শিরোনাম

South east bank ad

নির্বাচনী সহিংসতার তিন সদস্যের কমিটি গঠন ৩০০ অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা

 প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরীকে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় সব আসামিকে অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে।

গতকাল (০৬ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্ত্তী সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বুধবার নির্বাচনী সহিংসতার কারণে গাবতলীর বালিয়াদীঘিতে আইন শৃংখলা পরিস্থিরি অবনতি ঘটে। তদন্ত কমিটি এই কমিটি আইন শৃংখলা পরিস্থিরি অবনতি যাচাই-বাছাই করবেন। একই সঙ্গে কমিটি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপ, যৌক্তিকতা, ক্ষয়ক্ষতি, কিংবা পরবর্তী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা জানাবে।

থানায় দায়ের করা মামলার বাদি হয়েছেন গাবতলীর বালিয়াদিঘীর কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাকির হোসেন। জাকির গাবতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

মামলার বিষয়ে গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি।

পুলিশ সপার সুদীপ আরও বলেন, বালিয়াদীঘিতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। নির্বাচনের দিনেও গুরুত্ব বিচার করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল।

এদিকে বিজিবির গুলিতে নিহত চারজনের লাশ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ পাহারায় কালাইহাটা গ্রামে নেওয়া হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন, এক প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট কুলসুম বেগম (৫০), দিনমজুর খোরশেদ আলী (৬৮), আবদুর রশিদ (৬০) ও রিকশাচালক আলমগীর হোসেন (৪০)। লাশ পৌছানোর পর হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কালাইহাটা হাইস্কুল মাঠে নামাজো জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় অংশ নেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু, সাংগঠনিক সম্পাদক আছাদুর রহমান দুলু, দপ্তর সম্পাদক আল রাজী জুয়েল, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মাসরাফি হিরো, গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম ভূলনসহ হাজারো মুসল্লীগণ। পরে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হকের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে পুলিশি পাহারায় তাঁদের লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় আরও চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন। তাঁরা হলেন আবদুল (৪০), রাকিব (১৬), মেহেদী হাসান (১৩) ও ছহির উদ্দিন (৬০)। তাঁদের মধ্যে মেহেদী কালাইহাটা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান, গ্রামবাসী শহিদুল ইসলাম, নৌকার এজেন্ট আল-আমিন, নিহত কুলসুমের স্বামী খোকন মন্ডলসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমদের গুলি করার নির্দেশ দেয়ার ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই চার নিরীহ গ্রামবাসীর প্রাণ গেছে। এ ঘটনায় তারা ম্যাজিস্ট্রেটের শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে ওই ইউনিয়নের বিজয়ী চেয়ারম্যান ইউনুস আলী ফকির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে নিহতের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই, সবাই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। দিনভর যেখানে আনন্দ-উল্লাস ছিল, বিকেলেই তা মিলিয়ে গেল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর হোসেন পেশায় রিকশাচালক। তিনি বগুড়া শহরে রিকশাচালান। আলমগীর হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা জানান, আমার একমাত্র মেয়ে আদুরীকে নিয়ে আমরা বগুড়া জেলা সদরের কৈপাড়ার বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার স্বামী শহরে রিকশাচালায়। ভোট দিতে আমার স্বামীসহ আমরা গ্রামের বাড়ি কালাইহাটাতে এসেছিলাম। আমার স্বামী ভোটের ফলাফল জানতে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিল। গুলির শব্দ শোনার পর পরই আমরা আমার স্বামীর খবর নিতে গিয়ে পথিমধ্যে তার মাথায় গুলি লাগার খবর পাই।

আলমগীরের বড়ভাই বাবলু মিয়া (৫৮) বলেন, আমার ভাই মারা গেছে এখন আমার ভাবি আর ভাতিজির কি হবে। আমরা হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।
নিহত আব্দুর রশিদ প্রামানিকের স্ত্রী বুলবুলি বেগম (৫০) জানান, তার স্বামী একজন বর্গাচাষী। নিজের ভিটেমাটি ছাড়া তাদের কোন জায়গা জমি নেই। পরের জমি চাষ করে তাদের সংসার চলে। তার ২ ছেলে ১ মেয়ে। ছোট ছেলে কালাইহাটা দাখিল মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে বাবুল মিয়া ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি জানান, আমার ছেলে বাবুলকে পুলিশ লাঠি দিয়ে মেরে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। সে এখন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) ভর্তি আছে। আমার স্বামী বাজার করতে গিয়েছিল। ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।

নিহত খোরশেদ আকন্দের ছেলে এরশাদ আকন্দ (৩০) জানায়, আমার বাবা শাক বিক্রি করার জন্য বাজারে যায়। শাক বিক্রি করে বাড়িতে ফেরার সময় বাবা গুলিবিদ্ধ হয়। এখন পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত) আমরা বাবার লাশ পাইনি। আমার বাবার হত্যাকারীর ফাঁসি চাই আমরা।
নিহত কুলসুম বেগমের স্বামী খোকন মন্ডল জানান, আমার স্ত্রী কালাইহাটা স্কুল কেন্দ্রের এজেন্ট ছিল। কেন্দ্রের ভেতরেই সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশ জানালা দিয়ে অতর্কিতভাবে গুলি করেছে।

এদিকে আহত কালাইহাটা উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান জানায়, ভোটের খবর নিতে গিয়ে ধাওয়া পাল্টার সময় সে পরে যায় এবং তার শরীরে গুলি লাগে। পরে সে জানতে পারে এগুলো রাবার বুলেট।

মেহেদী হাসানের মা শিপন মন্ডলের স্ত্রী সমাপ্তি আকতার বলেন, আমার ছেলে আহত হয়ে বিছানা হতে উঠতে পারছে না। আমি আমার ছেলে নির্যাতনের বিচার চাই।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: