প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চেয়েছিলেন শুভ
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চেয়েছিলেন বগুড়ার কাহালু উপজেলার রাইসুল ইসলাম শুভ। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পুরণ হলো না। তার আগেই গত সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়াতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় শুভ।
রাইসুল ইসলাম শুভ বগুড়ার কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়নে ভালশুন গ্রামের মৃত শামসুর রহমান মাস্টার ও দিলরুবা বেগমের ছেলে।
শুভ গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গত সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) কলেজ বাড়ি ভ্যানে করে মেঝে ফেরার পথে গোপালগঞ্জ ঘোনাপাড়ার অবস্থিত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে চলন্ত ভ্যানের চাকা খুলে যাওয়ায় পেছন থেকে অনিয়ন্ত্রিত দোলা পরিবহনের একটা বাস চাপা দিলে শুভ পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ঘটনার পর তার মা দিলরুবা বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না। শুধু কেঁদেই চলেছেন।
নিহতের পরিবারিক সুত্রে জানা যায়, শুভরা তিন ভাই। সকলের বড় ছিল শুভ। নিজ গ্রামের ভালশুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয় থেকে ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ন হন। সেই সঙ্গে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান।
২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে বগুড়া সরকারি আইএইচটিতে (ফার্মেসী) ডিপ্লোমা করেছেন। এরপর বগুড়া শেরপুর সালফা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়। এরপর গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষা বর্ষে ভর্তি হয়।
বর্তমানে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। তার মেঝো ভাই রেজওিয়ানুল হক শান্ত। শুভর ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চেয়েছিলেন।
তার বাবা ২০১৩ সালে মারা যায়। কোন জমিজমা নেই। বসতবাড়ি বলতে ৭ শতকের জায়গা। বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আর তার বাবার পেনশনের ৩০০০/ টাকায় বর্তমানে তাদের সংসার চলে।
টিউশনি করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির টাকায় পড়াশোনা চলে শুভ ও তার ভাইদের। তার মৃত্যু তে অত্র এলাকায় শোকের ছায়া পড়েছে। তার বাল্যবন্ধু নোমান বলেন, সে খুব মেধাবী ভদ্র, শান্ত, প্রকৃতির ছিল।