শিরোনাম

South east bank ad

পারপেচুয়াল বন্ডের অর্থ মূলধনে যোগ করতে পারবে না ব্যাংক

 প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং মান অনুযায়ী পারপেচুয়াল বন্ডকে মূলধন হিসাবে দেখানো যায় না। কিন্তু বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় মূলধন হিসাবে দেখানোর সুযোগ দিয়েছে। টায়ার-৩ বাস্তবায়নে মূলধন বৃদ্ধির অংশ হিসাবে ব্যাংকগুলো পারপেচুয়াল বন্ড ছেড়েছে। সেই বন্ডের অর্থকে মূলধন হিসাবে দেখাতে চায়।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক নিয়ম মানতে এ সুবিধা দেয়া সম্ভব নয় বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

গতকাল বুধবার (২২ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ৪০০ কোটি টাকার পার্পেচুয়াল বন্ডকে মূলধন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে অনুমোদন চেয়েছে যমুনা ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বরে যমুনা ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকার পার্পেচুয়াল বন্ড অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এক ঘোষণায় যমুনা ব্যাংক জানিয়েছে, পার্পেচুয়াল বন্ডটি হচ্ছে আনসিকিউরড, কন্টিজেন্ট, কনভার্টিবল ও ফ্লোটিং রেট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। বন্ড অনুমোদন দেয়ার সময়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএসইসির সব নিয়ম-নীতি ও টু-সিসি গাইডলাইন পরিপালন করতে হবে যমুনা ব্যাংককে।

জানা গেছে, এ বন্ডের নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই এই যুক্তিতে পার্পেচুয়াল বন্ডকে মূলধন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় যমুনা ব্যাংক। কারণ বিএসইসির নীতিমালা উল্লেখ করা হয়েছে, পার্পেচুয়াল বন্ডের কুপন রেটের কোনো অর্থের পেমেন্ট বা পরিশোধ বন্ধ করতে পারবে না ব্যাংক। কিন্তু আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতির ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, মূলধনের বিপরীতে মুনাফা বা লভ্যাংশ না দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে ব্যাংকের। অর্থাৎ বছর শেষে মূলধনের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

কিন্তু বিএসইসির নীতিমালা অনুযায়ী, লভ্যাংশ বা সুদ দিতে হবে পার্পেচুয়াল বন্ডের বিপরীতে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

জানা গেছে, বন্ড বা আমানত হচ্ছে ব্যাংকের দায়। এর বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। ব্যাংকের জন্য এটি বাধ্যতামূলক। কিন্তু মূলধনের বিপরীতে বছর শেষে সুদ দিতে হয় না। এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করে। সেটি নগদ বা বোনাস দুভাবেই হতে পারে।

আবার মুনাফা হলেও বছর শেষে লভ্যাংশ দেয়া বা না দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের। ব্যাংক চাইলেও কোনো বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে শুধু বছর শেষে অনুষ্ঠিত ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়।

এখানেই আপত্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যেকোনো ব্যাংকই পার্পেচুয়াল বন্ড ছাড়তে পারে। যেহেতু এর বিপরীতে প্রতিবছরই দায় হিসাবে কুপন রেটে অর্থ পরিশোধ করতে হবে, তাই এটি কোনো ব্যাংকের মূলধন হিসাবে দেখানোর সুযোগ নেই। এটি দেখানোর সুযোগ থাকলে ব্যাংকের আমানত হিসাবে রাখা ফিক্সড ডিপোজিট বা চলতি হিসাবের অর্থও মূলধন হিসাবে দেখাতে চাইবে ব্যাংকগুলো, যা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নিয়ম মানতে ব্যাংকগুলো এখন মূলধন বৃদ্ধি করছে। টিয়ার-৩ বাস্তবায়নে অধিকাংশ ব্যাংককেই মূলধন বাড়াতে হচ্ছে। এজন্য বিনিয়োগকারীদের বোনাস শেয়ারের দেয়ার পাশাপাশি বন্ডের দিকে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। এরই মধ্যে একাধিক ব্যাংক পার্পেচুয়াল বন্ড অনুমোদন নিয়েছে বিএসইসির কাছ থেকে।

ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকই বিদ্যমান নীতিমালায় পার্পেচুয়াল বন্ডকে মূলধন হিসাবে দেখাতে পারবে না। কারণ হিসাবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পার্পেচুয়াল বন্ডকে মূলধন হিসাবে দেখানো মানেই হচ্ছে তার আর্থিক কাঠামো দুর্বল; মূলধন নিয়েই ব্যাংক সমস্যায় রয়েছে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, লেনদেন ও রেটিংয়ে পিছিয়ে পড়বে দেশের ব্যাংক খাত।

এতে করে বিদেশি অনেক ব্যাংকই দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেন ও বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে, যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ওপর।

দেশের পুঁজিবাজারেও যমুনা ব্যাংক তালিকাভুক্ত। বর্তমানে ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন হচ্ছে এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭৪৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জন্য বিনিয়োগকারীদের ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ওই সময়ে ব্যাংকের মুনাফা হয়েছিল ২৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। গতকালও ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ টাকা ৯০ পয়সায়।

এসএমটি

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: