রুপালীর স্বপ্ন পুরণে বাধা দারিদ্রতা
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
রুপালী খাতুন। জন্মের পর থেকেই জীবনের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করে চলেছে। তবুও লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি। পিছু হটেনি লড়াই থেকে। বড় হওয়ার স্বপ্নকে ঘিরেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। নিজের চেষ্টায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার ফলাফলে খুশি হয়েছে পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা।
তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে তার। সামনের পুরোটা পথ তার অনিশ্চিত। দারিদ্র্যতার কারণে আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার খরচের চিন্তায় বিধবা মা ও তার চোখমুখে এখন হতাশার ছাপ।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ধেরুয়াহাটি গ্রামের মৃত নুর বক্স শেখের মেয়ে রুপালী খাতুন। ১০ বছর আগে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে বাবা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রুপালী ছোট। বড় বোন ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করে। বড় বোনের সামান্য আয় দিয়ে রুপালীর লেখাপড়ার খরচসহ কোনমতে চলে তাদের সংসার। অভাবের কারণে তার পড়ালেখা প্রায় বন্ধের উপক্রম। সহায় সম্বল বলতে বাড়ির ভিটাটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই।
রুপালী জানায়, ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বিসিএস ক্যাডার হতে চাই। কিন্তু জীবনের শুরুতেই বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। উচ্চস্বপ্ন থাকলেও হয়তো অর্থাভাবে আমাকে আটকে যেতে হবে। তারপরও সব বাঁধা অতিক্রম করে এইচএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় রুপালী। ৮ জানুয়ারি শুরু হওয়া এইচএসসি ভর্তিতে রুপালী বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি শাহ সুলকান কেেলজে আবেদন করেছেন। তার ইচ্ছা বগুড়াতেই লেখাপড়া করার।
রুপালীর মা মাজেদা বেগম বলেন, মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। সে আরও পড়তে চায়। তাই এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খরচ নিয়ে। স্বল্প আয়ে চলে তিন সদস্যের পরিবার। মেয়ের লেখাপড়া করাতে গিয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে। একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করলেও কখন হাত পাতেননি অন্যের কাছে। অবশেষে মেয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন মাজেদা বেগম।
ধুনট উপজেলার এমপিএসটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, রুপালী ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান থেকে যতটা সম্ভব আমরা সহযোগিতা করেছি। তবে, সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে তার স্বপ্ন পূরণ আরও সহজ হবে।