গাবতলীর নিহতরা রিকশাচালক, বর্গাচাষী, শাক বিক্রেতা ও গৃহবধূ
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বিজিবির গুলিতে নারীসহ ৪জন নিহতের ঘটনায় শোকের মাতম চলছে বগুড়ায় গাবতলী উপজেলার কালাইহাটা গ্রামে। কারো মুখে কোনো কথা নেই, সবাই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। দিনভর যেখানে আনন্দ-উল্লাস ছিল, বিকেলেই তা মিলিয়ে গেল।
এলাকাবাসী অনেকেই দাবি, আনন্দের রাশ টেনে ধরেন ইউএনও আসিফ আহমেদ। তার নিদের্শেই দফায় দফায় গুলি ছোঁড়ে বিজিবি-পুলিশ। আর তাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন কালাইহাটার ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রশীদ, খোরশেদ হোসেন, ৪০ বছর বয়সী কুলসুম আক্তার ও আলমগীর হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর হোসেন পেশায় রিকশাচালক। তিনি শহরে রিকশাচালান।
আলমগীর হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা জানান, “আমার একমাত্র মেয়ে আদুরীকে নিয়ে আমরা বগুড়া জেলা সদরের কৈপাড়ার বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার স্বামী শহরে রিকশাচালায়। ভোট দিতে আমার স্বামীসহ আমরা গ্রামের বাড়ি কালাইহাটাতে এসেছিলাম। আমার স্বামী ভোটের ফলাফল জানতে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিল। গুলির শব্দ শোনার পর পরই আমরা আমার স্বামীর খবর নিতে গিয়ে পথিমধ্যে তার মাথায় গুলি লাগার খবর পাই।”
আলমগীরের বড়ভাই বাবলু মিয়া (৫৮) বলেন, “আমার ভাই মারা গেছে এখন আমার ভাবি আর ভাতিজির কি হবে। আমরা হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।
নিহত আব্দুর রশিদ প্রামানিকের স্ত্রী বুলবুলি বেগম (৫০) জানান, তার স্বামী একজন বর্গাচাষী। নিজের ভিটেমাটি ছাড়া তাদের কোন জায়গা জমি নেই। পরের জমি চাষ করে তাদের সংসার চলে। তার ২ ছেলে ১ মেয়ে। ছোট ছেলে কালাইহাটা দাখিল মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে বাবুল মিয়া ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি জানান, আমার ছেলে বাবুলকে পুলিশ লাঠি দিয়ে মেরে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। সে এখন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) ভর্তি আছে। আমার স্বামী বাজার করতে গিয়েছিল। ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।”
নিহত খোরশেদ আকন্দের ছেলে এরশাদ আকন্দ (৩০) জানায়, “আমার বাবা শাক বিক্রি করার জন্য বাজারে যায়। শাক বিক্রি করে বাড়িতে ফেরার সময় বাবা গুলিবিদ্ধ হয়। এখন পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত) আমরা বাবার লাশ পাইনি। আমার বাবার হত্যাকারীর ফাঁসি চাই আমরা।”
নিহত কুলসুম বেগমের স্বামী খোকন মন্ডল জানান, “আমার স্ত্রী কালাইহাটা স্কুল কেন্দ্রের এজেন্ট ছিল। কেন্দ্রের ভেতরেই সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশ জানালা দিয়ে অতর্কিতভাবে গুলি করেছে। ”
এদিকে আহত কালাইহাটা উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান জানায়, “ভোটের খবর নিতে গিয়ে ধাওয়া পাল্টার সময় সে পরে যায় এবং তার শরীরে গুলি লাগে। পরে সে জানতে পারে এগুলো রাবার বুলেট।”
মেহেদী হাসানের মা শিপন মন্ডলের স্ত্রী সমাপ্তি আকতার বলেন, “আমার ছেলে আহত হয়ে বিছানা হতে উঠতে পারছে না। আমি আমার ছেলে নির্যাতনের বিচার চাই।”