ধে মাইকিং করা হবে। ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে সচেতনা তৈরির জন্য আলোচনা করা হবে।